1-2 লেবি-গোষ্ঠীর যিষ্হরের ছেলে কোরহ এবং রূবেণ-গোষ্ঠীর ইলীয়াবের ছেলে দাথন ও অবীরাম আর পেলতের ছেলে ওন মোশির বিরুদ্ধে দাঁড়াল। কোরহ ছিল লেবির ছেলে কহাতের নাতি। এদের সংগে যোগ দিল দু’শো পঞ্চাশ জন ইস্রায়েলীয় যারা ছিল সমাজের নাম-করা বেছে নেওয়া নেতা।
3 তারা মোশি ও হারোণের বিরুদ্ধে দল বেঁধে এসে বলল, “আপনারা খুব বাড়াবাড়ি করছেন। গোটা ইস্রায়েলীয় সমাজের প্রত্যেকেই সদাপ্রভুর উদ্দেশ্যে আলাদা করা এবং সদাপ্রভুও তাদের সংগে আছেন। তবে আপনারা কেন সদাপ্রভুর লোকদের উপরে নিজেদের তুলে ধরেছেন?”
4 এই কথা শুনে মোশি মাটির উপর উবুড় হয়ে পড়লেন।
5 তিনি কোরহ ও তার দলের লোকদের বললেন, “কাল সকালেই সদাপ্রভু দেখিয়ে দেবেন কে তাঁর লোক এবং কে তাঁর উদ্দেশ্যে আলাদা করা। তিনিই সেই লোককে তাঁর সামনে যেতে দেবেন। যাকে তিনি বেছে নেবেন তাকে তিনি তাঁর সামনে যেতে দেবেন।
6-7 কোরহ, তুমি ও তোমার দলের লোকেরা একটা কাজ করবে। তোমরা ধূপদানি নিয়ে কালকে সদাপ্রভুর সামনে তার মধ্যে আগুন ও ধূপ দেবে। সদাপ্রভু যাকে বেছে নেবেন বুঝতে হবে সে-ই তাঁর উদ্দেশ্যে আলাদা করা লোক। তোমরা লেবীয়েরাই বেশী বাড়াবাড়ি করছ।”
8 মোশি কোরহকে আরও বললেন, “তোমরা লেবীয়েরা এখন আমার কথা শোন।
9 এটাই কি তোমাদের পক্ষে যথেষ্ট নয় যে, ইস্রায়েলীয়দের ঈশ্বর সমাজের অন্য লোকদের থেকে তোমাদের আলাদা করে নিজের কাছে নিয়ে এসেছেন যাতে তোমরা সদাপ্রভুর আবাস-তাম্বুর কাজ করতে পার এবং সমাজের লোকদের সেবা করবার জন্য তাদের সামনে দাঁড়াতে পার?
10 তিনি তোমাকে এবং অন্য সব লেবীয়দের নিজের কাছে নিয়ে এসেছেন, কিন্তু তোমরা এখন পুরোহিতের পদটাও দখল করে নিতে চাইছ।
11 তুমি ও তোমার দলের সব লোকেরা সদাপ্রভুর বিরুদ্ধেই দল পাকিয়েছ। হারোণ কে যে, তোমরা তার বিরুদ্ধে বক্বক্ করছ?”
12 এর পর মোশি ইলীয়াবের ছেলে দাথন ও অবীরামকে ডেকে পাঠালেন কিন্তু তারা বলে পাঠাল, “আমরা যাব না।
13 তুমি এই মরু-এলাকায় মেরে ফেলবার জন্যই এমন দেশ থেকে আমাদের বের করে এনেছ যেখানে দুধ, মধু আর কোন কিছুর অভাব ছিল না। এটাই কি যথেষ্ট নয়? তার উপর এখন আবার আমাদের কর্তা হতে চাইছ।
14 এছাড়া তুমি তো সেই রকম কোন দুধ আর মধুতে ভরা দেশে আমাদের নিয়ে যাও নি কিম্বা জমাজমি এবং আংগুর ক্ষেতের অধিকারও দাও নি। তুমি কি এই লোকদের অন্ধ করে রাখতে চাইছ? না, আমরা যাব না।”
15 এই কথা শুনে মোশি ভীষণ রেগে গিয়ে সদাপ্রভুকে বললেন, “তুমি ওদের উৎসর্গ গ্রহণ কোরো না। আমি ওদের কাছ থেকে একটা গাধা পর্যন্ত নিই নি আর ওদের কোন ক্ষতিও করি নি।”
16 তারপর মোশি কোরহকে বললেন, “কাল তোমাকে ও তোমার দলের সবাইকে সদাপ্রভুর সামনে উপস্থিত হতে হবে। তুমি ও তোমার দলের লোকদের এবং সেই সংগে হারোণকেও উপস্থিত হতে হবে।
17 প্রত্যেককে তার ধূপদানিতে ধূপ দিতে হবে; মোট দু’শো পঞ্চাশটা ধূপদানিতে ধূপ দিয়ে সদাপ্রভুর সামনে তা উৎসর্গ করতে হবে। তোমাকে এবং হারোণকেও ধূপদানিতে ধূপ উৎসর্গ করতে হবে।”
18 মোশির কথামত প্রত্যেকে নিজের নিজের ধূপদানিতে আগুন ও ধূপ নিয়ে মিলন-তাম্বুর দরজার সামনে মোশি ও হারোণের সংগে গিয়ে দাঁড়াল।
19 কোরহ যখন মোশি ও হারোণের বিরুদ্ধে সমাজের সমস্ত লোকদের জড়ো করে মিলন-তাম্বুর দরজার কাছে গিয়ে দাঁড়াল তখন তাদের সকলের সামনে সদাপ্রভুর মহিমা দেখা দিল।
20 সদাপ্রভু মোশি ও হারোণকে বললেন,
21 “তোমরা অন্য সমস্ত লোক থেকে আলাদা হয়ে যাও, যাতে আমি তাদের এই মুহূর্তে শেষ করে দিতে পারি।”
22 কিন্তু মোশি ও হারোণ মাটিতে উবুড় হয়ে পড়ে বললেন, “হে ঈশ্বর, তুমি সমস্ত মানুষের প্রাণদাতা। কেবল একজন মানুষ পাপ করেছে বলে কি তুমি গোটা ইস্রায়েলীয় সমাজের উপর তোমার ক্রোধ প্রকাশ করবে?”
23 তখন সদাপ্রভু মোশিকে বললেন,
24 “তুমি ইস্রায়েলীয়দের বল যেন তারা কোরহ, দাথন আর অবীরামের তাম্বুর কাছ থেকে সরে যায়।”
25 এই কথা শুনে মোশি উঠে দাথন ও অবীরামের কাছে গেলেন আর ইস্রায়েলীয় বৃদ্ধ নেতারা তাঁর পিছনে পিছনে গেলেন।
26 মোশি ইস্রায়েলীয়দের বললেন, “তোমরা এই দুষ্ট লোকদের তাম্বুর কাছ থেকে সরে যাও। তাদের কোন জিনিস তোমরা ছুঁয়ো না; যদি তা কর তবে তাদের পাপের জন্য তোমাদেরও শেষ করে ফেলা হবে।”
27 এই কথা শুনে লোকেরা কোরহ, দাথন ও অবীরামের তাম্বুর কাছ থেকে সরে গেল। এর মধ্যে দাথন ও অবীরাম তাদের স্ত্রী ও ছোট-বড় ছেলেমেয়েদের নিয়ে তাম্বুর দরজার কাছে বের হয়ে এসে দাঁড়িয়ে ছিল।
28 মোশি তখন ইস্রায়েলীয়দের বললেন, “এতেই তোমরা বুঝতে পারবে যে, আমি যা করছি তা করবার জন্য সদাপ্রভুই আমাকে পাঠিয়েছেন; এটা আমার মনগড়া কিছু নয়।
29 এই সমস্ত লোকদের যদি স্বাভাবিক মৃত্যু হয়, আর অন্য মানুষের যা হয় তা থেকে আলাদা কিছু না হয় তাহলে বুঝতে হবে সদাপ্রভু আমাকে পাঠান নি।
30 কিন্তু সদাপ্রভু যদি সম্পূর্ণ নতুন কিছু করেন এবং পৃথিবী মুখ খুলে যদি তাদের এবং তাদের সব কিছু গিলে ফেলে আর যদি তারা জ্যান্ত অবস্থায় মৃতস্থানে চলে যায় তবে তোমরা বুঝবে যে, এই লোকেরা সদাপ্রভুকে তুচ্ছ করেছে।”
31 মোশির এই কথা বলা শেষ হওয়ার সংগে সংগে ঐ সব লোকদের পায়ের নীচের মাটি দু’ভাগ হয়ে গেল,
32 আর পৃথিবী মুখ খুলে কোরহের পরিবারের সমস্ত লোক এবং সব কিছু গিলে ফেলল।
33 তাদের যা কিছু ছিল সব নিয়ে তারা জ্যান্ত অবস্থায় মৃতস্থানে চলে গেল। তারপর তাদের উপরকার সেই ফাটলটা বন্ধ হয়ে গেল। তারা ইস্রায়েলীয়দের মধ্য থেকে ধ্বংস হয়ে গেল।
34 তাদের কান্নায় চারপাশের সমস্ত ইস্রায়েলীয়েরা চিৎকার করে এই কথা বলতে বলতে ছুটে পালাল, “পৃথিবী হয়তো আমাদেরও গিলে ফেলবে।”
35 এদিকে যে দু’শো পঞ্চাশজন লোক ধূপ উৎসর্গ করছিল সদাপ্রভুর কাছ থেকে আগুন বের হয়ে এসে তাদের পুড়িয়ে ফেলল।
36 সদাপ্রভু মোশিকে বললেন,
37 “তুমি পুরোহিত হারোণের ছেলে ইলীয়াসরকে বল যেন সে ঐ পোড়া জায়গা থেকে ধুপদানিগুলো বের করে নিয়ে কয়লাগুলো কিছু দূরে নিয়ে ছড়িয়ে দেয়, কারণ ধূপদানিগুলো আমার উদ্দেশ্যে আলাদা করা হয়ে গেছে।
38 পাপ করবার দরুন যে সমস্ত লোককে মরতে হয়েছে ধূপদানিগুলো তাদেরই। কিন্তু সেগুলো সদাপ্রভুর সামনে উপস্থিত করা হয়েছিল বলে সেগুলো তাঁর উদ্দেশ্যে আলাদা করা হয়ে গেছে। সেইজন্য তুমি সেগুলো পিটিয়ে পাত তৈরী করে তা দিয়ে বেদীটা মুড়িয়ে দিয়ো। এটা যেন ইস্রায়েলীয়দের কাছে একটা চিহ্ন হয়ে থাকে।”
39 যে লোকদের পুড়িয়ে মেরে ফেলা হয়েছিল তাদের আনা ব্রোঞ্জের ধূপদানিগুলো পুরোহিত ইলীয়াসর জড়ো করলেন। তারপর বেদীটা মুড়াবার জন্য তিনি সেগুলো পিটিয়ে পাত তৈরী করালেন।
40 মোশির মধ্য দিয়ে সদাপ্রভু তাঁকে যে নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি তা-ই করলেন। এটা করা হল যাতে ইস্রায়েলীয়েরা মনে রাখে যে, হারোণের বংশধর ছাড়া আর কেউ ধূপ জ্বালাবার জন্য সদাপ্রভুর সামনে যেতে পারবে না; যদি কেউ যায় তবে তার অবস্থা কোরহ ও তার দলের লোকদের মতই হবে।
41 এর পরের দিন ইস্রায়েলীয় সমাজের সবাই মোশি ও হারোণের বিরুদ্ধে বক্বক্ করতে লাগল এবং বলল, “তোমরাই সদাপ্রভুর লোকদের মেরে ফেলেছ।”
42 কিন্তু যখন সমাজের সব লোকেরা মোশি ও হারোণের বিরুদ্ধে জড়ো হয়ে মিলন-তাম্বুর দিকে ঘুরে দাঁড়াল তখন হঠাৎ মিলন-তাম্বুটা সেই মেঘে ঢেকে গেল এবং সদাপ্রভুর মহিমা প্রকাশ পেল।
43 তখন মোশি ও হারোণ মিলন-তাম্বুর সামনে গেলেন,
44 আর সদাপ্রভু মোশিকে বললেন,
45 “তোমরা এদের কাছ থেকে সরে যাও; আমি এখনই এদের শেষ করে দেব।” এই কথা শুনে তাঁরা মাটিতে উবুড় হয়ে পড়লেন।
46 তারপর মোশি হারোণকে বললেন, “তোমার ধূপদানি নিয়ে তাতে বেদীর আগুন ভরে তার উপর ধূপ দাও আর তাড়াতাড়ি করে ঐ লোকদের কাছে গিয়ে তাদের পাপ ঢাকবার ব্যবস্থা কর। সদাপ্রভুর ক্রোধ প্রকাশ পেয়েছে, মড়ক শুরু হয়ে গেছে।”
47 তখন হারোণ মোশির কথামতই ধূপদানিতে আগুন আর ধূপ দিয়ে ঐ সব লোকদের মধ্যে ছুটে গেলেন। এর মধ্যেই লোকদের মাঝে মড়ক শুরু হয়ে গিয়েছিল, কিন্তু হারোণ ধূপ উৎসর্গ করে তাদের পাপ ঢাকা দেবার ব্যবস্থা করলেন।
48 তিনি জীবিত ও মৃতদের মাঝখানে গিয়ে দাঁড়ালেন আর মড়ক থেমে গেল।
49 কোরহের দরুন যারা মারা গিয়েছিল তারা ছাড়া আরও চৌদ্দ হাজার সাতশো লোক মড়কে মারা গেল।
50 মড়ক থেমে যাবার পরে হারোণ মিলন-তাম্বুর দরজায় মোশির কাছে ফিরে গেলেন।