1 সিরিয়া দেশের বাদশাহ্ বিন্হদদ তাঁর সমস্ত সৈন্য জমায়েত করলেন। তিনি বত্রিশজন বাদশাহ্ ও অনেক ঘোড়া আর রথ সংগে নিয়ে সামেরিয়া আক্রমণ করবার জন্য ঘেরাও করলেন।
2 তিনি কয়েকজন লোককে শহরে পাঠিয়ে ইসরাইলের বাদশাহ্ আহাবকে এই কথা জানালেন, “বিন্হদদ বলছেন,
3 ‘আপনার সোনা ও রূপা আমার, আর আপনার সুন্দরী সুন্দরী স্ত্রী ও ছেলেমেয়েরাও আমার।’ ”
4 জবাবে ইসরাইলের বাদশাহ্ বললেন, “আমি বলছি, আমার প্রভু মহারাজ, আপনি যা বলেছেন তা ঠিক। আমি এবং আমার সব কিছুই আপনার।”
5 পরে সেই লোকেরা আহাবের কাছে আবার ফিরে এসে বলল, “বিন্হদদ বলছেন, ‘আপনার সোনা-রূপা, স্ত্রীদের ও ছেলেমেয়েদের যে আমাকে দিতে হবে সেই দাবি জানাতে আমি লোক পাঠিয়ে দিয়েছিলাম।
6 কিন্তু আগামী কাল এই সময়ে আমার কর্মচারীদের আমি পাঠিয়ে দেব। তারা আপনার রাজবাড়ী ও আপনার কর্মচারীদের বাড়ীতে তল্লাশী চালাবে এবং যে সমস্ত জিনিস আপনার চোখে মূল্যবান তা সবই নিয়ে আসবে।’ ”
7 তখন ইসরাইলের বাদশাহ্ দেশের সমস্ত বৃদ্ধ নেতাদের ডেকে বললেন, “দেখুন, এই লোকটি অনিষ্ট করবার চেষ্টা করছে, কারণ সে যখন আমার স্ত্রীদের ও ছেলেমেয়েদের এবং সোনা-রূপা দিয়ে দেবার দাবি জানিয়েছে তখন আমি তা দিতে অস্বীকার করি নি।”
8 জবাবে বৃদ্ধ নেতারা এবং সমস্ত লোকেরা বলল, “ওর কথা শুনবেন না কিংবা ওর দাবিও মেনে নেবেন না।”
9 কাজেই আহাব বিন্হদদের লোকদের বললেন, “আমার প্রভু মহারাজকে বলবে যে, তাঁর প্রথম দাবি অনুসারে আমি সবই করব, কিন্তু দ্বিতীয় দাবি আমি পূরণ করতে পারব না।” লোকেরা তখন সেই জবাব নিয়ে বিন্হদদের কাছে চলে গেল।
10 বিন্হদদ তখন আহাবের কাছে এই সংবাদ পাঠালেন, “আমার সব লোকদের এক এক মুঠো করে দেবার মত ধুলাও যদি সামেরিয়াতে থেকে যায় তাহলে দেবতারা যেন আমাকে শাস্তি দেন আর তা ভীষণভাবেই দেন।”
11 জবাবে ইসরাইলের বাদশাহ্ বললেন, “তাঁকে বলবে, ‘যে লোক তলোয়ার নিয়ে এখনও যুদ্ধে নামে নি সে যেন যুদ্ধে জয়ী হয়ে ফিরে আসা লোকের মত বড়াই না করে।’ ”
12 বিন্হদদের কাছে এই খবর গিয়ে যখন পৌঁছাল তখন তিনি ও অন্যান্য বাদশাহ্রা তাঁদের তাম্বুতে মদানো রস খাচ্ছিলেন। তিনি তাঁর লোকদের হুকুম দিলেন, “আক্রমণের জন্য তোমরা তৈরী হও।” কাজেই তারা শহরটা আক্রমণ করবার জন্য তৈরী হল।
13 এর মধ্যে ইসরাইলের বাদশাহ্ আহাবের কাছে একজন নবী এসে এই কথা ঘোষণা করলেন, “মাবুদ বলছেন, ‘তুমি মস্ত বড় ঐ সৈন্যদলটা দেখতে পাচ্ছ কি? আজই আমি ওদের তোমার হাতে তুলে দেব আর তখন তুমি জানতে পারবে যে, আমিই মাবুদ।’ ”
14 আহাব জিজ্ঞাসা করলেন, “কিন্তু কাকে দিয়ে তিনি তা করাবেন?”নবী জবাবে বললেন, “মাবুদ বলছেন যে, বিভিন্ন এলাকার শাসনকর্তাদের অধীনে যে যুবক সৈন্যেরা আছে তারাই তা করবে।”আহাব জিজ্ঞাসা করলেন, “যুদ্ধটা শুরু করবে কে?”জবাবে নবী বললেন, “আপনিই করবেন।”
15 আহাব এই কথা শুনে বিভিন্ন এলাকার শাসনকর্তাদের অধীন যুবক সৈন্যদের জমায়েত করলেন। তাতে তারা মোট দু’শো বত্রিশজন হল। তারপর তিনি সব ইসরাইলীয় সৈন্যদের একত্র করলে পর সাত হাজার সৈন্য হল।
16-17 তারা দুপুর বেলায় বেরিয়ে পড়ল। বিভিন্ন এলাকার শাসনকর্তাদের সেই যুবক সৈন্যেরা প্রথমে রওনা হল।এদিকে বিন্হদদ ও তাঁর সংগে যুক্ত বত্রিশজন বাদশাহ্ তাদের তাম্বুর মধ্যে মাতাল হবার পরেও মদানো রস খাচ্ছিলেন। সেই সময় বিন্হদদ খোঁজ নেবার জন্য লোক পাঠিয়ে দিলে তারা তাঁকে খবর দিল, “সামেরিয়া থেকে লোকেরা এগিয়ে এসেছে।”
18 তিনি বললেন, “তারা সন্ধির জন্য এসে থাকলে তাদের জীবন্ত ধরবে, আবার যুদ্ধের জন্য এসে থাকলেও তাদের জীবন্ত ধরবে।”
19 এর মধ্যে সেই যুবক সৈন্যেরা তাদের পিছনে থাকা সৈন্যদল নিয়ে আক্রমণ করতে শুরু করল।
20 তারা প্রত্যেকে তাদের বাধাদানকারীকে হত্যা করল। তা দেখে সিরীয়রা পালিয়ে গেল আর ইসরাইলীয়রা তাদের পিছনে তাড়া করল। কিন্তু সিরিয়ার বাদশাহ্ বিন্হদদ তাঁর কয়েকজন ঘোড়সওয়ারকে সংগে নিয়ে ঘোড়ার পিঠে করে পালিয়ে গেলেন।
21 ইসরাইলের বাদশাহ্ এগিয়ে গিয়ে বাকী ঘোড়া ও রথ সব ধ্বংস করে দিলেন এবং সিরীয়দের খুব ক্ষতি করলেন।
22 পরে ঐ নবী ইসরাইলের বাদশাহ্র কাছে এসে বললেন, “আপনার শক্তি বাড়ান এবং কি করতে হবে তা ভেবে দেখুন, কারণ আগামী বসন্তকালে সিরিয়ার বাদশাহ্ আপনাকে আবার আক্রমণ করবেন।”
23 এর মধ্যে সিরিয়ার বাদশাহ্র কর্মচারীরা তাঁকে এই পরামর্শ দিল, “ওদের দেবতাগুলো পাহাড়ের দেবতা, তাই আমাদের চেয়ে ওরা বেশী শক্তিশালী। কিন্তু আমরা যদি সমভূমিতে ওদের সংগে যুদ্ধ করি তবে নিশ্চয়ই আমরা ওদের চেয়ে শক্তিশালী হব।
24 আপনি এক কাজ করুন। বাদশাহ্দের সরিয়ে দিয়ে তাদের জায়গায় সেনাপতিদের নিযুক্ত করুন।
25 তাছাড়া যে সৈন্যদল আপনি হারিয়েছেন ঠিক সেই রকম আর একটা সৈন্যদল আপনাকে গড়ে তুলতে হবে, ঘোড়ার বদলে ঘোড়া এবং রথের বদলে রথ। তাহলে আমরা সমভূমিতে ইসরাইলের সংগে যুদ্ধ করতে পারব। তখন নিশ্চয়ই আমরা তাদের চেয়ে শক্তিশালী হব।” তিনি তাদের কথায় রাজী হয়ে সেইমতই কাজ করলেন।
26 পরের বছর বসন্তকালে বিন্হদদ সিরীয়দের জমায়েত করে নিয়ে ইসরাইলের সংগে যুদ্ধ করবার জন্য অফেকে গেলেন।
27 এদিকে বনি-ইসরাইলদের জমায়েত করা হল। তাদের খাবার-দাবার যোগান দেবার ব্যবস্থা করা হলে পর তারাও সিরীয়দের সংগে যুদ্ধ করবার জন্য বেরিয়ে গেল। বনি-ইসরাইলরা সিরীয়দের সামনের দিকে তাদের ছাউনি ফেলল। তাদের দেখে মনে হচ্ছিল ছোট দু’টা ছাগলের পাল, আর এদিকে সিরীয়রা গোটা দেশটা জুড়ে রইল।
28 তখন আল্লাহ্র একজন বান্দা এসে ইসরাইলের বাদশাহ্কে বললেন, “আল্লাহ্ এই কথা বলছেন, ‘সিরীয়রা মনে করছে আল্লাহ্ পাহাড়ের মাবুদ, উপত্যকার মাবুদ নন; সেইজন্য আমি এই বিরাট সৈন্যদলকে তোমার হাতে তুলে দেব, আর এতে তোমরা জানতে পারবে যে, আমিই আল্লাহ্।’ ”
29 সাত দিন পর্যন্ত তারা একে অন্যের সামনাসামনি ছাউনি ফেলে রইল। তারপর সপ্তম দিনে যুদ্ধ শুরু হয়ে গেল। বনি-ইসরাইলরা এক দিনেই এক লক্ষ সিরীয় পদাতিক সৈন্য হত্যা করল।
30 বাদবাকী সৈন্যেরা অফেকে পালিয়ে গেল আর সেখানে তাদের সাতাশ হাজার সৈন্যের উপরে দেয়াল ধ্বসে পড়ল। বিন্হদদ সেখানে পালিয়ে গিয়ে বাড়ীর ভিতরের একটা কামরায় লুকিয়ে রইলেন।
31 বিন্হদদের কর্মচারীরা তাঁকে বলল, “দেখুন, আমরা শুনেছি যে, ইসরাইলের বাদশাহ্রা দয়ালু। চলুন, আমরা কোমরে চট পরে আর মাথায় দড়ির বিড়া বেঁধে ইসরাইলের বাদশাহ্র কাছে যাই। হয়তো তিনি আপনার প্রাণ রক্ষা করবেন।”
32 তাঁরা কোমরে চট পরে ও মাথায় দড়ির বিড়া বেঁধে ইসরাইলের বাদশাহ্র কাছে গিয়ে বললেন, “আপনার গোলাম বিন্হদদ বলছেন যে, আপনি যেন দয়া করে তাঁকে বাঁচিয়ে রাখেন।”জবাবে বাদশাহ্ বললেন, “তিনি কি এখনও জীবিত আছেন? তিনি আমার ভাই।”
33 সেই লোকেরা এটাকে ভাল লক্ষণ মনে করে তাড়াতাড়ি করে তাঁর কথা ধরে বলল, “জ্বী, বিন্হদদ নিশ্চয়ই আপনার ভাই।”বাদশাহ্ বললেন, “আপনারা গিয়ে তাঁকে নিয়ে আসুন।” বিন্হদদ বের হয়ে আসলে পর আহাব তাঁকে তাঁর রথে তুলে নিলেন।
34 বিন্হদদ বললেন, “আপনার বাবার কাছ থেকে আমার বাবা যে সব গ্রাম নিয়ে নিয়েছেন আমি সেগুলো আপনাকে ফিরিয়ে দেব। আমার পিতা যেমন সামেরিয়াতে বাজার বসিয়েছিলেন তেমনি আপনিও দামেস্কের বিভিন্ন জায়গায় বাজার বসাতে পারবেন।”আহাব বললেন, “একটা সন্ধি করে আপনাকে আমি ছেড়ে দেব।” এই বলে তিনি বিন্হদদের সংগে একটা সন্ধি করে তাঁকে ছেড়ে দিলেন।
35 মাবুদের হুকুমে শাগরেদ-নবীদের মধ্যে একজন তাঁর সংগীকে বললেন, “দয়া করে আমাকে আঘাত কর।” লোকটি তাতে রাজী হল না।
36 তখন সেই নবী বললেন, “তুমি মাবুদের কথার বাধ্য হলে না বলে আমাকে ছেড়ে যাওয়ার সংগে সংগেই একটা সিংহ তোমাকে হত্যা করবে।” লোকটি চলে যাওয়ার পরেই একটা সিংহ তাকে দেখতে পেয়ে হত্যা করল।
37 সেই নবী আর একজন লোককে দেখতে পেয়ে তাকে বললেন, “দয়া করে আমাকে আঘাত কর।” লোকটি তাঁকে আঘাত করে ক্ষত করল।
38 তারপর সেই নবী রাস্তার পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে বাদশাহ্র জন্য অপেক্ষা করতে লাগলেন। তিনি তাঁর মাথায় কাপড় বেঁধে তা চোখের উপরে নামিয়ে এনে নিজের পরিচয় গোপন করলেন।
39 বাদশাহ্ ঐ পথে যাওয়ার সময় সেই নবী তাঁকে ডেকে বললেন, “আপনার গোলাম আমি যুদ্ধের মাঝখানে গিয়েছিলাম। তখন একজন লোক একজন বন্দীকে আমার কাছে এনে বলল, ‘এই লোকটাকে পাহারা দিয়ে রাখ। যদি সে হারিয়ে যায় তবে তার প্রাণের বদলে তোমার প্রাণ নেওয়া হবে, আর তা না হলে ঊনচল্লিশ কেজি রূপা জরিমানা দিতে হবে।’
40 কিন্তু আপনার গোলাম যখন কাজে ব্যস্ত ছিল তখন সে কোথায় চলে গেছে।”তখন ইসরাইলের বাদশাহ্ বললেন, “ঐ শাস্তিই তোমার হবে। তুমি নিজের মুখেই তা বলেছ।”
41 তখন সেই নবী তাড়াতাড়ি চোখের উপর থেকে মাথার কাপড়টা সরিয়ে ফেললেন আর ইসরাইলের বাদশাহ্ তাঁকে নবীদের একজন বলে চিনতে পারলেন।
42 সেই নবী বাদশাহ্কে বললেন, “মাবুদ এই কথা বলছেন, ‘আমি যাকে ধ্বংসের বদদোয়ার অধীন করেছিলাম তুমি তাকে ছেড়ে দিয়েছ। কাজেই তার প্রাণের বদলে তোমার প্রাণ আর তার লোকদের বদলে তোমার লোকদের প্রাণ যাবে।’ ”
43 এতে ইসরাইলের বাদশাহ্ মুখ কালো করে ও বিরক্ত হয়ে সামেরিয়ায় তাঁর রাজবাড়ীতে চলে গেলেন।