1 এদিকে শৌল তখনও প্রভুর সাহাবীদের হত্যা করবেন বলে ভয় দেখাচ্ছিলেন।
2 তিনি মহা-ইমামের কাছে গিয়ে, দামেস্ক শহরের মজলিস-খানাগুলোতে দেবার জন্য পত্র চাইলেন, যেন যারা ‘সেই পথে’ চলে এমন পুরুষ হোক বা স্ত্রী হোক যে সমস্ত লোককে পান, তাদেরকে বেঁধে জেরুশালেমে আনতে পারেন।
3 পরে তিনি যেতে যেতে দামেস্কের কাছ উপস্থিত হলেন, তখন হঠাৎ আসমান থেকে আলো তাঁর চারদিকে চমকে উঠলো।
4 তাতে তিনি ভূমিতে পড়ে শুনতে পেলেন, তাঁর প্রতি এই বাণী হচ্ছে, শৌল শৌল, কেন আমাকে নির্যাতন করছো?
5 তিনি বললেন, প্রভু আপনি কে? প্রভু বললেন, আমি ঈসা যাঁকে তুমি নির্যাতন করছো;
6 কিন্তু উঠ, নগরে প্রবেশ কর, তোমাকে কি করতে হবে, তা বলা যাবে।
7 আর তাঁর সহপথিকেরা অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো, তারা ঐ বাণী শুনল বটে, কিন্তু কাউকেও দেখতে পেল না।
8 পরে শৌল ভূমি থেকে উঠলেন, কিন্তু চোখ মেললে পর কিছুই দেখতে পেলেন না; আর তারা তাঁর হাত ধরে তাঁকে দামেস্কে নিয়ে গেল।
9 আর তিন দিন পর্যন্ত তিনি চোখে কিছু দেখতে পেলেন না এবং কিছুই ভোজন বা পান করলেন না।
10 দামেস্কে অননিয় নামে এক জন সাহাবী ছিলেন।
11 প্রভু তাঁকে দর্শনযোগে বললেন, অননিয়। তিনি বললেন, প্রভু, দেখুন, এই আমি। তখন প্রভু তাঁকে বললেন, তুমি উঠে সরল নামক পথে গিয়ে এহুদার বাড়িতে তার্ষ নগরীর শৌল নামক ব্যক্তির খোঁজ কর।
12 আর দেখ, সে মুনাজাত করছে এবং সে দেখেছে, অননিয় নামে এক ব্যক্তি এসে তার উপরে হাত রাখছে, যেন সে দৃষ্টি ফিরে পায়।
13 অননিয় জবাবে বললেন, প্রভু, আমি অনেকের কাছে এই ব্যক্তির বিষয় শুনেছি, সে জেরুশালেমে তোমার পবিত্র লোকদের প্রতি কত উপদ্রব করেছে;
14 এই স্থানেও যত লোক তোমার নামে ডাকে, তাদের সকলকে বন্দী করার ক্ষমতা সে প্রধান ইমামদের কাছ থেকে পেয়েছে।
15 কিন্তু প্রভু তাঁকে বললেন, তুমি যাও, কেননা জাতিদের ও বাদশাহ্দের এবং বনি-ইসরাইলদের কাছে আমার নাম বহন করার জন্য আমি তাকে মনোনীত করেছি।
16 আমার নামের জন্য তাকে কত কষ্ট ভোগ করতে হবে তা আমি তাকে দেখাবো।
17 তখন অননিয় চলে গিয়ে সেই বাড়িতে প্রবেশ করলেন এবং তাঁর উপরে হাত রেখে বললেন, ভাই শৌল, যিনি তোমার আসার পথে তোমাকে দর্শন দিলেন, তিনি প্রভু ঈসা। তিনি আমাকে প্রেরণ করেছেন, যেন তুমি দৃষ্টি পাও এবং পাক-রূহে পরিপূর্ণ হও।
18 আর অমনি তাঁর চোখ থেকে যেন আঁশ পড়ে গেল, তিনি দৃষ্টি ফিরে পেলেন এবং উঠে বাপ্তিস্ম নিলেন।
19 পরে আহার করে শক্তি লাভ করলেন।
20 আর তিনি কয়েক দিন দামেস্কের সাহাবীদের সঙ্গে থাকলেন এবং সময় নষ্ট না করে বিভিন্ন মজলিস-খানায় এই বলে তবলিগ করতে লাগলেন যে, ঈসা-ই আল্লাহ্র পুত্র।
21 আর যারা তাঁর কথা শুনতে পেল, তারা সকলে চমৎকৃত হয়ে বলতে লাগল, জেরুশালেমে যারা এই নামে ডাকে তাদেরকে যে ব্যক্তি উৎপাটন করতো, এ কি সেই ব্যক্তি নয়? এখানে যারা সেই পথে চলে তাদেরকে বন্দী করে প্রধান ইমামদের কাছে নিয়ে যাবার জন্যই কি সে এখানে আসে নি?
22 কিন্তু শৌল উত্তরোত্তর শক্তিমান হয়ে উঠলেন এবং ঈসা-ই যে মসীহ্ তা প্রমাণ করে দামেস্ক-নিবাসী ইহুদীদেরকে নিরুত্তর করতে লাগলেন।
23 এর কিছু দিন পরে ইহুদীরা তাঁকে হত্যা করার পরামর্শ করলো,
24 কিন্তু শৌল তাঁদের চক্রান্ত জানতে পারলেন। আর তারা যেন তাঁকে হত্যা করতে পারে, এজন্য নগর-ফটকগুলো দিনরাত পাহারা দিতে লাগল।
25 কিন্তু একদিন রাত্রে তাঁর সাগরেদেরা তাঁকে নিয়ে একটি ঝুড়িতে করে প্রাচীর দিয়ে নামিয়ে দিল।
26 পরে তিনি জেরুশালেমে উপস্থিত হয়ে সাহাবীদের সঙ্গে যোগ দিতে চেষ্টা করলেন, কিন্তু সকলে তাঁকে ভয় করতে লাগলো। তারা এই কথা বিশ্বাস করতে পারল না যে, তিনি সাহাবী হয়েছেন।
27 তখন বার্নাবাস তাঁর হাত ধরে প্রেরিতদের কাছে নিয়ে গেলেন এবং পথের মধ্যে তিনি কিভাবে প্রভুকে দেখতে পেয়েছেন ও প্রভু যে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন এবং কিভাবে তিনি দামেস্কে ঈসার নামে সাহসপূর্বক তবলিগ করেছেন, এসব তাঁদের কাছে বর্ণনা করলেন।
28 আর শৌল জেরুশালেমে তাঁদের সঙ্গে সঙ্গে থাকতেন, ভিতরে আসতেন ও বাইরে যেতেন, প্রভুর নামে সাহসপূর্বক তবলিগ করতেন।
29 তিনি গ্রীক ভাষাবাদী ইহুদীদের সঙ্গে কথাবার্তা ও তর্ক করতেন, কিন্তু তারা তাঁকে হত্যা করার জন্য চেষ্টা করতে লাগল।
30 ঈমানদার ভাইয়েরা এই কথা জানতে পেরে তাঁকে সিজারিয়াতে নিয়ে গেলেন এবং সেখান থেকে তার্ষ নগরে পাঠিয়ে দিলেন।
31 তখন এহুদিয়া, গালীল ও সামেরিয়ার সর্বত্র মণ্ডলী শান্তিভোগ করতে ও বৃদ্ধি পেতে লাগল এবং প্রভুর ভয়ে ও পাক-রূহের আশ্বাসে চলতে চলতে বহুসংখ্যক হয়ে উঠলো।
32 আর পিতর সকল স্থানে ভ্রমণ করতে করতে লুদ্দা-নিবাসী পবিত্র লোকদের কাছেও গেলেন।
33 সেই স্থানে তিনি ঐনিয় নামে এক ব্যক্তির দেখা পান যে পক্ষাঘাত রোগে আট বছর যাবৎ বিছানায় পড়ে ছিল।
34 পিতর তাকে বললেন, ঐনিয়, ঈসা মসীহ্ তোমাকে সুস্থ করলেন, উঠ, তোমার বিছানা তুলে নাও।
35 তাতে সে তৎক্ষণাৎ উঠলো। তখন লুদ্দা ও শারোণ-নিবাসী সমস্ত লোক তাকে দেখতে পেল এবং তারা প্রভুর প্রতি ফিরল।
36 আর যাফোতে টাবিথা নাম্নী এক মহিলা সাহাবী ছিলেন, অনুবাদ করলে এই নামের অর্থ দর্কা [হরিণী]; তিনি নানা সৎকর্ম ও দানকার্যে ব্যাপৃত ছিলেন।
37 ঘটনাক্রমে তিনি সেই সময়ে অসুস্থ হয়ে ইন্তেকাল করলেন। তাতে লোকেরা তাকে গোসল করিয়ে উপরের কুঠরিতে শুইয়ে রাখল।
38 আর লুদ্দা যাফোর নিকটবর্তী হওয়াতে, পিতর লুদ্দায় আছেন শুনে সাহাবীরা তাঁর কাছে দু’জন লোক পাঠিয়ে ফরিয়াদ করলো, আপনি আমাদের এখান পর্যন্ত আসতে বিলম্ব করবেন না।
39 তখন পিতর উঠে তাদের সঙ্গে চললেন। তিনি সেখানে উপস্থিত হলে তারা তাঁকে সেই উপরের কুঠরিতে নিয়ে গেল, আর বিধবারা সকলে তাঁর চারদিকে দাঁড়িয়ে কাঁদতে থাকল এবং দর্কা তাদের সঙ্গে থাকবার সময়ে যেসব জামা ও কাপড় প্রস্তুত করেছিলেন সেসব দেখাতে লাগল।
40 কিন্তু পিতর সকলকে বের করে দিয়ে হাঁটু পেতে মুনাজাত করলেন; পরে সেই দেহের দিকে ফিরে বললেন, টাবিথা, উঠ। তাতে তিনি চোখ মেললেন এবং পিতরকে দেখে উঠে বসলেন।
41 তখন পিতর হাত ধরে তাকে উঠালেন এবং পবিত্র লোকদেরকে ও বিধবাদেরকে ডেকে তাদের দেখালেন যে, দর্কা জীবিত হয়ে উঠেছেন।
42 এই কথা যাফোর সর্বত্র ছড়িয়ে পড়লো এবং অনেক লোক প্রভুতে ঈমান আনল।
43 আর পিতর অনেক দিন যাফোতে, শিমোন নামক এক জন চর্মকারের বাড়িতে অবস্থিতি করলেন।