1 এর পরে লোকেরা প্রত্যেকে যে যার বাড়ীতে চলে গেল, কিন্তু যীশু জৈতুন পাহাড়ে গেলেন।
2 পরের দিন খুব সকালে যীশু আবার উপাসনা-ঘরে গেলে পর সমস্ত লোক তাঁর কাছে আসল। তখন যীশু বসে তাদের শিক্ষা দিতে লাগলেন।
3-4 এমন সময় ধর্ম-শিক্ষক ও ফরীশীরা একজন স্ত্রীলোককে যীশুর কাছে নিয়ে আসলেন। স্ত্রীলোকটি ব্যভিচারে ধরা পড়েছিল। ধর্ম-শিক্ষক ও ফরীশীরা সেই স্ত্রীলোকটিকে মাঝখানে দাঁড় করিয়ে যীশুকে বললেন, “গুরু, এই স্ত্রীলোকটি ব্যভিচারে ধরা পড়েছে।
5 আইন-কানুনে মোশি এই রকম স্ত্রীলোকদের পাথর ছুঁড়ে মেরে ফেলতে আমাদের আদেশ দিয়েছেন। কিন্তু আপনি কি বলেন?”
6 তাঁরা যীশুকে পরীক্ষা করবার জন্যই এই কথা বললেন, যাতে তাঁকে দোষ দেবার একটা কারণ তাঁরা খুঁজে পান। তখন যীশু নীচু হয়ে আংগুল দিয়ে মাটিতে লিখতে লাগলেন।
7 কিন্তু তাঁরা যখন কথাটা বারবার তাঁকে জিজ্ঞাসা করতে লাগলেন তখন তিনি উঠে তাঁদের বললেন, “আপনাদের মধ্যে যিনি কোন পাপ করেন নি তিনিই প্রথমে ওকে পাথর মারুন।”
8 এর পরে তিনি নীচু হয়ে আবার মাটিতে লিখতে লাগলেন।
9 এই কথা শুনে সেই নেতাদের মধ্যে বুড়ো লোক থেকে আরম্ভ করে একে একে সবাই চলে গেলেন। যীশু কেবল একা রইলেন আর সেই স্ত্রীলোকটি তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে ছিল।
10 যীশু উঠে সেই স্ত্রীলোকটিকে বললেন, “তাঁরা কোথায়? কেউ কি তোমাকে শাস্তির উপযুক্ত মনে করেন নি?”
11 স্ত্রীলোকটি উত্তর দিল, “না হুজুর, কেউই করেন নি।”তখন যীশু বললেন, “আমিও করি না। আচ্ছা যাও; পাপে জীবন আর কাটায়ো না।”
12 পরে যীশু আবার লোকদের বললেন, “আমিই জগতের আলো। যে আমার পথে চলে সে কখনও অন্ধকারে পা ফেলবে না, বরং জীবনের আলো পাবে।”
13 এতে ফরীশীরা যীশুকে বললেন, “তোমার সাক্ষ্য সত্যি নয়, কারণ তুমি নিজের পক্ষে নিজেই সাক্ষ্য দিচ্ছ।”
14 যীশু তাঁদের উত্তর দিলেন, “যদিও আমি নিজের পক্ষে নিজে সাক্ষ্য দিই তবুও আমার সাক্ষ্য সত্যি, কারণ আমি কোথা থেকে এসেছি আর কোথায় যাচ্ছি তা আমি জানি। কিন্তু আমি কোথা থেকে এসেছি আর কোথায় যাচ্ছি তা আপনারা জানেন না।
15 মানুষ যেভাবে বিচার করে আপনারা সেইভাবে বিচার করে থাকেন, কিন্তু আমি কারও বিচার করি না।
16 কিন্তু যদি আমি কখনও বিচার করি তবে আমার সেই বিচার সত্যি, কারণ আমি একা নই। আমি তো আছিই আর যিনি আমাকে পাঠিয়েছেন সেই পিতাও আমার সংগে আছেন।
17 আপনাদের আইন-কানুনে লেখা আছে, দু’জন যদি একই সাক্ষ্য দেয় তবে তা সত্যি।
18 আমিই আমার নিজের পক্ষে সাক্ষ্য দিই, আর যিনি আমাকে পাঠিয়েছেন সেই পিতাও আমার পক্ষে সাক্ষ্য দেন।”
19 ফরীশীরা তাঁকে বললেন, “তোমার পিতা কোথায়?”যীশু উত্তর দিলেন, “আপনারা আমাকেও জানেন না আর আমার পিতাকেও জানেন না। যদি আমাকে জানতেন তবে আমার পিতাকেও জানতেন।”
20 উপাসনা-ঘরে শিক্ষা দেবার সময়ে দান দেবার জায়গায় যীশু এই সব কথা বললেন। কিন্তু তখনও তাঁর সময় হয় নি বলে কেউই তাঁকে ধরল না।
21 যীশু আবার ফরীশীদের বললেন, “আমি চলে যাচ্ছি। আপনারা আমাকে খুঁজবেন, কিন্তু আপনারা আপনাদের পাপের মধ্যে মরবেন। আমি যেখানে যাচ্ছি আপনারা সেখানে আসতে পারবেন না।”
22 তখন যিহূদী নেতারা বললেন, “সে আত্মহত্যা করবে নাকি? কারণ সে বলছে, ‘আমি যেখানে যাচ্ছি আপনারা সেখানে আসতে পারবেন না।’ ”
23 যীশু তাঁদের বললেন, “আমি উপর থেকে এসেছি আর আপনারা নীচ থেকে এসেছেন। আপনারা এই জগতের, কিন্তু আমি এই জগতের নই।
24 তাই আমি আপনাদের বলেছি, আপনারা আপনাদের পাপের মধ্যে মরবেন। যদি আপনারা বিশ্বাস না করেন যে, আমিই সেই, তবে আপনাদের পাপের মধ্যেই আপনারা মরবেন।”
25 এতে নেতারা যীশুকে জিজ্ঞাসা করলেন, “তুমি কে?”যীশু তাঁদের বললেন, “প্রথম থেকে আমি আপনাদের যা বলছি আমি তা-ই।
26 আপনাদের সম্বন্ধে বলবার আর বিচার করে দেখবার আমার অনেক কিছুই আছে। কিন্তু যিনি আমাকে পাঠিয়েছেন তাঁর মধ্যে মিথ্যা নেই; আমি তাঁর কাছে যা শুনেছি তা-ই মানুষকে বলি।”
27 তাঁরা বুঝলেন না যীশু পিতার বিষয়েই তাঁদের কাছে বলছিলেন।
28 এইজন্য যীশু বললেন, “যখন আপনারা মনুষ্যপুত্রকে উঁচুতে তুলবেন তখন বুঝতে পারবেন যে, আমিই সেই। আর এও বুঝতে পারবেন যে, আমি নিজে থেকে কোন কিছুই করি না, বরং পিতা আমাকে যে শিক্ষা দিয়েছেন আমি সেই সব কথাই বলি।
29 যিনি আমাকে পাঠিয়েছেন তিনিই আমার সংগে আছেন। তিনি আমাকে একা ছেড়ে দেন নি, কারণ যে কাজে তিনি সন্তুষ্ট হন আমি সব সময় সেই কাজই করি।”
30 যীশু যখন এই সব কথা বলছিলেন তখন অনেকেই তাঁর উপর বিশ্বাস করল।
31 যে যিহূদীরা তাঁকে বিশ্বাস করেছিল যীশু তাদের বললেন, “আমার কথামত যদি আপনারা চলেন তবে সত্যিই আপনারা আমার শিষ্য।
32 তা ছাড়া আপনারা সত্যকে জানতে পারবেন, আর সেই সত্যই আপনাদের মুক্ত করবে।”
33 যিহূদী নেতারা তখন যীশুকে বললেন, “আমরা অব্রাহামের বংশের লোক; আমরা কখনও কারও দাস হই নি। তুমি কি করে বলছ যে, আমাদের মুক্ত করা হবে?”
34 যীশু তাঁদের এই উত্তর দিলেন, “আমি সত্যিই আপনাদের বলছি, যারা পাপে পড়ে থাকে তারা সবাই পাপের দাস।
35 দাস চিরদিন বাড়ীতে থাকে না কিন্তু পুত্র চিরকাল থাকে।
36 তাই ঈশ্বরের পুত্র যদি আপনাদের মুক্ত করেন তবে সত্যিই আপনারা মুক্ত হবেন।
37 আমি জানি আপনারা অব্রাহামের বংশের লোক, কিন্তু তবুও আপনারা আমাকে মেরে ফেলতে চাইছেন, কারণ আমার কথা আপনাদের অন্তরে কোন স্থান পায় না।
38 আমি আমার পিতার কাছে যা দেখেছি সেই বিষয়েই বলি, আর আপনারা আপনাদের পিতার কাছ থেকে যা শুনেছেন তা-ই করে থাকেন।”
39 এতে সেই যিহূদী নেতারা যীশুকে বললেন, “অব্রাহামই আমাদের পিতা।”যীশু তাঁদের বললেন, “যদি আপনারা অব্রাহামের সন্তান হতেন তবে অব্রাহামের মতই কাজ করতেন।
40 ঈশ্বরের কাছ থেকে যে সত্য আমি জেনেছি তা-ই আপনাদের বলেছি, আর তবুও আপনারা আমাকে মেরে ফেলতে চাইছেন; কিন্তু অব্রাহাম এই রকম করেন নি।
41 আপনাদের পিতা যা করে আপনারা তা-ই করছেন।”তাঁরা যীশুকে বললেন, “আমরা তো জারজ নই। আমাদের একজনই পিতা আছেন, সেই পিতা হলেন ঈশ্বর।”
42 যীশু তাঁদের বললেন, “সত্যিই যদি ঈশ্বর আপনাদের পিতা হতেন তবে আপনারা আমাকে ভালবাসতেন, কারণ আমি ঈশ্বরের কাছ থেকে এসেছি আর এখন আপনাদের মধ্যে আছি। আমি নিজ থেকে আসি নি, কিন্তু তিনিই আমাকে পাঠিয়েছেন।
43 কেন আপনারা আমার কথা বোঝেন না? তার কারণ এই যে, আপনারা আমার কথা সহ্য করতে পারেন না।
44 শয়তানই আপনাদের পিতা আর আপনারা তারই সন্তান; সেইজন্য আপনারা তার ইচ্ছা পূর্ণ করতে চান। শয়তান প্রথম থেকেই খুনী। সে কখনও সত্যে বাস করে নি, কারণ তার মধ্যে সত্য নেই। সে যখন মিথ্যা কথা বলে তখন সে তা নিজে থেকেই বলে, কারণ সে মিথ্যাবাদী আর সমস্ত মিথ্যার জন্ম তার মধ্য থেকেই হয়েছে।
45 কিন্তু আমি সত্যি কথা বলি, আর তাই আপনারা আমাকে বিশ্বাস করেন না।
46 আপনাদের মধ্যে কে আমাকে পাপী বলে প্রমাণ করতে পারেন? যদি আমি সত্যি কথাই বলি তবে কেন আপনারা আমাকে বিশ্বাস করেন না?
47 যে লোক ঈশ্বরের, সে ঈশ্বরের কথা শোনে। আপনারা ঈশ্বরের নন বলে ঈশ্বরের কথা শোনেন না।”
48 তখন যিহূদী নেতারা যীশুকে বললেন, “আমরা কি ঠিক বলি নি যে, তুমি একজন শমরীয় আর তোমাকে ভূতে পেয়েছে?”
49 উত্তরে যীশু বললেন, “আমাকে ভূতে পায় নি। আমি আমার পিতাকে সম্মান করি, কিন্তু আপনারা আমাকে অসম্মান করেন।
50 আমি আমার নিজের প্রশংসার চেষ্টা করি না, কিন্তু একজন আছেন যিনি আমাকে সম্মান দান করেন, আর তিনিই বিচারকর্তা।
51 আমি আপনাদের সত্যিই বলছি, যদি কেউ আমার কথার বাধ্য হয়ে চলে তবে সে কখনও মরবে না।”
52 যিহূদী নেতারা তাঁকে বললেন, “এবার আমরা সত্যি বুঝলাম যে, তোমাকে ভূতেই পেয়েছে। অব্রাহাম ও নবীরা মারা গেছেন, আর তুমি বলছ, ‘যদি কেউ আমার কথার বাধ্য হয়ে চলে সে কখনও মরবে না।’ তুমি কি পিতা অব্রাহাম থেকেও বড়?
53 তিনি তো মারা গেছেন এবং নবীরাও মারা গেছেন। তুমি নিজেকে কি মনে কর?”
54 উত্তরে যীশু বললেন, “যদি আমি নিজের প্রশংসা নিজেই করি তবে তার কোন দাম নেই। আমার পিতা, যাঁকে আপনারা আপনাদের ঈশ্বর বলে দাবি করেন তিনিই আমাকে সম্মান দান করেন।
55 আপনারা কখনও তাঁকে জানেন নি, কিন্তু আমি তাঁকে জানি। যদি আমি বলি আমি তাঁকে জানি না তবে আপনাদেরই মত আমি মিথ্যাবাদী হব। কিন্তু আমি তাঁকে জানি এবং তাঁর কথার বাধ্য হয়ে চলি।
56 আপনাদের পিতা অব্রাহাম আমারই দিন দেখবার আশায় আনন্দ করেছিলেন। তিনি তা দেখেছিলেন আর খুশীও হয়েছিলেন।”
57 যিহূদী নেতারা যীশুকে বললেন, “তোমার বয়স এখনও পঞ্চাশ বছর হয় নি, আর তুমি কি অব্রাহামকে দেখেছ?”
58-59 যীশু তাঁদের বললেন, “আমি আপনাদের সত্যি বলছি, অব্রাহাম জন্মগ্রহণ করবার আগে থেকেই আমি আছি।” এই কথা শুনে সেই নেতারা যীশুকে মারবার জন্য পাথর কুড়িয়ে নিলেন। কিন্তু যীশু নিজেকে গোপন করে উপাসনা-ঘর থেকে বের হয়ে গেলেন।