1 সপ্তম বছরের পঞ্চম মাসের দশ দিনের দিন ইসরাইলের কয়েকজন বৃদ্ধ নেতা মাবুদের ইচ্ছা জানবার জন্য এসে আমার সামনে বসলেন।
2 তখন মাবুদের এই কালাম আমার উপর নাজেল হল,
3 “হে মানুষের সন্তান, তুমি ইসরাইলের বৃদ্ধ নেতাদের বল যে, আল্লাহ্ মালিক বলছেন, ‘তোমরা কি আমার ইচ্ছা জানতে এসেছ? আমার জীবনের কসম, আমি তোমাদের আমার ইচ্ছা জানতে দেব না।’
4 “হে মানুষের সন্তান, তুমি কি তাদের বিচার করবে? তাহলে তাদের পূর্বপুরুষদের জঘন্য আচার-ব্যবহারের কথা তাদের জানাও।
5 তাদের বল যে, আল্লাহ্ মালিক বলছেন, ‘যেদিন আমি ইসরাইলকে বেছে নিয়েছিলাম সেই দিন ইয়াকুবের বংশের লোকদের কাছে কসম খেয়েছিলাম ও মিসরে তাদের কাছে নিজেকে প্রকাশ করেছিলাম। আমি কসম খেয়ে তাদের বলেছিলাম যে, আমিই তাদের মাবুদ আল্লাহ্।
6 সেই দিন আমি তাদের কাছে আরও কসম খেয়েছিলাম যে, মিসর দেশ থেকে তাদের বের করে তাদের জন্য যে দেশ আমি ঠিক করেছি সেই দেশে তাদের নিয়ে যাব। সেখানে দুধ, মধু আর কোন কিছুর অভাব নেই; সেটা সব দেশের মধ্যে সেরা।
7 আমি তাদের বলেছিলাম, যে সব জঘন্য মূর্তি তাদের কাছে ভাল লেগেছে তা যেন তারা প্রত্যেকে দূর করে দেয় এবং মিসরের মূর্তিগুলো দিয়ে নিজেদের নাপাক না করে, কারণ আমিই তাদের মাবুদ আল্লাহ্।
8 “ ‘কিন্তু তারা আমার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করল, আমার কথা শুনতে রাজী হল না। যে সব জঘন্য মূর্তি তাদের কাছে ভাল লাগত তা তারা দূর করল না এবং মিসরের মূর্তিগুলো ত্যাগ করল না। কাজেই আমি বললাম মিসরে আমি তাদের উপর আমার রাগ ও গজব সম্পূর্ণভাবে ঢেলে দেব।
9 কিন্তু আমার সুনাম রক্ষার জন্য আমি তা করি নি, যাতে তারা যে জাতিদের মধ্যে বাস করছিল তাদের কাছে আমার নাম অপবিত্র না হয়। মিসর দেশ থেকে বনি-ইসরাইলদের বের করে এনে সেই সব জাতির চোখের সামনে আমি বনি-ইসরাইলদের কাছে নিজেকে প্রকাশ করলাম।
10 আমি মিসর থেকে তাদের বের করে মরুভূমিতে আনলাম।
11 আমি তাদের আমার নিয়ম দিলাম এবং আমার শরীয়ত তাদের জানালাম; যে তা পালন করবে সে তার মধ্য দিয়েই জীবন পাবে।
12 আমার ও তাদের মধ্যে চিহ্ন হিসাবে বিশ্রাম দিনগুলোও তাদের দিলাম যাতে তারা জানতে পারে যে, আমি মাবুদই তাদের পবিত্র করলাম।
13 “ ‘কিন্তু ইসরাইলের লোকেরা মরুভূমিতে আমার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করল। তারা আমার নিয়মগুলো পালন করল না এবং আমার যে শরীয়ত পালন করলে মানুষ জীবন পায় তা তারা অগ্রাহ্য করল; তারা আমার দেওয়া বিশ্রাম দিনগুলোর পবিত্রতা রক্ষা করল না। কাজেই আমি বললাম, আমি তাদের উপর আমার গজব ঢেলে দিয়ে মরুভূমিতেই তাদের ধ্বংস করে ফেলব।
14 কিন্তু আমার সুনাম রক্ষার জন্য আমি তা করি নি, যাতে যে জাতিদের সামনে আমি তাদের বের করে এনেছিলাম তাদের কাছে আমার নাম অপবিত্র না হয়।
15 এছাড়া সেই মরুভূমিতেই তাদের কাছে আমি কসম খেলাম যে, আমার দেওয়া দেশ- যে দেশে দুধ, মধু আর কোন কিছুর অভাব নেই, যে দেশ সব দেশের মধ্যে সেরা- সেই দেশে আমি তাদের নিয়ে যাব না।
16 তারা আমার শরীয়ত অগ্রাহ্য করেছে ও আমার নিয়মগুলো অমান্য করেছে এবং আমার দেওয়া বিশ্রাম দিনগুলোর পবিত্রতা রক্ষা করে নি, কারণ তাদের অন্তরের টান ছিল মূর্তিপূজার দিকে।
17 তবুও আমি তাদের মমতার চোখে দেখে মরুভূমিতে তাদের একেবারে ধ্বংস করি নি।
18 সেখানে তাদের ছেলেমেয়েদের আমি বললাম যে, তারা যেন তাদের পূর্বপুরুষদের মত কাজ না করে, তাদের আচার-ব্যবহার অনুসারে না চলে এবং তাদের মূর্তিগুলো দিয়ে নিজেদের নাপাক না করে।
19 আমি তাদের আরও বললাম যে, আমিই তাদের মাবুদ আল্লাহ্, তাই আমার নিয়মগুলো যেন তারা পালন করে এবং আমার শরীয়ত মেনে চলে।
20 তারা যেন আমার দেওয়া বিশ্রাম দিনগুলোর পবিত্রতা রক্ষা করে; তাতে আমার ও তাদের মধ্যে তা একটা চিহ্ন হয়ে থাকবে, আর তারা জানতে পারবে যে, আমিই তাদের মাবুদ আল্লাহ্।
21 “ ‘কিন্তু সেই ছেলেমেয়েরা আমার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করল। তারা আমার নিয়মগুলো পালন করল না এবং যে শরীয়ত পালন করলে মানুষ জীবন পায় তারা আমার সেই শরীয়ত মেনে চলবার দিকে মনোযোগ দিল না; তারা আমার দেওয়া বিশ্রাম দিনগুলোর পবিত্রতা রক্ষা করল না। তাই আমি বললাম মরুভূমিতে আমি তাদের উপর আমার রাগ ও গজব সম্পূর্ণভাবে ঢেলে দেব।
22 কিন্তু আমার হাত আমি সরিয়ে রাখলাম এবং আমার সুনাম রক্ষার জন্য আমি তা করি নি যাতে যে সব জাতিদের সামনে আমি তাদের বের করে এনেছিলাম তাদের কাছে আমার নাম অপবিত্র না হয়।
23 তা ছাড়া মরুভূমিতে আমি তাদের কাছে কসম খেয়েছিলাম যে, নানা জাতি ও দেশের মধ্যে আমি তাদের ছড়িয়ে-ছিটিয়ে দেব,
24 কারণ তারা আমার শরীয়ত পালন করে নি, আমার নিয়মগুলো অগ্রাহ্য করেছে, আমার দেওয়া বিশ্রাম দিনগুলোর পবিত্রতা রক্ষা করে নি, আর তাদের পূর্বপুরুষদের মূর্তিগুলো তাদের কাছে ভাল লেগেছে।
25 সেইজন্য যে সব নিয়ম ভাল নয় এবং যে শরীয়তের মধ্য দিয়ে তারা জীবন পাবে না সেই সবের হাতে আমি তাদের ছেড়ে দিলাম।
26 প্রথমে জন্মেছে এমন প্রত্যেকটি সন্তানকে তারা আগুনে পুড়িয়ে কোরবানী দিয়েছে, আর তার মধ্য দিয়েই আমি তাদের নাপাক হতে দিলাম যেন আমি তাদের ধ্বংস করতে পারি। তখন তারা জানতে পারবে যে, আমিই মাবুদ।’
27 “কাজেই হে মানুষের সন্তান, তুমি বনি-ইসরাইলদের বল যে, আল্লাহ্ মালিক বলছেন, ‘তোমাদের পূর্বপুরুষেরা বেঈমানীর কাজ করে আমাকে কুফরী করেছে।
28 যে দেশ দেবার কসম আমি তাদের কাছে খেয়েছিলাম সেখানে নিয়ে যাবার পর যখন তারা কোন উঁচু পাহাড় বা ডালপালা ছড়ানো সবুজ গাছ দেখল সেখানে তারা তাদের পশু-কোরবানী দিতে লাগল। সেই কোরবানী দিয়ে তারা আমার রাগ জাগিয়ে তুলল। এছাড়া তারা সেখানে তাদের খোশবু-ধূপ জ্বালাল এবং ঢালন-কোরবানী করল।
29 তখন আমি তাদের জিজ্ঞাসা করলাম সেই সব উঁচু স্থানে তারা কেন যায়।’ ” আজও সেই সব জায়গার নাম রয়েছে “পূজার উঁচু স্থান।”
30 কাজেই মাবুদ আমাকে বললেন, “তুমি বনি-ইসরাইলদের বল যে, আল্লাহ্ মালিক বলছেন, ‘তোমরা কি তোমাদের পূর্বপুরুষদের মত করে নিজেদের নাপাক করবে এবং তাদের জঘন্য মূর্তিগুলোর পূজা করবে?
31 আজও পর্যন্ত যখন তোমরা মূর্তির সামনে তোমাদের ছেলেমেয়েদের আগুনে পুড়িয়ে কোরবানী দাও তখন সেই সব মূর্তি দিয়ে তোমরা নিজেদের নাপাক করে থাক। হে বনি-ইসরাইলরা, আমি কি তোমাদের আমার ইচ্ছা জানতে দেব? আমার জীবনের কসম যে, আমি কিছুতেই আমার ইচ্ছা তোমাদের জানতে দেব না।
32 “ ‘তোমরা বলে থাক যে, তোমরা দুনিয়ার অন্যান্য জাতির লোকদের মত হতে চাও যারা কাঠ ও পাথরের পূজা করে। কিন্তু তোমাদের মনে যা আছে তা কখনও হবে না।
33 আমি আল্লাহ্ মালিক আমার জীবনের কসম খেয়ে বলছি যে, আমার শক্তিশালী হাত বাড়িয়ে গজব ঢেলে দিয়ে আমি তোমাদের উপরে রাজত্ব করব।
34 আমার শক্তিশালী হাত বাড়িয়ে গজব ঢেলে দিয়ে নানা জাতির মধ্য থেকে আমি তোমাদের নিয়ে আসব এবং যে সব দেশে তোমাদের ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল সেখান থেকে তোমাদের একত্র করব।
35 জাতিদের মরুভূমিতে তোমাদের মুখোমুখি হয়ে আমি তোমাদের বিচার করব।
36 মিসর দেশের মরুভূমিতে আমি যেমন তোমাদের পূর্বপুরুষদের বিচার করেছিলাম তেমনি তোমাদেরও বিচার করব।
37 আমার লাঠির নীচ দিয়ে তোমাদের যেতে হবে; আমার ব্যবস্থার বাঁধন দিয়ে আমি তোমাদের বাঁধব।
38 তোমাদের মধ্যে যারা আমার বিরুদ্ধে থাকে ও বিদ্রোহ করে আমি তাদের দূর করে দেব। তারা যে দেশে বাস করছে যদিও সেখান থেকে আমি তাদের বের করে আনব তবুও তারা ইসরাইল দেশে ঢুকতে পারবে না। তখন তোমরা জানবে যে, আমিই মাবুদ।
39 “ ‘হে বনি-ইসরাইলরা, আমি আল্লাহ্ মালিক বলছি, যাও, তোমরা প্রত্যেকে গিয়ে তোমাদের মূর্তিগুলোর সেবা কর। কিন্তু পরে আমার কথা তোমরা অবশ্যই শুনবে এবং তখন তোমরা তোমাদের উপহার ও মূর্তি দিয়ে আর আমার পবিত্র নাম অপবিত্র করবে না।
40 তখন দেশের মধ্যে আমার পবিত্র পাহাড়ের উপরে, ইসরাইলের উঁচু পাহাড়ের উপরে ইসরাইলের সমস্ত লোক আমার এবাদত করবে এবং সেখানে আমি তাদের কবুল করব। সেখানে আমি তোমাদের সব পবিত্র কোরবানী, দান ও ভাল ভাল উপহার দাবি করব।
41 আমি যখন জাতিদের মধ্য থেকে তোমাদের বের করে আনব এবং যে সব দেশে তোমরা ছড়িয়ে পড়েছ সেখান থেকে একত্র করব তখন খোশবু ধূপের মত আমি তোমাদের কবুল করব। তখন তোমাদের মধ্য দিয়ে জাতিরা বুঝতে পারবে যে, আমি পবিত্র।
42 তোমাদের পূর্বপুরুষদের কাছে যে দেশ দেবার কসম আমি খেয়েছিলাম সেই ইসরাইল দেশে তোমাদের নিয়ে যাবার পর তোমরা জানবে যে, আমিই মাবুদ।
43 সেখানে তোমাদের আগের আচার-ব্যবহারের কথা ও যে সব কাজের দ্বারা তোমরা নিজেদের নাপাক করেছিলে তা মনে করবে এবং তোমাদের সমস্ত খারাপ কাজের জন্য নিজেরা নিজেদের ঘৃণা করবে।
44 হে বনি-ইসরাইলরা, আমি তোমাদের খারাপ আচার-ব্যবহার এবং খারাপ কাজ অনুসারে তোমাদের সংগে ব্যবহার করব না, কিন্তু নিজের সুনাম রক্ষার জন্য তোমাদের সংগে ভাল ব্যবহার করব। তখন তোমরা জানবে যে, আমিই মাবুদ।’ আমি আল্লাহ্ মালিক এই কথা বলছি।”
45 পরে মাবুদ আমাকে আরও বললেন,
46 “হে মানুষের সন্তান, তোমার মুখ তুমি দক্ষিণ দিকে রেখে সেই দেশের বিরুদ্ধে কথা বল এবং সেখানকার বনের বিরুদ্ধে ভবিষ্যদ্বাণী বল।
47 তুমি দক্ষিণের বনকে আমার কালাম শুনতে বল। তাকে বল যে, আল্লাহ্ মালিক বলছেন, ‘আমি তোমার মধ্যে আগুন জ্বালাতে যাচ্ছি এবং তা তোমার সব কাঁচা ও শুকনা গাছপালা পুড়িয়ে ফেলবে। সেই জ্বলন্ত আগুন নিভবে না এবং দক্ষিণ থেকে উত্তর পর্যন্ত সমস্ত লোক তাতে ঝল্সে যাবে।
48 প্রত্যেকে দেখবে যে, আমি মাবুদই তা জ্বালিয়েছি; তা নিভবে না।’ ”
49 তখন আমি বললাম, “হে আল্লাহ্ মালিক, লোকেরা আমার বিষয়ে বলছে যে, আমি কেবল গল্প কথাই বলছি।”