1 আর পৌল মহাসভার দিকে একদৃষ্টে চেয়ে বললেন, হে ভাইয়েরা, আজ পর্যন্ত আমি সর্ব বিষয়ে সৎবিবেকে আল্লাহ্র সম্মুখে জীবন যাপন করে আসছি।
2 তখন মহা-ইমাম অননিয়, যারা কাছে দাঁড়িয়েছিল, তাঁদেরকে হুকুম দিলেন, যেন পৌলের মুখে আঘাত করে।
3 তখন পৌল তাঁকে বললেন, হে চুনকাম-করা প্রাচীর, আল্লাহ্ তোমাকে আঘাত করবেন; তুমি শরীয়ত অনুসারে আমার বিচার করতে বসেছ, আর শরীয়তের বিপরীতে আমাকে আঘাত করতে হুকুম দিচ্ছ?
4 তাতে যারা কাছে দাঁড়িয়েছিল, তারা বললো, তুমি কি আল্লাহ্র মহা-ইমামকে কটুবাক্য বলছো?
5 পৌল বললেন, হে ভাইয়েরা, আমি জানতাম না যে, উনি মহা-ইমাম; কেননা লেখা আছে, “তুমি স্বজাতীয় লোকদের নেতাকে দুর্বাক্য বলো না।”
6 কিন্তু পৌল যখন বুঝতে পারলেন যে, তাদের একাংশ সদ্দূকী ও একাংশ ফরীশী, তখন মহাসভার মধ্যে উচ্চৈঃস্বরে বললেন, হে ভাইয়েরা, আমি ফরীশী এবং ফরীশীদের সন্তান; মৃতদের প্রত্যাশা ও পুনরুত্থান সম্বন্ধে আমার বিচার হচ্ছে।
7 তিনি এই কথা বলতে না বলতে ফরীশী ও সদ্দূকীদের মধ্যে বিরোধ উৎপন্ন হল, সভার মধ্যে দুই দল হয়ে গেল।
8 কারণ সদ্দূকীরা বলে, পুনরুত্থান নেই, ফেরেশতা বা রূহ্ নেই; কিন্তু ফরীশীরা উভয়ই স্বীকার করে।
9 তখন মহাকোলাহল হল এবং ফরীশী পক্ষীয় আলেমদের মধ্যে কয়েক জন লোক উঠে দাঁড়িয়ে তর্ক করে বলতে লাগল, আমরা এই ব্যক্তির কোন দোষ দেখতে পাচ্ছি না; কোন রূহ্ কিংবা কোন ফেরেশতা যদি এর সঙ্গে কথা বলে থাকেন, তবে আমাদের কি?
10 এভাবে ভীষণ বিরোধ হলে, পাছে তারা পৌলকে খণ্ড খণ্ড করে ছিঁড়ে ফেলে, এই ভয়ে প্রধান সেনাপতি হুকুম দিলেন, সৈন্যদল নেমে গিয়ে তাদের মধ্য থেকে পৌলকে কেড়ে দুর্গে নিয়ে যাক।
11 সেই রাতে প্রভু পৌলের কাছ দাঁড়িয়ে বললেন, সাহস কর, কেননা আমার বিষয়ে যেমন জেরুশালেমে সাক্ষ্য দিয়েছ, তেমনি রোমেও দিতে হবে।
12 দিন হলে ইহুদীরা ষড়যন্ত্র করে নিজেদের একটি প্রতিজ্ঞায় আবদ্ধ করলো, বললো, আমরা যে পর্যন্ত পৌলকে হত্যা না করবো, সেই পর্যন্ত ভোজন বা পান করবো না।
13 চল্লিশ জনের বেশি লোক এক সঙ্গে শপথ করে এইভাবে চক্রান্ত করলো।
14 তারা প্রধান ইমামদের ও প্রাচীনদের কাছে গিয়ে বললো, আমরা এক মহা অভিশাপে নিজেদের আবদ্ধ করেছি, যে পর্যন্ত পৌলকে হত্যা না করবো, সেই পর্যন্ত কিছুরই স্বাদ গ্রহণ করবো না।
15 অতএব আপনারা এখন মহাসভার সঙ্গে প্রধান সেনাপতির কাছে এই আবেদন করুন, যেন তিনি আপনাদের কাছে তাকে নামিয়ে এনে দেন, বলুন যে, আপনারা আরও সূক্ষ্মভাবে তার বিষয়ে বিচার করতে উদ্যত হয়েছেন; আর সে কাছে উপস্থিত হবার আগেই আমরা তাকে হত্যা করতে প্রস্তুত রইলাম।
16 কিন্তু পৌলের ভাগ্নে তাদের এই চক্রান্তের কথা শুনতে পেয়ে চলে গিয়ে দুর্গমধ্যে প্রবেশ করে পৌলকে এসব কথা জানাল।
17 তাতে পৌল এক জন শতপতিকে কাছে ডেকে বললেন, প্রধান সেনাপতির কাছে এই যুবককে নিয়ে যান; কারণ তাঁর কাছে এর কিছু বলবার আছে।
18 তাতে তিনি তাকে সঙ্গে নিয়ে প্রধান সেনাপতির কাছে গিয়ে বললেন, বন্দী পৌল আমাকে কাছে ডেকে আপনার কাছে এই যুবককে আনতে নিবেদন করলো, কেননা আপনার কাছে এর কিছু বলবার আছে।
19 তখন প্রধান সেনাপতি তার হাত ধরে এক পাশে নিয়ে গিয়ে গোপনে জিজ্ঞাসা করলেন, আমার কাছে তোমার কি বলবার আছে?
20 সে বললো, ইহুদীরা আপনার কাছে এই নিবেদন করার পরামর্শ করেছে, যেন আপনি আগামীকাল আরও সূক্ষ্মভাবে পৌলের বিষয় অনুসন্ধান করার জন্য তাঁকে মহাসভার কাছে নিয়ে যান।
21 অতএব আপনি তাদের কথা গ্রাহ্য করবেন না। কেননা তাদের মধ্যে চল্লিশ জনের বেশি লোক তাঁর জন্য চক্রান্ত করেছে; তারা একটি অভিশাপে তাদেরকে আবদ্ধ করেছে, যে পর্যন্ত তাঁকে হত্যা না করবে সেই পর্যন্ত ভোজন বা পান করবে না, আর এখনই প্রস্তুত আছে, আপনার অনুমতির অপেক্ষা করছে।
22 তখন প্রধান সেনাপতি ঐ যুবককে এই হুকুম দিয়ে বিদায় করলেন, তুমি যে এসব আমাকে জানিয়েছ তা কাউকেও বলো না।
23 পরে তিনি দু’জন শতপতিকে কাছে ডেকে বলে দিলেন, সিজারিয়া পর্যন্ত যাবার জন্য রাত নয় ঘটিকার সময়ে দুই শত সৈন্য ও সত্তর জন ঘোড়সওয়ার এবং দুই শত বর্শাধারী লোক প্রস্তুত রেখো।
24 আর তিনি বাহন যোগাতে হুকুম করলেন, যেন তারা পৌলকে তার উপরে চড়িয়ে নিরাপদে শাসনকর্তা ফীলিক্সের কাছে পৌঁছে দেয়।
25 পরে তিনি এই মর্মে একখানি পত্র লিখলেন,
26 মহামহিম শাসনকর্তা ফীলিক্সের সমীপে ক্লৌদিয় লুষিয়ের মঙ্গলবাদ।
27 ইহুদীরা এই ব্যক্তিকে ধরে হত্যা করতে উদ্যত হলে আমি সেনাদের নিয়ে উপস্থিত হয়ে একে রক্ষা করলাম, কেননা জানতে পেলাম যে, এই ব্যক্তি এক জন রোমীয়।
28 পরে তারা কি কারণে এর উপরে দোষারোপ করছে, তা জানবার জন্য তাদের মহাসভাতে একে নামিয়ে নিয়ে গেলাম।
29 তাতে আমি বুঝলাম, তাদের শরীয়ত সম্বন্ধীয় কোন কোন বিষয় নিয়ে এর উপরে দোষারোপ হয়েছে, কিন্তু প্রাণদণ্ডের বা শিকলের যোগ্য কোন দোষের কারণে এর নামে অভিযোগ হয় নি।
30 আর এই ব্যক্তির বিরুদ্ধে চক্রান্ত হবে, এই সংবাদ পেয়ে আমি অবিলম্বেই আপনার কাছে একে পাঠিয়ে দিলাম। এর উপরে যারা দোষারোপ করেছে, তাদেরকেও হুকুম করলাম, তারা আপনার কাছে এর বিরুদ্ধে যা বলবার থাকে তা বলে।
31 পরে সৈন্যেরা যে হুকুম পেয়েছিল সেই অনুসারে পৌলকে নিয়ে রাতের বেলায় আন্তিপাত্রি নগর পর্যন্ত গেল।
32 পরদিন ঘোড়সওয়ারদেরকে তাঁর সঙ্গে যাবার জন্য রেখে তারা দুর্গে ফিরে আসল।
33 ওরা সিজারিয়াতে পৌঁছে শাসনকর্তার হাতে পত্রখানি দিয়ে পৌলকেও তাঁর কাছে উপস্থিত করলো।
34 তিনি পত্র পাঠ করে জিজ্ঞাসা করলেন, সে কোন্ প্রদেশের লোক? তখন তিনি কিলিকিয়া প্রদেশের লোক, এই কথা জানতে পেয়ে শাসনকর্তা বললেন, যারা তোমার উপরে দোষারোপ করেছে, তারা যখন আসবে, তখন তোমার কথা শুনবো। পরে তিনি হেরোদের রাজপ্রাসাদে তাঁকে রাখতে হুকুম দিলেন।