1 একবার সাহাবী-নবীদের মধ্যে একজনের স্ত্রী আল-ইয়াসার কাছে কেঁদে বললো, আপনার গোলাম আমার স্বামী মারা গেছেন; আপনি জানেন, আপনার গোলাম মাবুদকে ভয় করতেন; এখন ঋণদাতা আমার দু’টি সন্তানকে গোলাম বানাবার জন্য নিয়ে যেতে এসেছে।
2 আল-ইয়াসা তাকে বললেন, আমি তোমার জন্য কি করতে পারি? বল দেখি, তোমার ঘরে কি আছে? সে বললো এক বাটি তেল ছাড়া আপনার বাঁদীর আর কিছুই নেই।
3 তখন তিনি বললেন, যাও, বাইরে থেকে তোমার সমস্ত প্রতিবেশীর কাছ থেকে বেশ কিছু শূন্য পাত্র চেয়ে আন, অল্প এনো না।
4 পরে ভিতরে গিয়ে তুমি ও তোমার পুত্রেরা ঘরে থেকে দরজা বন্ধ কর এবং সেসব পাত্রে তেল ঢাল; এক এক পাত্র পূর্ণ হলে তা একদিকে রাখ।
5 পরে সে স্ত্রীলোক তাঁর কাছ থেকে প্রস্থান করলো, আর সে ও তার পুত্রেরা ঘরে থেকে দরজা বন্ধ করলো; তারা পুনঃ পুনঃ তাকে পাত্র এনে দিল এবং সে তেল ঢাললো।
6 সমস্ত পাত্র পূর্ণ হওয়ার পর সে তার পুত্রকে বললো, আরও পাত্র আন। পুত্র বললো, আর পাত্র নেই। তখন তেলের স্রোত বন্ধ হল।
7 পরে সে গিয়ে আল্লাহ্র লোককে সংবাদ দিল। তিনি বললেন, যাও, সেই তেল বিক্রি করে তোমার ঋণ পরিশোধ কর এবং যা অবশিষ্ট থাকবে, তা দ্বারা তুমি ও তোমার পুত্রেরা দিনপাত কর।
8 এক দিন আল-ইয়াসা শূনেমে যান। সেখানে এক ধনবতী মহিলা ছিলেন; তিনি আগ্রহ সহকারে তাঁকে ভোজনের দাওয়াত করলেন। পরে যত বার তিনি ঐ পথ দিয়ে যেতেন, তত বার আহার করার জন্য সেই স্থানে যেতেন।
9 আর সেই মহিলা তার স্বামীকে বললেন, দেখ, আমি বুঝতে পেরেছি, এই যে ব্যক্তি আমাদের কাছ দিয়ে প্রায়ই যাতায়াত করেন, ইনি আল্লাহ্র এক জন পবিত্র লোক।
10 আরজ করি, এসো, আমরা ছাদের উপরে একটি ক্ষুদ্র কুঠরী নির্মাণ করি এবং তার মধ্যে তাঁর জন্য একখানি পালঙ্ক, একখানি টেবিল, একখানি আসন ও একটি প্রদীপ-আসন রাখি; তিনি আমাদের এখানে আসলে সেই স্থানে থাকবেন।
11 এক দিন আল-ইয়াসা সেখানে আসলেন; আর সেই কুঠরীতে প্রবেশ করে শয়ন করলেন।
12 পরে তিনি তাঁর ভৃত্য গেহসিকে বললেন, তুমি ঐ শূনেমীয়াকে ডাক। তাতে সে তাঁকে ডাকলে সেই স্ত্রীলোকটি তাঁর সম্মুখে দাঁড়ালেন।
13 তখন আল-ইয়াসা গেহসিকে বললেন, ওঁকে বল, দেখুন, আমাদের জন্য আপনি এসব চিন্তা করলেন, এখন আপনার জন্য কি করতে হবে? বাদশাহ্র কিংবা সেনাপতির কাছে আপনার কি কোন নিবেদন আছে? জবাবে তিনি বললেন, আমি আমার লোকদের মধ্যে বাস করছি।
14 পরে আল-ইয়াসা বললেন, তাহলে তাঁর জন্য কি করতে হবে? গেহসি বললো, নিশ্চয়ই তাঁর পুত্র-সন্তান নেই, স্বামীও বৃদ্ধ।
15 আল-ইয়াসা বললেন, ওঁকে ডাক; পরে তাঁকে ডাকলে তিনি দ্বারে দাঁড়ালেন।
16 তখন আল-ইয়াসা বললেন, এই ঋতুতে এই সময় পুনরায় উপস্থিত হলে আপনি পুত্র কোলে নেবেন। কিন্তু তিনি বললেন, না, হে মালিক, হে আল্লাহ্র লোক, আপনার বাঁদীকে মিথ্যা কথা বলবেন না।
17 পরে আল-ইয়াসার কথা অনুসারে সেই স্ত্রী গর্ভধারণ করে সেই সময় পুনরায় উপস্থিত হলে পুত্র প্রসব করলেন।
18 বালকটি বড় হওয়ার পর সে এক দিন শস্য কর্তনকারীদের মাঝে তার পিতার কাছে গেল।
19 পরে সে পিতাকে বললো, আমার মাথা! আমার মাথা! তখন পিতা ভৃত্যকে বললেন, তুমি একে তুলে এর মায়ের কাছে নিয়ে যাও।
20 পরে সে তাকে তুলে মায়ের কাছে আনলে বালকটি মধ্যাহ্নকাল পর্যন্ত তাঁর কোলে বসে থাকলো, পরে মারা গেল।
21 তখন মা উপরে গিয়ে আল্লাহ্র লোকের পালঙ্কে তাকে শয়ন করালেন, পরে দরজা রুদ্ধ করে বাইরে আসলেন,
22 আর তাঁর স্বামীকে ডেকে বললেন, আরজ করি, তুমি ভৃত্যদের এক জনকে ও একটি গাধী আমার কাছে পাঠিয়ে দাও, আমি আল্লাহ্র লোকের কাছে শীঘ্র গিয়ে ফিরে আসবো।
23 তিনি বললেন, আজ তাঁর কাছে কেন যাবে? আজ অমাবস্যাও নয়, বিশ্রামবারও নয়। স্ত্রীলোকটি বললেন, মঙ্গল হবে।
24 আর তিনি গাধী সাজিয়ে তাঁর ভৃত্যকে বললেন, গাধীটিকে দ্রুত চালাও, হুকুম না পেলে আমার গতি শিথিল করো না।
25 পরে তিনি কর্মিল পর্বতে আল্লাহ্র লোকের কাছে চললেন। তখন আল্লাহ্র লোক তাঁকে দূর থেকে দেখে তাঁর ভৃত্য গেহসিকে বললেন, দেখ, ঐ সেই শূনেমীয়া;
26 একবার দৌড়ে গিয়ে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ কর, আর জিজ্ঞাসা কর, আপনার মঙ্গল? আপনার স্বামীর মঙ্গল? বালকটির মঙ্গল? তিনি উত্তর করলেন, মঙ্গল।
27 পরে পর্বতে আল্লাহ্র লোকের কাছে উপস্থিত হয়ে তিনি তাঁর পা জড়িয়ে ধরলেন; তাতে গেহসি তাঁকে ঠেলে দেবার জন্য কাছে এল, কিন্তু আল্লাহ্র লোক বললেন, ওঁকে থাকতে দাও, তাঁর প্রাণ শোকাকুল হয়েছে, আর মাবুদ আমা থেকে তা গোপন করেছেন, আমাকে জানান নি।
28 তখন স্ত্রীলোকটি বললেন, আমার মালিকের কাছে আমি কি পুত্র চেয়েছিলাম? আমাকে প্রতারণা করবেন না, এই কথা কি বলি নি?
29 তখন আল-ইয়াসা গেহসিকে বললেন, কোমরবন্ধনী পর, আমার এই লাঠি হাতে নিয়ে প্রস্থান কর; কারো সঙ্গে সাক্ষাৎ হলে তাকে সালাম জানাবে না এবং কেউ সালাম জানালে তাকে উত্তর দিও না; পরে বালকটির মুখের উপরে আমার এই লাঠি রেখো।
30 তখন বালকের মা বললেন, জীবন্ত মাবুদের কসম এবং আপনার জীবিত প্রাণের কসম, আমি আপনাকে ছাড়ব না। তখন আল-ইয়াসা উঠে তাঁর পেছন পেছন চললেন।
31 ইতোমধ্যে গেহসি তাঁদের আগে গিয়ে বালকটির মুখে ঐ লাঠিটি রাখল, তবুও কোন আওয়াজ হল না, অবধানের কোন লক্ষণও পাওয়া গেল না। অতএব গেহসি তাঁর সঙ্গে সাক্ষাত করতে ফিরে গিয়ে তাঁকে বললো, বালকটি জাগে নি।
32 পরে আল-ইয়াসা সেই বাড়িতে এসে দেখলেন, বালকটি মৃত ও তাঁর বিছানায় শায়িত।
33 তখন তিনি প্রবেশ করলেন এবং তাঁদের দুই জনকে বাইরে রেখে দরজা রুদ্ধ করে মাবুদের কাছে মুনাজাত করলেন।
34 আর পালঙ্কে উঠে বালকটির উপরে শয়ন করলেন; তিনি তার মুখের উপরে তাঁর মুখ, চোখের উপরে চোখ ও হাতের উপরে হাত দিয়ে তার উপরে তিনি লম্বমান হলেন; তাতে বালকটির শরীর উত্তাপযুক্ত হতে লাগল।
35 পরে তিনি উঠে বাড়ির মধ্যে পায়চারি করতে লাগলেন, আবার উঠে তার উপরে লম্বমান হলেন; তাতে বালকটি সাত বার হাঁচি দিল ও বালকটি চোখ মেলে তাকাল।
36 তখন তিনি গেহসিকে ডেকে বললেন, ঐ শূনেমীয়াকে ডাক। সে তাঁকে ডাকলে স্ত্রীলোকটি তাঁর কাছে আসলেন। আল-ইয়াসা বললেন, আপনার পুত্রকে তুলে নিন।
37 তখন সেই স্ত্রীলোক কাছে গিয়ে তাঁর পদতলে পড়ে ভূমিতে উবুড় হয়ে সালাম করলেন এবং তাঁর পুত্রকে তুলে নিয়ে বাইরে গেলেন।
38 আল-ইয়াসা আবার গিল্গলে উপস্থিত হলেন; সেই সময়ে দেশে দুর্ভিক্ষ ছিল। তখন সাহাবী-নবীরা তাঁর সম্মুখে বসেছিলেন; তিনি তাঁর ভৃত্যকে হুকুম দিলেন, বড় হাঁড়ি চড়িয়ে এই সাহাবী নবীদের জন্য ব্যঞ্জন রান্না কর।
39 তখন তাদের এক জন তরকারি সংগ্রহ করতে মাঠে গেল এবং বনশসার লতা দেখতে পেয়ে তার বন্য ফলে কোঁচড় পূর্ণ করে নিয়ে আসল, পরে তা কুটে রান্নার হাঁড়িতে দিল; কিন্তু সেগুলো কি তা তারা জানলো না।
40 পরে লোকদের ভোজন করার জন্য তা ঢাললে তারা সেই তরকারী খেতে গিয়ে চিৎকার করে বললো, হে আল্লাহ্র লোক, হাঁড়ির মধ্যে মৃত্যু; আর তারা তা খেতে পারল না।
41 তখন তিনি বললেন, তবে কিছু ময়দা আন। পরে তিনি হাঁড়িতে তা ফেলে বললেন, লোকদের জন্য ঢেলে দাও, তারা ভোজন করুক। তাতে হাঁড়িতে কিছুই মন্দ থাকলো না।
42 আর বাল্-শালিশা থেকে এক ব্যক্তি এল, সে আল্লাহ্র লোকের কাছে আশুপক্ক শস্যের রুটি, যবের কুড়িখানা রুটি ও ছালায় করে শস্যের তাজা শীষ আনলো; আর তিনি বললেন, এগুলো লোকদেরকে দাও, তারা ভোজন করুক।
43 তখন তাঁর পরিচারক বললো, আমি কি একশত লোককে তা পরিবেশন করবো? কিন্তু তিনি বললেন, তা-ই লোকদেরকে দাও তারা ভোজন করুক; কেননা মাবুদ এই কথা বলেন, তারা ভোজন করবে ও উদ্বৃত্ত রাখবে।
44 অতএব সে তাদের সম্মুখে তা খেতে দিল, আর মাবুদের কালাম অনুসারে তারা ভোজন করলো, আর উদ্বৃত্তও রাখল।