1 পরে তিনি দর্বীতে ও লুস্ত্রায় উপস্থিত হলেন। আর দেখ, সেখানে তীমথি নামে এক জন সাহাবী ছিলেন; তিনি এক জন ঈমানদার ইহুদী মহিলার পুত্র, কিন্তু তার ছিলেন পিতা গ্রীক;
2 লুস্ত্রা ও ইকনীয়-নিবাসী ভাইয়েরা তাঁর পক্ষে সাক্ষ্য দিত।
3 পৌলের ইচ্ছা হল, যেন সেই ব্যক্তি তাঁর সঙ্গে গমন করেন; আর তিনি ঐ সমস্ত স্থানেও ইহুদীদের জন্য তাঁকে নিয়ে তাঁর খৎনা করলেন; কেননা তাঁর পিতা যে গ্রীক, তা সকলে জানতো।
4 আর তাঁরা নগরে নগরে ভ্রমণ করতে করতে জেরুশালেমের প্রেরিতদের ও প্রাচীনদের নির্ধারিত নিয়মাবলি পালন করতে ভাইদের হাতে অর্পণ করলেন।
5 এভাবে মণ্ডলীগুলো ঈমানে শক্তিশালী হতে থাকলো এবং দিন দিন সংখ্যায় বৃদ্ধি পেল।
6 তাঁরা ফরুগিয়া ও গালাতিয়া প্রদেশ দিয়ে গমন করলেন, কেননা এশিয়া প্রদেশে কালাম তবলিগ করতে পাক-রূহ্কর্তৃক নিবৃত্ত হয়েছিলেন।
7 আর তাঁরা মুশিয়া দেশের কাছে উপস্থিত হয়ে বিথুনিয়ায় যেতে চেষ্টা করলেন, কিন্তু ঈসার রূহ্ তাঁদেরকে যেতে দিলেন না।
8 তখন তারা মুশিয়া দেশ ছেড়ে ত্রোয়াতে চলে গেলেন।
9 আর রাতের বেলায় পৌল একটি দর্শন পেলেন; ম্যাসিডোনিয়ার এক জন পুরুষ দাঁড়িয়ে বিনতিপূর্বক তাঁকে বলছে, পার হয়ে ম্যাসিডোনিয়াতে এসে আমাদের উপকার করুন।
10 তিনি সেই দর্শন পেলে আমরা অবিলম্বে ম্যাসিডোনিয়া দেশে যেতে চেষ্টা করলাম, কারণ বুঝলাম, সেখানকার লোকদের কাছে সুসমাচার তবলিগ করতে আল্লাহ্ আমাদেরকে ডেকেছেন।
11 আমরা ত্রোয়া থেকে যাত্রা করে সোজা পথে সামথ্রীতে এবং তার পরদিন নিয়াপলিতে উপস্থিত হলাম।
12 সেখান থেকে ফিলিপীতে গেলাম; সেটি ম্যাসিডোনিয়ার ঐ বিভাগের প্রধান নগর, রোমীয় উপনিবেশ। সেই নগরে আমরা কয়েক দিন অবস্থিতি করলাম।
13 আর বিশ্রামবারে নগর-দ্বারের বাইরে নদীতীরে গেলাম, মনে করলাম, সেখানে মুনাজাতের স্থান আছে; আর আমরা বসে সমাগত স্ত্রীলোকদের কাছে কথা বলতে লাগলাম।
14 আর সেই স্থানে থুয়াতীরা নগরের লুদিয়া নাম্নী এক জন আল্লাহ্-ভক্ত স্ত্রীলোক আমাদের কথা শুনছিলেন। তিনি বেগুনিয়া কাপড় বিক্রি করতেন, আর প্রভু তাঁর হৃদয় খুলে দিলেন, যেন তিনি পৌলের কথায় মনোযোগ দেন।
15 তিনি ও তাঁর পরিবার বাপ্তিস্ম নিলে পর তিনি ফরিয়াদ করে বললেন, আপনারা যদি আমাকে প্রভুতে ঈমানদার বলে বিবেচনা করে থাকেন, তবে আমার বাড়িতে এসে থাকুন। আর তিনি আমাদেরকে সাধ্যসাধনা করে নিয়ে গেলেন।
16 একদিন আমরা সেই মুনাজাতের স্থানে যাচ্ছিলাম, এমন সময়ে দৈবজ্ঞ রূহ্বিশিষ্টা এক জন বাঁদীর সঙ্গে আমাদের দেখা হল। সে ভবিষ্যতের কথা বলতে পারতো এবং তাতে তার কর্তাদের বিস্তর লাভ হত।
17 সে পৌলের এবং আমাদের পিছনে যেতে যেতে চেঁচিয়ে বলতে লাগল, এই ব্যক্তিরা সর্বশক্তিমানের গোলাম, এঁরা তোমাদেরকে নাজাতের পথ জানাচ্ছেন।
18 সে অনেক দিন পর্যন্ত এরকম করতে থাকলো। কিন্তু পৌল বিরক্ত হয়ে মুখ ফিরিয়ে সেই রূহ্কে বললেন, আমি ঈসা মসীহের নামে তোমাকে হুকুম দিচ্ছি, এর মধ্য থেকে বের হয়ে যাও; তাতে সেই মুহূর্তেই সে বের হয়ে গেল।
19 কিন্তু তার কর্তারা, লাভের আশা চলে গেল দেখে পৌলকে ও সীলকে ধরে শহর-চকে নেতাদের সম্মুখে টেনে নিয়ে গেল।
20 তারা নেতাদের কাছে তাঁদেরকে এনে বললো, এই ব্যক্তিরা আমাদের নগর অতিশয় অস্থির করে তুলছে; এরা ইহুদী;
21 আর আমরা রোমীয়, আমাদের যেরকম রীতিনীতি গ্রহণ বা পালন করতে নেই, এরা তা-ই তবলিগ করছে।
22 তাতে লোকেরা তাঁদের বিরুদ্ধে উঠলো এবং শাসনকর্তারা তাঁদের কাপড় খুলে ফেলে দিলেন ও বেত্রাঘাত করতে হুকুম দিলেন,
23 এবং তাঁদেরকে বিস্তর প্রহার করা হলে পর কারাগারে নিক্ষেপ করলেন এবং সাবধানে প্রহরা দিতে কারারক্ষককে হুকুম দিলেন।
24 এই রকম হুকুম পেয়ে সে তাঁদেরকে নিয়ে কারাগারের ভিতরের ঘরে নিয়ে গেল এবং হাড়িকাঠ দিয়ে তাঁদের পা আট্কে রাখলো।
25 কিন্তু মাঝ রাতে পৌল ও সীল আল্লাহ্র উদ্দেশে মুনাজাত এবং প্রশংসা-কাওয়ালী করছিলেন এবং বন্দীরা তাঁদের গান কান পেতে শুনছিল।
26 তখন হঠাৎ মহা ভূমিকমপ হল, এমন কি, কারাগারের ভিত্তিমূল কেঁপে উঠলো; আর অমনি সমস্ত দ্বার খুলে গেল ও সকলের বন্ধন মুক্ত হল।
27 তাতে কারারক্ষক ঘুম থেকে জেগে উঠলো এবং কারাগারের দ্বারগুলো খুলে গেছে দেখে, তলোয়ার কোষমুক্ত করে আত্মহত্যা করতে উদ্যত হল; কারণ সে মনে করেছিল বন্দীরা পালিয়ে গেছে।
28 কিন্তু পৌল চিৎকার করে ডেকে বললেন, ওহে, নিজের ক্ষতি করো না, কেননা আমরা সকলেই এই স্থানে আছি।
29 তখন সে আলো আনতে বলে ভিতরে দৌড়ে গেল এবং ভীষণ ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে পৌলের ও সীলের সম্মুখে পড়লো।
30 আর সে তাঁদেরকে বাইরে এনে বললো, হুজুরগণ, নাজাত পাবার জন্য আমাকে কি করতে হবে?
31 তাঁরা বললেন, তুমি ও তোমার পরিবার ঈসা মসীহের উপর ঈমান আন, তাতে নাজাত পাবে।
32 পরে তাঁরা তাকে এবং তার বাড়িতে উপস্থিত সমস্ত লোককে আল্লাহ্র কালাম বললেন।
33 আর রাতের সেই দণ্ডেই সে তাঁদেরকে নিয়ে তাঁদের প্রহারের ক্ষতগুলো ধুয়ে দিল এবং সে নিজে ও তার সকল লোক অবিলম্বে বাপ্তিস্ম গ্রহণ করলো।
34 পরে সে তাঁদেরকে উপরে ঘরে নিয়ে গিয়ে তাঁদের সম্মুখে খাদ্যদ্রব্য রাখল এবং সমস্ত পরিবারের সঙ্গে আল্লাহ্র উপরে ঈমান আনতে পেরে অতিশয় আনন্দিত হল।
35 দিন হলে শাসনকর্তারা বেত্রধরদের দ্বারা বলে পাঠালেন, সেই লোকদেরকে ছেড়ে দাও।
36 তাতে কারারক্ষক পৌলকে এই সংবাদ দিল যে, নেতৃবর্গ আপনাদেরকে ছেড়ে দিতে বলে পাঠিয়েছেন, অতএব আপনারা এখন বের হয়ে শান্তিতে প্রস্থান করুন।
37 কিন্তু পৌল তাদেরকে বললেন, তাঁরা আমাদেরকে বিচারে দোষী না করে সর্বসাধারণের সাক্ষাতে প্রহার করিয়ে কারাগারে নিক্ষেপ করেছেন, আমরা তো রোমীয় নাগরিক, এখন কি গোপনে আমাদেরকে বের করে দিচ্ছেন? তা হবে না; তারা নিজে এসে আমাদেরকে বাইরে নিয়ে যান।
38 তখন বেত্রধরেরা নেতাদেরকে এই সংবাদ দিল। তাতে তাঁরা যে রোমীয় নাগরিক, এই কথা শুনে নেতৃবর্গ ভয় পেলেন,
39 এবং এসে তাঁদেরকে ফরিয়াদ জানালেন, আর বাইরে নিয়ে গিয়ে নগর থেকে প্রস্থান করতে অনুরোধ করলেন।
40 তখন তাঁরা কারাগার থেকে বের হয়ে লুদিয়ার বাড়িতে গেলেন। আর সেখানে ভাইদের সঙ্গে তাঁদের দেখা হলে তাঁদেরকে উৎসাহ দিলেন; পরে সেখান থেকে চলে গেলেন।