1 সামেরিয়ায় আহাবের সত্তর জন পুত্র ছিল। যেহূ সামেরিয়ায় যিষ্রিয়েলের নেতাদের অর্থাৎ প্রধান ব্যক্তিদের কাছে ও আহাবের সন্তানদের অভিভাবকদের কাছে কয়েকখানি পত্র লিখে পাঠালেন।
2 তিনি লিখলেন, তোমাদের মালিকের পুত্ররা তোমাদের কাছে আছে এবং কতকগুলো রথ, ঘোড়া ও সুদৃঢ় একটি নগর এবং অস্ত্রশস্ত্রও তোমাদের কাছে আছে।
3 অতএব তোমাদের কাছে এই পত্র উপস্থিত হওয়ামাত্র তোমাদের মালিকের পুত্রদের মধ্যে কোন্ ব্যক্তি সৎ ও উপযুক্ত, তা নিশ্চয় করে তার পিতার সিংহাসনে তাকে বসাও এবং তোমার মালিকের কুলের জন্য যুদ্ধ কর।
4 কিন্তু তারা ভীষণ ভয় পেয়ে বললো, দেখ, যাঁর সম্মুখে দু’জন বাদশাহ্ দাঁড়াতে পারলেন না, তাঁর সম্মুখে আমরা কিভাবে দাঁড়াবো?
5 অতএব রাজবাড়ির পরিচালক, শহরের শাসনকর্তা এবং প্রাচীনবর্গরা ও অভিভাবকেরা যেহূর কাছে এই কথা বলে পাঠাল, আমরা আপনার গোলাম, আপনি আমাদেরকে যা যা বলবেন, তার সবকিছুই করবো, কাউকেও বাদশাহ্ করবো না; আপনার দৃষ্টিতে যা ভাল, আপনি তা-ই করুন।
6 পরে তিনি তাদের কাছে দ্বিতীয় বার একটি পত্র লিখলেন, যথা, তোমরা যদি আমার সপক্ষ হও ও আমার আহ্বানে সাড়া দাও, তবে তোমার মালিকের পুত্রদের মুণ্ডগুলো নিয়ে আগামীকাল এই সময়ে যিষ্রিয়েলে আমার কাছে এসো। সেই রাজকুমারেরা সত্তর জন ছিল এবং তারা তাদের প্রতিপালনকারী নগরবাসী বড় লোকদের সঙ্গে ছিল।
7 আর পত্রখানি তাদের কাছে উপস্থিত হলে তারা সেই সত্তর জন রাজকুমারকে হত্যা করলো এবং কতকগুলো ডালাতে করে তাদের মুণ্ডু যিষ্রিয়েলে তাঁর কাছে পাঠিয়ে দিল।
8 পরে এক জন দূত এসে তাঁকে সংবাদ দিয়ে বললো, রাজকুমারদের ছিন্ন মুণ্ডুগুলো আনা হয়েছে। তিনি বললেন, নগর-দ্বারের প্রবেশ স্থানে দুই সারি করে সেগুলো সকাল পর্যন্ত রাখ।
9 পরে খুব ভোরে তিনি বাইরে গিয়ে দাঁড়ালেন ও সমস্ত লোককে বললেন, তোমরা তো ধার্মিক; দেখ, আমি আমার মালিকের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করে তাঁকে মেরে ফেলেছি; কিন্তু এদেরকে কে খুন করলো?
10 এখন তোমরা জেনো, মাবুদ আহাব কুলের বিপরীতে যা বলেছেন, মাবুদের সেই কালামের কিছুই ব্যর্থ হবার নয়; কারণ মাবুদ তাঁর গোলাম ইলিয়াসের দ্বারা যা বলেছেন, তা করলেন।
11 পরে যিষ্রিয়েলে আহাব-কুলের যত লোক অবশিষ্ট ছিল, যেহূ তাদের, তাঁর সমস্ত গণ্যমান্য লোক, তাঁর বন্ধু-বান্ধবদের ও তাঁর ইমামদেরকে হত্যা করলেন, তাঁর সম্পর্কীয় কাউকেও অবশিষ্ট রাখলেন না।
12 পরে তিনি প্রস্থান করলেন, সামেরিয়ায় গেলেন। পথের মধ্যে ভেড়ার রাখালদের ভেড়ার লোমচ্ছেদন-গৃহে উপস্থিত হলে,
13 এহুদার বাদশাহ্ অহসিয়ের ভাইদের সঙ্গে যেহূর সাক্ষাৎ হল; তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তোমরা কে? তারা বললো, আমরা অহসীয়ের ভাই; বাদশাহ্ ও রাণী মাতার সন্তানদেরকে সালাম জানাতে যাচ্ছি।
14 তিনি বললেন, ওদেরকে জীবন্ত ধর। তাতে লোকেরা তাদেরকে জীবন্ত ধরে ভেড়ার লোমচ্ছেদন-গৃহের কূপের কাছে হত্যা করলো, বিয়াল্লিশ জনের মধ্যে এক জনকেও অবশিষ্ট রাখল না।
15 যেহূ সেই স্থান থেকে প্রস্থান করলে রেখবের পুত্র যিহোনাদবের সঙ্গে তাঁর দেখা হল; তিনি তাঁরই কাছে আসছিলেন। যেহূ তাঁকে মঙ্গলবাদ করে বললেন, তোমার প্রতি আমার মন যেমন, তেমনি কি তোমার মন সরল? যিহোনাদব বললেন, সরল। যদি তা হয়, তবে তোমার হাত বাড়িয়ে দাও। পরে তিনি তাঁর হাত বাড়িয়ে দিলে যেহূ তাঁকে নিজের কাছে রথে চড়ালেন।
16 আর তিনি বললেন, আমার সঙ্গে চল, মাবুদের জন্য আমার যে গভীর আগ্রহ, তা দেখ; এভাবে তাঁকে তাঁর রথে চড়িয়ে নেওয়া হল।
17 পরে সামেরিয়ায় উপস্থিত হলে যেহূ সামেরিয়ায় আহাবের অবশিষ্ট সমস্ত লোককে হত্যা করলেন, যে পর্যন্ত না আহাব-কুলকে একেবারে বিনষ্ট করলেন; মাবুদ ইলিয়াসকে যে কথা বলেছিলেন সেই অনুসারেই করলেন।
18 পরে যেহূ সমস্ত লোককে একত্র করে তাদের বললেন, আহাব বালের অল্পই সেবা করতেন, কিন্তু যেহূ তার বেশি সেবা করবে।
19 অতএব এখন তোমরা বালের সমস্ত নবী, তার সমস্ত পূজক ও সমস্ত ইমামকে আমার কাছে ডেকে আন, কেউই অনুপস্থিত যেন না থাকে; কেননা বালের উদ্দেশে আমাকে মহাযজ্ঞ করতে হবে; যে অনুপস্থিত থাকবে, সে বাঁচবে না। কিন্তু যেহূ বালের পূজকদেরকে বিনষ্ট করার উদ্দেশ্যে এই ছল করেছিলেন।
20 পরে যেহূ বললেন, বালের উদ্দেশে উৎসব-সভা আহ্বান কর। তারা উৎসব ঘোষণা করে দিল।
21 আর যেহূ ইসরাইলের সর্বত্র লোক পাঠালে বালের যত পূজক ছিল, সকলে এল, কেউ অনুপস্থিত রইলো না। পরে তারা বালের গৃহে প্রবেশ করলে গৃহের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত পরিপূর্ণ হল।
22 তখন তিনি বস্ত্রাগারের নেতাকে বললেন, বালের সমস্ত পূজকের জন্য পোশাক বের করে আন। তাতে সে তাদের জন্য পোশাক বের করে আনলো।
23 পরে যেহূ ও রেখবের পুত্র যিহোনাদব বালের মন্দিরে গেলেন; তিনি বালের পূজকদেরকে বললেন, তদন্ত করে দেখ, এখানে তোমাদের সঙ্গে বালের পূজক ছাড়া মাবুদের গোলামদের মধ্যে কেউ যেন না থাকে।
24 আর ওরা পশু কোরবানী ও পোড়ান-কোরবানী করতে ভিতরে গেল। এই দিকে যেহূ আশী জনকে বাইরে রেখে বলেছিলেন, ঐ যে লোকদেরকে আমি তোমাদের হাতে তুলে দিলাম, ওদের এক জনও যদি পালিয়ে বাঁচে, তবে যে তাকে ছেড়ে দেবে ওর প্রাণের জন্য তার প্রাণ যাবে।
25 পরে পোড়ানো-কোরবানীর কাজ শেষ হলে যেহূ ধাবক সেনাদের ও সেনানীদেরকে বললেন, ভিতরে যাও, ওদেরকে হত্যা কর, এক জনকেও বাইরে আসতে দিও না। তখন তারা তলোয়ারের আঘাতে তাদেরকে আঘাত করলো; পরে ধাবক সেনারা ও সেনানীরা তাদেরকে বাইরে ফেলে দিল; পরে তারা বাল-মন্দিরের পূরীতে গেল;
26 আর বালের মন্দির থেকে সমস্ত স্তম্ভ বের করে পুড়িয়ে ফেললো।
27 তারা বালের স্তম্ভটি ভেঙ্গে ফেললো এবং বালের মন্দির ভেঙ্গে সেখানে একটি পায়খানা প্রস্তুত করলো, তা আজও আছে।
28 এভাবে যেহূ ইসরাইলের মধ্য থেকে বালকে উচ্ছিন্ন করলেন।
29 তবুও নবাটের পুত্র যে ইয়ারাবিম ইসরাইলকে গুনাহ্ করিয়েছিলেন, তাঁর গুনাহ্বস্তুর অর্থাৎ বেথেলে ও দানে অবস্থিত সোনার দুটি বাছুরের পিছনে চলা থেকে যেহূ ফিরলেন না।
30 আর মাবুদ যেহূকে বললেন, আমার দৃষ্টিতে যা ন্যায্য, তা করে তুমি ভাল কাজ করেছ এবং আমার মনে যা যা ছিল, আহাব-কুলের প্রতি সমস্তই করেছ, এজন্য চতুর্থ পুরুষ পর্যন্ত তোমার বংশ ইসরাইলের সিংহাসনে বসবে।
31 তবুও যেহূ সর্বান্তঃকরণে ইসরাইলের আল্লাহ্ মাবুদের শরীয়ত অনুসারে চলবার জন্য সতর্ক হলেন না; ইয়ারাবিম যেসব গুনাহ্ দ্বারা ইসরাইলকে গুনাহ্ করিয়েছিলেন, তাঁর সেসব গুনাহ্ থেকে তিনি ফিরলেন না।
32 ঐ সময়ে মাবুদ ইসরাইলকে খর্ব করতে লাগলেন; বাস্তবিক হসায়েল ইসরাইলের এ সব অঞ্চলে তাদেরকে আক্রমণ করলেন;
33 জর্ডানের পূর্ব দিকে সমস্ত গিলিয়দ দেশে, অর্ণোন উপত্যকার নিকটস্থ অরোয়ের থেকে গাদীয়, রূবেণীয় ও মানশাদের দেশ, অর্থাৎ গিলিয়দ ও বাশন।
34 যেহূর অবশিষ্ট কাজের বৃত্তান্ত, সমস্ত কাজের বিবরণ ও তাঁর সমস্ত বিক্রমের কথা কি ইসরাইলের বাদশাহ্দের ইতিহাস-পুস্তকে কি লেখা নেই?
35 পরে যেহূ তাঁর পূর্বপুরুষদের সঙ্গে নিদ্রাগত হলেন, আর সামেরিয়াতে তাঁকে দাফন করা হল; পরে তাঁর পুত্র যিহোয়াহস তাঁর পদে বাদশাহ্ হলেন।
36 যেহূ আটাশ বছর সামেরিয়াতে ইসরাইলের উপরে রাজত্ব করেছিলেন।