1 উদ্ধার-পর্বের কিছু আগের ঘটনা। যীশু বুঝতে পেরেছিলেন তাঁর এই জগৎ ছেড়ে পিতার কাছে যাবার সময় উপস্থিত হয়েছে। এই জগতে যাঁরা তাঁর নিজের লোক ছিলেন তাঁদের তিনি ভালবাসতেন এবং শেষ পর্যন্তই ভালবেসেছিলেন।
2 তখন খাবার সময়। এর আগেই শয়তান শিমোনের ছেলে যিহূদা ইষ্কারিয়োতের মনে যীশুকে শত্রুদের হাতে ধরিয়ে দেবার ইচ্ছা জাগিয়ে দিয়েছিল।
3 যীশু জানতেন, পিতা ঈশ্বর তাঁর হাতে সব কিছুই দিয়েছেন। তিনি আরও জানতেন যে, তিনি তাঁরই কাছ থেকে এসেছেন এবং তাঁরই কাছে ফিরে যাচ্ছেন।
4 এইজন্য তিনি খাওয়া ছেড়ে উঠলেন আর উপরের কাপড় খুলে ফেলে একটা গামছা নিয়ে কোমরে জড়ালেন।
5 তারপর তিনি গামলায় জল ঢেলে শিষ্যদের পা ধোওয়াতে লাগলেন এবং কোমরে জড়ানো গামছা দিয়ে তা মুছে দিতে লাগলেন।
6 এইভাবে যীশু যখন শিমোন-পিতরের কাছে আসলেন তখন পিতর তাঁকে বললেন, “প্রভু, আপনি কি আমার পা ধুইয়ে দেবেন?”
7 যীশু উত্তর দিলেন, “আমি যা করছি তা এখন তুমি বুঝতে পারছ না কিন্তু পরে বুঝতে পারবে।”
8 পিতর তাঁকে বললেন, “আপনি কখনও আমার পা ধুইয়ে দেবেন না।”যীশু পিতরকে বললেন, “যদি আমি তোমাকে ধুইয়ে না দিই তবে আমার সংগে তোমার কোন সম্বন্ধ নেই।”
9 তখন শিমোন-পিতর বললেন, “প্রভু, তাহলে কেবল আমার পা নয়, আমার হাত আর মাথাও ধুইয়ে দিন।”
10 যীশু তাঁকে বললেন, “যে স্নান করেছে তার পা ছাড়া আর কিছুই ধোওয়ার দরকার নেই, কারণ তার আর সব কিছু পরিষ্কার আছে।
11 তোমরা অবশ্য পরিষ্কার আছ, কিন্তু সকলে নও।” কে তাঁকে ধরিয়ে দেবে তা তিনি জানতেন। সেইজন্যই তিনি বললেন, “তোমরা সকলে পরিষ্কার নও।”
12 শিষ্যদের সকলের পা ধোওয়াবার পরে যীশু তাঁর উপরের কাপড় পরে আবার বসলেন এবং তাঁদের বললেন, “আমি কি করলাম তা কি তোমরা বুঝতে পারলে?
13 তোমরা আমাকে গুরু ও প্রভু বলে ডাক, আর তা ঠিকই বল কারণ আমি তা-ই।
14 কিন্তু আমি প্রভু আর গুরু হয়েও যখন তোমাদের পা ধুইয়ে দিলাম তখন তোমাদেরও একে অন্যের পা ধোওয়ানো উচিত।
15 আমি তোমাদের কাছে এটা করে দেখিয়েছি, যেন তোমাদের প্রতি আমি যা করলাম তোমরাও তা কর।
16 আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, দাস তার মনিব থেকে বড় নয়। যাকে পাঠানো হয়েছে সে তাঁর চেয়ে বড় নয় যিনি তাকে পাঠিয়েছেন।
17 এই সব জেনে যদি তা পালন কর তবে তোমরা ধন্য।
18 “আমি তোমাদের সকলের কথা বলছি না। আমি যাদের বেছে নিয়েছি তাদের তো আমি জানি। কিন্তু পবিত্র শাস্ত্রের এই কথা পূর্ণ হতেই হবে, ‘যে আমার সংগেই খাওয়া-দাওয়া করে, সে-ও আমার বিরুদ্ধে পা উঠিয়েছে।’
19 এটা ঘটবার আগেই আমি তোমাদের বলছি, যেন ঘটলে পর তোমরা বিশ্বাস করতে পার যে, আমিই সেই।
20 আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, আমি যাকে পাঠাই, যে তাকে গ্রহণ করে সে আমাকেই গ্রহণ করে, আর যে আমাকে গ্রহণ করে, যিনি আমাকে পাঠিয়েছেন সে তাঁকেই গ্রহণ করে।”
21 এই সব কথা বলবার পরে যীশু অন্তরে অস্থির হলেন। তিনি খোলাখুলিভাবে বললেন, “আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, তোমাদেরই মধ্যে একজন আমাকে শত্রুদের হাতে ধরিয়ে দেবে।”
22 যীশু কার কথা বলছেন তা বুঝতে না পেরে শিষ্যেরা একে অন্যের দিকে তাকাতে লাগলেন।
23 তাঁদের মধ্যে যাঁকে যীশু ভালবাসতেন তিনি যীশুর বুকের কাছেই ছিলেন।
24 শিমোন-পিতর তাঁকে ইশারা করে বললেন, “উনি কার কথা বলছেন জিজ্ঞাসা কর।”
25 সেই শিষ্য তখন যীশুর দিকে ঝুঁকে বললেন, “প্রভু, সে কে?”
26 যীশু উত্তর দিলেন, “এই রুটির টুকরাটা বাটিতে ডুবিয়ে যাকে দেব সে-ই সেই লোক।” আর তিনি রুটির টুকরাটা বাটিতে ডুবিয়ে শিমোন ইষ্কারিয়োতের ছেলে যিহূদাকে দিলেন।
27 রুটির টুকরাটা নেবার পরেই শয়তান যিহূদার মধ্যে ঢুকল।যীশু তাকে বললেন, “যা করবে তাড়াতাড়ি কর।”
28 যাঁরা যীশুর সংগে খাচ্ছিলেন তাঁরা কেউই বুঝলেন না কেন যীশু যিহূদাকে এই কথা বললেন।
29 কেউ কেউ ভাবলেন, পর্বের জন্য যা দরকার যীশু যিহূদাকে তা কিনে আনতে বললেন কিম্বা গরীবদের কিছু দিতে বললেন, কারণ তাঁদের টাকার বাক্স যিহূদার কাছেই থাকত।
30 রুটির টুকরাটা নেওয়ার সংগে সংগে যিহূদা বাইরে চলে গেল। তখন রাত হয়েছে।
31 যিহূদা বাইরে চলে যাওয়ার পর যীশু বললেন, “মনুষ্যপুত্রের মহিমা প্রকাশিত হবার সময় এসেছে এবং তাঁর মধ্যে ঈশ্বরের মহিমা প্রকাশ পাবে।
32 ঈশ্বরের মহিমা যখন তাঁর মধ্যে প্রকাশিত হবে তখন ঈশ্বরও মনুষ্যপুত্রের মহিমা নিজের মধ্যে প্রকাশ করবেন এবং তা তিনি শীঘ্রই করবেন।
33 “সন্তানেরা, আর অল্প সময় আমি তোমাদের সংগে সংগে আছি। তোমরা আমাকে খুঁজবে, কিন্তু আমি যিহূদী নেতাদের যেমন বলেছিলাম, ‘আমি যেখানে যাচ্ছি আপনারা সেখানে আসতে পারেন না,’ তেমনি তোমাদেরও এখন তা-ই বলছি।
34 একটা নতুন আদেশ আমি তোমাদের দিচ্ছি-তোমরা একে অন্যকে ভালবেসো। আমি যেমন তোমাদের ভালবেসেছি তেমনি তোমরাও একে অন্যকে ভালবেসো।
35 যদি তোমরা একে অন্যকে ভালবাস তবে সবাই বুঝতে পারবে তোমরা আমার শিষ্য।”
36 শিমোন-পিতর যীশুকে বললেন, “প্রভু, আপনি কোথায় যাচ্ছেন?”যীশু উত্তর দিলেন, “আমি যেখানে যাচ্ছি তোমরা এখন আমার সংগে সেখানে আসতে পার না, কিন্তু পরে তোমরা আসবে।”
37 পিতর তাঁকে বললেন, “প্রভু, কেন এখন আপনার সংগে যেতে পারি না? আপনার জন্য আমি আমার প্রাণও দেব।”
38 তখন যীশু বললেন, “সত্যিই কি আমার জন্য তুমি তোমার প্রাণ দেবে? আমি তোমাকে সত্যিই বলছি, মোরগ ডাকবার আগেই তুমি তিনবার বলবে যে, তুমি আমাকে চেন না।