1 প্রধান পুরোহিতেরা খুব ভোরে বৃদ্ধ নেতাদের, ধর্ম-শিক্ষকদের ও মহাসভার সমস্ত লোকদের সংগে একটা পরামর্শ করলেন। তারপর তাঁরা যীশুকে বেঁধে নিয়ে গিয়ে তাঁকে রোমীয় প্রধান শাসনকর্তা পীলাতের হাতে দিলেন।
2 তখন পীলাত যীশুকে জিজ্ঞাসা করলেন, “তুমি কি যিহূদীদের রাজা?”যীশু উত্তর দিলেন, “আপনি ঠিক কথাই বলছেন।”
3 প্রধান পুরোহিতেরা যীশুর নামে অনেক দোষ দিলেন।
4 এতে পীলাত আবার যীশুকে জিজ্ঞাসা করলেন, “তুমি কি উত্তর দেবে না? দেখ, তারা তোমাকে কত দোষ দিচ্ছে।”
5 যীশু কিন্তু আর কোন উত্তরই দিলেন না। এতে পীলাত আশ্চর্য হলেন।
6 উদ্ধার-পর্বের সময়ে লোকেরা যে কয়েদীকে চাইত পীলাত তাকে ছেড়ে দিতেন।
7 সেই সময় বারাব্বা নামে একজন লোক জেলখানায় বন্দী ছিল। বিদ্রোহের সময় সে বিদ্রোহীদের সংগে থেকে খুন করেছিল।
8 লোকেরা পীলাতের কাছে এসে বলল, “আপনি সব সময় যা করে থাকেন এখন তা- ই করুন।”
9 পীলাত তাদের বললেন, “তোমরা কি চাও যে, আমি যিহূদীদের রাজাকে ছেড়ে দিই?”
10 প্রধান পুরোহিতেরা যে হিংসা করেই যীশুকে তাঁর হাতে দিয়েছেন পীলাত তা জানতেন।
11 কিন্তু প্রধান পুরোহিতেরা লোকদের উস্কিয়েছিলেন যেন তারা যীশুর বদলে বারাব্বাকে চেয়ে নেয়।
12 পীলাত আবার লোকদের জিজ্ঞাসা করলেন, “তাহলে তোমরা যাকে যিহূদীদের রাজা বল তাকে নিয়ে আমি কি করব?”
13 লোকেরা চেঁচিয়ে বলল, “ওকে ক্রুশে দিন।”
14 পীলাত বললেন, “কেন, সে কি দোষ করেছে?”কিন্তু লোকেরা আরও জোরে চেঁচিয়ে বলতে লাগল, “ওকে ক্রুশে দিন।”
15 তখন পীলাত লোকদের সন্তুষ্ট করবার জন্য বারাব্বাকে তাদের কাছে ছেড়ে দিলেন, আর যীশুকে ভীষণভাবে চাবুক মারবার হুকুম দিয়ে ক্রুশে দেবার জন্য দিলেন।
16 তারপর সৈন্যেরা যীশুকে নিয়ে প্রধান শাসনকর্তার বাড়ীর ভিতরে গেল। সেখানে তারা অন্য সব সৈন্যদের একত্র করল।
17 তারা যীশুকে বেগুনে কাপড় পরাল, আর কাঁটা-লতা দিয়ে একটা মুকুট গেঁথে তাঁর মাথায় পরিয়ে দিল।
18 তার পরে তারা যীশুকে বলতে লাগল, “যিহূদী-রাজ, জয় হোক!”
19 তারা একটা লাঠি দিয়ে যীশুর মাথায় বারবার মারতে লাগল এবং তাঁর গায়ে থুথু দিল, আর হাঁটু পেতে তাঁকে সম্মান দেখাবার ভান করল।
20 এইভাবে তাঁকে ঠাট্টা-তামাশা করবার পর তারা সেই বেগুনে কাপড় খুলে নিয়ে তাঁকে তাঁর নিজের কাপড় পরিয়ে দিল এবং ক্রুশে দেবার জন্য নিয়ে চলল।
21 সেই সময় শিমোন নামে কূরীণী শহরের একজন লোক গ্রামের দিক থেকে এসে সেই পথে যাচ্ছিলেন। ইনি ছিলেন আলেকসান্দর ও রূফের বাবা। সৈন্যেরা তাঁকে যীশুর ক্রুশটা বয়ে নিয়ে যেতে বাধ্য করল।
22 তারা যীশুকে গল্গথা, অর্থাৎ মাথার খুলির স্থান নামে একটা জায়গায় নিয়ে গেল।
23 পরে তারা যীশুকে গন্ধরস মিশানো সির্কা খেতে দিল, কিন্তু তিনি তা খেলেন না।
24 এর পরে তারা যীশুকে ক্রুশে দিল। সৈন্যেরা যীশুর কাপড়-চোপড় ভাগ করবার জন্য গুলিবাঁট করে দেখতে চাইল কার ভাগ্যে কি পড়ে।
25 সকাল ন’টার সময় তারা যীশুকে ক্রুশে দিয়েছিল।
26 যীশুর বিরুদ্ধে দোষ-নামাতে লেখা ছিল, “যিহূদীদের রাজা।”
27 তারা দু’জন ডাকাতকেও যীশুর সংগে ক্রুশে দিল, একজনকে ডান দিকে ও অন্যজনকে বাঁ দিকে।
28 তাতে পবিত্র শাস্ত্রের এই কথা পূর্ণ হল: “তাঁকে অন্যায়কারীদের সংগে গোণা হল।”
29 যারা সেই পথ দিয়ে যাচ্ছিল তারা মাথা নেড়ে যীশুকে ঠাট্টা করে বলল, “ওহে, তুমি না উপাসনা-ঘর ভেংগে আবার তিন দিনের মধ্যে তা তৈরী করতে পার!
30 এখন ক্রুশ থেকে নেমে এসে নিজেকে রক্ষা কর!”
31 প্রধান পুরোহিতেরা ও ধর্ম-শিক্ষকেরাও যীশুকে ঠাট্টা করবার উদ্দেশ্যে নিজেদের মধ্যে বলাবলি করতে লাগলেন, “ও অন্যদের রক্ষা করত, নিজেকে রক্ষা করতে পারে না।
32 ঐ যে মশীহ, ইস্রায়েলীয়দের রাজা! ক্রুশ থেকে ও নেমে আসুক যেন আমরা দেখে বিশ্বাস করতে পারি।”যীশুর সংগে যাদের ক্রুশে দেওয়া হয়েছিল তারাও তাঁকে টিট্কারি দিল।
33 পরে দুপুর বারোটা থেকে বেলা তিনটা পর্যন্ত সারা দেশ অন্ধকার হয়ে রইল।
34 বেলা তিনটার সময় যীশু জোরে চিৎকার করে বললেন, “এলোই, এলোই, লামা শবক্তানী,” অর্থাৎ “ঈশ্বর আমার, ঈশ্বর আমার, কেন তুমি আমাকে ত্যাগ করেছ?”
35 যারা কাছে দাঁড়িয়ে ছিল তাদের কয়েকজন এই কথা শুনে বলল, “শোন, শোন, ও এলিয়কে ডাকছে।”
36 তখন একজন লোক দৌড়ে গিয়ে একটা সপঞ্জ সির্কায় ভিজাল এবং একটা লাঠির মাথায় লাগিয়ে তা যীশুকে খেতে দিল।সে বলল, “থাক্, দেখি এলিয় ওকে নামিয়ে নিতে আসেন কি না।”
37 এর পরে যীশু জোরে চিৎকার করে প্রাণত্যাগ করলেন।
38 তখন উপাসনা-ঘরের পর্দাটা উপর থেকে নীচ পর্যন্ত চিরে দু’ভাগ হয়ে গেল।
39 যে সেনাপতি যীশুর সামনে দাঁড়িয়ে ছিল সে যীশুকে এইভাবে মারা যেতে দেখে বলল, “সত্যিই ইনি ঈশ্বরের পুত্র ছিলেন।”
40 কয়েকজন স্ত্রীলোক দূরে দাঁড়িয়ে এই সব দেখছিলেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন মগ্দলীনী মরিয়ম, দুই যাকোবের মধ্যে ছোট যাকোব ও যোষেফের মা মরিয়ম আর শালোমী।
41 যীশু যখন গালীলে ছিলেন তখন এই স্ত্রীলোকেরা তাঁর সংগে সব জায়গায় যেতেন এবং তাঁর সেবা করতেন। আরও অনেক স্ত্রীলোক, যাঁরা যীশুর সংগে সংগে যিরূশালেমে এসেছিলেন, তাঁরাও সেখানে ছিলেন।
42 সেই দিনটা ছিল আয়োজনের দিন, অর্থাৎ বিশ্রামবারের আগের দিন।
43 যখন সন্ধ্যা হয়ে আসল তখন অরিমাথিয়া গ্রামের যোষেফ সাহস করে পীলাতের কাছে গিয়ে যীশুর দেহটি চাইলেন। তিনি মহাসভার একজন নাম- করা সভ্য ছিলেন এবং তিনি নিজে ঈশ্বরের রাজ্যের জন্য অপেক্ষা করছিলেন।
44 পীলাত আশ্চর্য হলেন যে, যীশু এত তাড়াতাড়ি মারা গেছেন। সত্যি সত্যি যীশুর মৃত্যু হয়েছে কি না, তা সেনাপতিকে ডেকে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন।
45 যখন সেনাপতির কাছ থেকে তিনি জানতে পারলেন যে, সত্যিই তাঁর মৃত্যু হয়েছে তখন দেহটি যোষেফকে দিলেন।
46 যোষেফ গিয়ে কাপড় কিনে আনলেন এবং যীশুর মৃতদেহটি নামিয়ে সেই কাপড়ে জড়ালেন, আর পাহাড় কেটে তৈরী করা একটা কবরে সেই দেহটি রাখলেন। তারপর তিনি কবরের মুখে একটা পাথর গড়িয়ে দিলেন।
47 যীশুর মৃতদেহটি কোথায় রাখা হল তা মগ্দলীনী মরিয়ম ও যোষেফের মা মরিয়ম দেখলেন।