২ বাদশাহ্‌নামা 6 BACIB

কুড়ালের ফলা ভেসে উঠলো

1 একবার সাহাবী-নবীরা আল-ইয়াসাকে বললো, দেখুন, আমরা আপনার সাক্ষাতে যে স্থানে বাস করছি, সেটি আমাদের পক্ষে খুবই ছোট।

2 অনুমতি করুন, আমরা জর্ডানে গিয়ে প্রত্যেকে সেই স্থান থেকে এক একখানি কড়িকাঠ নিয়ে আমাদের জন্য সেখানে বাসস্থান প্রস্তুত করি।

3 তিনি বললেন, যাও। আর এক জন বললো, আপনি অনুগ্রহ করে আপনার গোলামদের সঙ্গে চলুন।

4 তিনি বললেন, যাব। অতএব তিনি তাদের সঙ্গে গেলেন; পরে জর্ডানের কাছে উপস্থিত হয়ে তারা কাঠ কাটতে লাগল।

5 কিন্তু এক জন কড়িকাঠ কাটছিল, এমন সময়ে কুড়ালির ফলা পানিতে পড়ে গেল; তাতে সে কেঁদে বললো, হায় হায়! মালিক, আমি তো ওটা ধার করে এনেছিলাম।

6 তখন আল্লাহ্‌র লোক জিজ্ঞাসা করলেন, তা কোথায় পড়েছে? সে তাঁকে সেই স্থান দেখাল। তখন আল-ইয়াসা একখানি কাঠ কেটে সেই স্থানে ফেলে লোহাটি ভাসিয়ে উঠালেন;

7 আর তিনি বললেন, সেটি তুলে নাও। তাতে সে হাত বাড়িয়ে তা নিল।

অরামীয় সৈন্যেরা অন্ধ হল

8 এক সময়ে অরামের বাদশাহ্‌ ইসরাইলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছিলেন, আর যখন তিনি তাঁর গোলামদের সঙ্গে মন্ত্রণা করে বলতেন, অমুক অমুক স্থানে আমার শিবির স্থাপন করা হবে,

9 তখন আল্লাহ্‌র লোক ইসরাইলের বাদশাহ্‌র কাছে বলে পাঠাতেন, সাবধান, অমুক স্থান উপেক্ষা করবেন না, কেননা সেখানে অরামীয়েরা নেমে আসছে।

10 তাতে আল্লাহ্‌র লোক যে স্থানের বিষয় বলে তাঁকে সাবধান করে দিতেন, সেই স্থানে ইসরাইলের বাদশাহ্‌ সৈন্য পাঠিয়ে নিজেকে রক্ষা করতেন; কেবল দুই এক বার নয়;

11 এই বিষয়ের জন্য অরামের বাদশাহ্‌র মন অস্থির হয়ে উঠলো, তিনি তাঁর গোলামদেরকে ডেকে বললেন, আমাদের মধ্যে কে ইসরাইলের বাদশাহ্‌র পক্ষের তা কি তোমরা আমাকে বলবে না?

12 তখন তাঁর গোলামদের মধ্যে এক জন বললো, হে আমার মালিক বাদশাহ্‌, কেউ নয়, কিন্তু আপনি আপনার শয়নাগারে যেসব কথা বলেন, সেসব ইসরাইলস্থ নবী আল-ইয়াসা ইসরাইলের বাদশাহ্‌কে জানিয়ে দেন।

13 তখন তিনি বললেন, তোমরা গিয়ে দেখ সে কোথায়, আমি লোক পাঠিয়ে তাকে আনাবো। পরে কেউ তাঁকে এই সংবাদ দিল, দেখুন তিনি দোথনে আছেন।

14 তাতে তিনি অনেক ঘোড়া, রথ ও একটি বড় সৈন্যদল সেখানে পাঠালেন। তারা রাতে এসে সেই নগর বেষ্টন করলো।

15 আর আল্লাহ্‌র লোকের পরিচারক খুব ভোরে উঠে যখন বাইরে গেল, তখন দেখ, অনেক ঘোড়া ও রথসহ একটি সৈন্যদল নগর বেষ্টন করে আছে। পরে তাঁর ভৃত্য তাঁকে বললো, হায় হায় হে মালিক! আমরা কি করবো?

16 তিনি বললেন, ভয় করো না, ওদের সঙ্গীদের চেয়ে আমাদের সঙ্গী বেশি।

17 তখন আল-ইয়াসা মুনাজাত করে বললেন, হে মাবুদ, আরজ করি, এর চোখ খুলে দাও, যেন সে দেখতে পায়। তখন মাবুদ সেই যুবকটির চোখ খুলে দিলেন এবং সে দেখতে পেল, আর দেখ, আল-ইয়াসার চারদিকে আগুনের ঘোড়া ও রথে পর্বত পরিপূর্ণ।

18 পরে ঐ সৈন্যরা তাঁর কাছে আসলে আল-ইয়াসা মাবুদের কাছে মুনাজাত করে বললেন, আরজ করি, এই দলকে অন্ধতায় আহত কর। তাতে তিনি আল-ইয়াসার কথা অনুসারে তাদেরকে অন্ধতায় আহত করলেন।

19 পরে আল-ইয়াসা তাদের বললেন, এ সেই পথ নয় এবং এ সেই নগরও নয়; তোমরা আমার পেছন পেছন এসো; যে ব্যক্তির খোঁজ করছো, তার কাছে আমি তোমাদেরকে নিয়ে যাব। তিনি তাদেরকে সামেরিয়ায় নিয়ে গেলেন।

20 তারা সামেরিয়ায় প্রবেশ করা মাত্র আল-ইয়াসা বললেন, হে মাবুদ এদের চোখ খুলে দাও, যেন এরা দেখতে পায়। তখন মাবুদ তাদের চোখ খুলে দিলেন এবং তারা দেখতে পেল, আর দেখ, তারা সামেরিয়ায় উপস্থিত।

21 আর ইসরাইলের বাদশাহ্‌ তাদের দেখে আল-ইয়াসাকে বললেন, হে পিতা, এদেরকে কি হত্যা করবো? আল-ইয়াসা বললেন, না।

22 তুমি যাদের তলোয়ার ও ধনুক দ্বারা বন্দী কর, তাদেরকে কি হত্যা কর? ওদের সম্মুখে রুটি ও পানি রাখ; ওরা ভোজন পান করে ওদের মালিকের কাছে চলে যাক।

23 তখন তিনি তাদের জন্য মহাভোজ প্রস্তুত করলেন এবং তারা ভোজন পান করলে তাদেরকে বিদায় করলেন, তারা তাদের মালিকের কাছে গেল। পরে অরামের সৈন্যদল ইসরাইল দেশে আর এল না।

সামেরিয়ায় দুর্ভিক্ষ

24 এর পরে অরামের বাদশাহ্‌ বিন্‌হদদ তাঁর সমস্ত সৈন্য একত্র করলেন এবং গিয়ে সামেরিয়া অবরোধ করলেন।

25 তাতে সামেরিয়ায় অতিশয় দুর্ভিক্ষ হল; আর দেখ তারা অবরোধ করে রইলে শেষে একটা গাধার মাথার মূল্য আশি রূপার মদ্রা ও কপোতমলের এক কাবের চতুর্থাংশের মূল্য পাঁচ রূপার মুদ্রা হল।

26 একদিন ইসরাইলের বাদশাহ্‌ প্রাচীরের উপরে বেড়াচ্ছিলেন এমন সময়ে একটি স্ত্রীলোক তাঁর কাছে কেঁদে বললো, হে আমার মালিক বাদশাহ্‌, রক্ষা করুন।

27 বাদশাহ্‌ বললেন, যদি মাবুদ তোমাকে রক্ষা না করেন, আমি কোথা থেকে তোমাকে রক্ষা করবো? কি খামার থেকে? না আঙ্গুরপেষণকুণ্ড থেকে?

28 বাদশাহ্‌ আরও বললেন, তোমার কি হয়েছে? সে জবাবে বললো, এই স্ত্রীলোকটি আমাকে বলেছিল, তোমার ছেলেটিকে দাও, আজ আমরা তাকে খাই, আগামীকাল, আমার ছেলেটিকে খাব।

29 তখন আমরা আমার ছেলেটিকে রান্না করে খেলাম। পরদিন আমি একে বললাম, তোমার ছেলেটিকে দাও, আমরা খাই; কিন্তু সে তার ছেলেটিকে লুকিয়ে রেখেছে।

30 স্ত্রীলোটির এই কথা শুনে বাদশাহ্‌ তাঁর কাপড় ছিঁড়লেন; তখন তিনি প্রাচীরের উপরে বেড়াচ্ছিলেন; তাতে লোকেরা চেয়ে দেখলো, আর দেখ পোশাকের নিচে তাঁর শরীরে চট বাঁধা।

31 পরে তিনি বললেন, আজ যদি শাফটের পুত্র আল-ইয়াসার মাথা তার কাঁধে থাকে, তবে আল্লাহ্‌ আমাকে অমুক ও তার চেয়েও বেশি দণ্ড দিন।

32 তখন আল-ইয়াসা তাঁর বাড়িতে বসেছিলেন এবং তাঁর সঙ্গে প্রাচীনবর্গরা বসেছিলেন; ইতোমধ্যে বাদশাহ্‌ তাঁর সম্মুখে থেকে এক জন লোক পাঠালেন। কিন্তু সেই দূতের আসার আগে আল-ইয়াসা প্রাচীন নেতৃবর্গকে বললেন, সেই নরঘাতকের পুত্র আমার মাথা কেটে ফেলবার জন্য লোক পাঠিয়েছে, তোমরা কি দেখছ? দেখ, সেই দূত আসলে দরজা বন্ধ করো এবং দ্বারসুদ্ধ তাকে ঠেলে দিও; তার পিছনে কি তার মালিকের পায়ের শব্দ শোনা যাচ্ছে না?

33 তিনি তাদের সঙ্গে কথাবার্তা বলছেন এমন সময়ে দূত তাঁর কাছে পৌঁছাল। পরে বাদশাহ্‌ বললেন, দেখ, এই অমঙ্গল মাবুদ থেকে হল, তবে আমি কেন আর মাবুদের অপেক্ষাতে থাকব।

অধ্যায়

1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25