1 যীশু আবার গালীল সাগরের ধারে লোকদের শিক্ষা দিতে লাগলেন। তাঁর চারদিকে অনেক লোকের ভিড় হল; সেইজন্য তিনি সাগরের মধ্যে একটা নৌকায় উঠে বসলেন আর লোকেরা সাগরের ধারে দাঁড়িয়ে রইল।
2 তিনি গল্পের মধ্য দিয়ে অনেক বিষয় তাদের শিক্ষা দিতে লাগলেন। তার মধ্যে তিনি বললেন,
3 “শুনুন, একজন চাষী বীজ বুনতে গেল।
4 বীজ বুনবার সময় কতগুলো বীজ পথের পাশে পড়ল, আর পাখীরা এসে তা খেয়ে ফেলল।
5 আবার কতগুলো বীজ পাথুরে জমিতে পড়ল। সেখানে বেশী মাটি ছিল না। মাটি গভীর ছিল না বলে তাড়াতাড়ি চারা গজিয়ে উঠল।
6 সূর্য উঠলে পর সেগুলো পুড়ে গেল এবং শিকড় ভাল করে বসে নি বলে শুকিয়ে গেল।
7 আর কতগুলো বীজ কাঁটাবনের মধ্যে পড়ল। কাঁটাগাছ বেড়ে উঠে চারাগুলো চেপে রাখল, তাই ফল ধরল না।
8 কিন্তু আর কতগুলো বীজ ভাল জমিতে পড়ল এবং গাছ বের হয়ে বেড়ে উঠল ও ফল দিল; কোনটাতে ত্রিশ গুণ, কোনটাতে ষাট গুণ, আবার কোনটাতে একশোগুণ ফসল জন্মাল।”
9 শেষে যীশু বললেন, “যার শুনবার কান আছে, সে শুনুক।”
10 ভিড় কমে গেলে পর যীশুর চারপাশের লোকেরা আর তাঁর বারোজন শিষ্য সেই গল্পের বিষয় তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন।
11 যীশু তাঁদের বললেন, “ঈশ্বরের রাজ্যের গুপ্ত সত্য তোমাদেরই জানতে দেওয়া হয়েছে, কিন্তু অন্যদের কাছে গল্পের মধ্য দিয়ে সব কথা বলা হয়,
12 যেন পবিত্র শাস্ত্রের কথামত, ‘তারা তাকিয়েও দেখতে না পায় এবং শুনেও বুঝতে না পারে। তা না হলে তারা হয়তো ঈশ্বরের দিকে ফিরবে এবং ক্ষমা পাবে।’ ”
13 তারপর যীশু তাঁদের বললেন, “তোমরা কি এই গল্পটার মানে বুঝলে না? তাহলে কেমন করে অন্য গল্পগুলোর মানে বুঝবে?
14 চাষী যে বীজ বুনেছিল তা হল ঈশ্বরের বাক্য।
15 পথের পাশে পড়া বীজের মধ্য দিয়ে তাদের সম্বন্ধেই বলা হয়েছে যারা সেই বাক্য শোনে, কিন্তু শয়তান তখনই এসে তাদের অন্তরে যে বাক্য বোনা হয়েছিল তা নিয়ে যায়।
16 পাথুরে জমিতে পড়া বীজের মধ্য দিয়ে তাদের সম্বন্ধেই বলা হয়েছে যারা সেই বাক্য শুনে তখনই আনন্দের সংগে তা গ্রহণ করে,
17 কিন্তু তাদের মধ্যে শিকড় ভাল করে বসে না বলে কেবল অল্প দিনের জন্য তারা স্থির থাকে। পরে বাক্যের জন্য যখন কষ্ট এবং অত্যাচার আসে তখনই তারা পিছিয়ে যায়।
18 আবার কাঁটাবনের মধ্যে বোনা বীজের মধ্য দিয়ে তাদের সম্বন্ধেই বলা হয়েছে যারা সেই বাক্য শোনে,
19 কিন্তু সংসারের চিন্তা-ভাবনা, ধন-সম্পত্তির মায়া এবং অন্যান্য জিনিসের লোভ এসে সেই বাক্যকে চেপে রাখে;
20 সেইজন্য তাতে কোন ফল হয় না। আর ভাল জমিতে বোনা বীজের মধ্য দিয়ে তাদের সম্বন্ধে বলা হয়েছে যারা সেই বাক্য শুনে তা গ্রহণ করে এবং ফল দেয়। কেউ দেয় ত্রিশগুণ, কেউ দেয় ষাট গুণ আবার কেউ দেয় একশো গুণ।”
21 যীশু আরও বললেন, “কেউ কি বাতি নিয়ে ঝুড়ি বা খাটের নীচে রাখে? সে কি তা বাতিদানের উপর রাখে না?
22 কোন জিনিস যদি লুকানো থাকে তবে তা প্রকাশিত হবার জন্যই লুকানো থাকে; আবার কোন জিনিস যদি ঢাকা থাকে তবে তা খুলবার জন্যই ঢাকা থাকে।
23 যদি কারও শুনবার কান থাকে সে শুনুক।”
24 এর পরে যীশু বললেন, “তোমরা যা শুনছ সেই বিষয়ে মনোযোগ দাও। তোমরা যেভাবে মেপে দাও তোমাদের জন্য সেইভাবে মাপা হবে; এমন কি, বেশী করেই মাপা হবে।
25 যার আছে তাকে আরও দেওয়া হবে, কিন্তু যার নেই তার যা আছে তা-ও তার কাছ থেকে নিয়ে নেওয়া হবে।”
26 যীশু আরও বললেন, “ঈশ্বরের রাজ্য এই রকম: একজন লোক জমিতে বীজ ছড়াল।
27 পরে সে রাতে ঘুমিয়ে ও দিনে জেগে থেকে সময় কাটাল। এর মধ্যে সেই বীজ থেকে চারা গজিয়ে বড় হল, কিন্তু কিভাবে হল তা সে জানল না।
28 জমি নিজে নিজেই ফল জন্মাল-প্রথমে চারা, পরে শীষ এবং শীষের মাথায় পরিপূর্ণ শস্যের দানা।
29 দানা পাকলে পর সে কাস্তে লাগাল, কারণ ফসল কাটবার সময় হয়েছে।”
30 তারপর যীশু বললেন, “কিসের সংগে আমরা ঈশ্বরের রাজ্যের তুলনা করব? কোন্ দৃষ্টান্তের মধ্য দিয়ে তা বুঝাব?
31 সেই রাজ্য একটা সর্ষে- দানার মত। জমিতে বুনবার সময় দেখা যায় যে, ওটা সব বীজের মধ্যে সবচেয়ে ছোট।
32 কিন্তু লাগাবার পর যখন গাছ বেড়ে ওঠে তখন সমস্ত শাক-সব্জির মধ্যে ওটা সবচেয়ে বড় হয়, আর এমন বড় বড় ডাল বের হয় যে, পাখীরাও তার আড়ালে বাসা বাঁধে।”
33 এই রকম আরও অনেক গল্পের মধ্য দিয়ে যীশু ঈশ্বরের বাক্য লোকদের কাছে বলতেন। তারা যতটুকু বুঝতে পারত ততটুকুই তিনি তাদের কাছে বলতেন।
34 গল্প ছাড়া তিনি তাদের শিক্ষা দিতেন না, কিন্তু শিষ্যেরা যখন তাঁর সংগে একা থাকতেন তখন তিনি সব কিছু তাঁদের বুঝিয়ে দিতেন।
35 সেই দিন সন্ধ্যাবেলা যীশু তাঁর শিষ্যদের বললেন, “চল, আমরা সাগরের ওপারে যাই।”
36 তখন শিষ্যেরা লোকদের ছেড়ে যীশু যে নৌকায় ছিলেন সেই নৌকাতে করে তাঁকে নিয়ে চললেন। অবশ্য সেখানে আরও অন্য নৌকাও ছিল।
37 নৌকা যখন চলছিল তখন একটা ভীষণ ঝড় উঠল এবং ঢেউগুলো নৌকার উপর এমনভাবে আছড়ে পড়ল যে, নৌকা জলে ভরে উঠতে লাগল।
38 যীশু কিন্তু নৌকার পিছন দিকে একটা বালিশের উপর মাথা রেখে ঘুমাচ্ছিলেন। শিষ্যেরা তাঁকে জাগিয়ে বললেন, “গুরু, আমরা যে মারা পড়ছি সেদিকে কি আপনার খেয়াল নেই?”
39 যীশু উঠে বাতাসকে ধমক দিলেন এবং সাগরকে বললেন, “থাম, শান্ত হও।” তাতে বাতাস থেমে গেল ও সব কিছু খুব শান্ত হয়ে গেল।
40 তিনি শিষ্যদের বললেন, “তোমরা ভয় পাও কেন? এখনও কি তোমাদের বিশ্বাস হয় নি?”
41 এতে শিষ্যেরা ভীষণ ভয় পেলেন এবং নিজেদের মধ্যে বলাবলি করতে লাগলেন, “ইনি কে যে, বাতাস এবং সাগরও তাঁর কথা শোনে?”