1 পরে মাবুদ আমাকে বললেন,
2 “হে মানুষের সন্তান, দু’টি স্ত্রীলোক ছিল যারা একই মায়ের মেয়ে।
3 অল্প বয়স থেকে মিসর দেশে তারা বেশ্যাগিরি করত। সেই দেশেই লোকে তাদের বুক ধরে সোহাগ করে তাদের সতীত্ব নষ্ট করেছে।
4 তাদের মধ্যে বড়টির নাম ছিল অহলা ও তার বোনের নাম ছিল অহলীবা। পরে তারা আমার হল এবং ছেলেমেয়েদের জন্ম দিল। অহলা হল সামেরিয়া আর অহলীবা হল জেরুজালেম।
5-6 “অহলা আমার থাকতেই জেনা করেছিল। তার প্রেমিকদের প্রতি, অর্থাৎ আশেরীয়দের প্রতি তার কামনা ছিল। এরা ছিল নীল কাপড় পরা যোদ্ধা, শাসনকর্তা ও সেনাপতি; সকলেই সুন্দর যুবক এবং ঘোড়সওয়ার।
7 সব সেরা সেরা আশেরীয়দের কাছে সে নিজেকে বেশ্যা হিসাবে দান করেছিল; যাদের সে কামনা করত তাদের সমস্ত মূর্তি দিয়ে সে নিজেকে নাপাক করেছিল।
8 মিসরে যে বেশ্যাগিরি সে শুরু করেছিল তা সে ছেড়ে দেয় নি; সেখানে তার অল্প বয়সেই লোকে তার সংগে শুয়ে তার সতীত্ব নষ্ট করেছে ও তাদের কামনা তার উপর ঢেলে দিয়েছে।
9 “সেইজন্য আমি তাকে তার প্রেমিকদের হাতে, অর্থাৎ যাদের সে কামনা করত সেই আশেরীয়দের হাতে ছেড়ে দিলাম।
10 তারা তাকে উলংগ করে তার ছেলেমেয়েদের কেড়ে নিয়ে তলোয়ার দিয়ে তাকে হত্যা করল। তার শাস্তির বিষয় নিয়ে স্ত্রীলোকেরা বলাবলি করতে লাগল।
11 “তার বোন অহলীবা এই সব দেখল, তবুও সে তার কামনা ও বেশ্যাগিরিতে তার বোনের চেয়ে আরও বেশী খারাপ হল।
12 তারও আশেরীয়দের প্রতি কামনা হল; তারা ছিল শাসনকর্তা ও সেনাপতি; তারা সুন্দর পোশাক পরা যোদ্ধা ও ঘোড়সওয়ার; তারা সবাই সুন্দর যুবক।
13 আমি দেখলাম সে-ও নিজেকে নাপাক করল; দু’জনে একই পথে গেল।
14 “কিন্তু অহলীবা তার বেশ্যাগিরিতে আরও এগিয়ে গেল। সে দেয়ালের উপর লাল রংয়ে আঁকা ব্যাবিলনীয় পুরুষদের ছবি দেখল।
15 কোমরে তাদের কোমর-বাঁধনি, মাথার উপর উড়ন্ত পাগড়ী; তারা সবাই দেখতে ব্যাবিলন দেশের সেনাপতিদের মত।
16 তাদের দেখামাত্রই তাদের প্রতি তার কামনা জাগল এবং সে ব্যাবিলনে তাদের কাছে লোক পাঠাল।
17 তাতে ব্যাবিলনীয়রা তার কাছে এসে তার সংগে বিছানায় গেল এবং জেনা করে তাকে নাপাক করল। তাদের দ্বারা নাপাক হবার পর সে তাদের ঘৃণা করতে লাগল।
18 সে খোলাখুলিভাবেই যখন তার বেশ্যাগিরি চালাতে লাগল এবং তার উলংগতা প্রকাশ করল তখন আমি তাকে ঘৃণা করলাম, যেমন আমি তার বোনকে ঘৃণা করেছিলাম।
19 যৌবনে যখন সে মিসরে বেশ্যা ছিল তখনকার দিনগুলো মনে করে সে আরও বেশী জেনা করতে লাগল।
20 সেখানে সে এমন অস্বাভাবিক যৌনাচারী লোকদের কামনা করত যারা ছিল গাধা ও ঘোড়ার মতই কামুক।
21 “হে অহলীবা, তোমার যৌবন কালে মিসরের লোকেরা তোমার বুক ধরে আদর করে তোমার সতীত্ব নষ্ট করেছিল; এখন তুমি আবার সেই লোকদের সংগে জেনা করতে চাও।
22 সেইজন্য আমি আল্লাহ্ মালিক বলছি যে, তোমার যে সব প্রেমিকদের তুমি ঘৃণা করেছ আমি তাদেরই তোমার বিরুদ্ধে উত্তেজিত করব এবং চারদিক থেকে আমি তাদের তোমার বিরুদ্ধে নিয়ে আসব।
23 তারা হল ব্যাবিলনীয়রা, সমস্ত ক্যালডীয়রা, পকোদ, শোয়া ও কোয়ার লোকেরা ও তাদের সংগে সমস্ত আশেরীয়রা। তারা সবাই সুন্দর যুবক; তারা সকলেই শাসনকর্তা, সেনাপতি, রথের কর্মচারী, উঁচু পদের লোক এবং ঘোড়সওয়ার।
24 তারা অস্ত্রশস্ত্র, রথ, গাড়ি এবং লোকজনের মস্ত বড় একটা দল নিয়ে তোমার বিরুদ্ধে আসবে। তারা ছোট ও বড় ঢাল নিয়ে মাথা রক্ষার টুপি পরে তোমাকে ঘেরাও করবে। শাস্তি পাবার জন্য আমি তোমাকে তাদের হাতে তুলে দেব এবং তারা তাদের বিচারের নিয়ম অনুসারে তোমাকে শাস্তি দেবে।
25 আমার দিলের জ্বালা আমি তোমার বিরুদ্ধেই কাজে লাগাব বলে তারা জ্বলন্ত রাগে তোমার সংগে ব্যবহার করবে। তারা তোমার নাক-কান কেটে দেবে এবং তোমার বাকী লোকদের হত্যা করবে। তারা তোমার ছেলেমেয়েদের নিয়ে যাবে, আর তোমার বাকী লোকেরা আগুনে পুড়ে মরবে।
26 তারা তোমার কাপড়-চোপড় খুলে ফেলবে ও তোমার সুন্দর গহনা নিয়ে নেবে।
27 যে জেনা ও বেশ্যাগিরি তুমি মিসরে শুরু করেছিলে তা আমি এইভাবে বন্ধ করে দেব। তাতে তুমি ঐ লোকদের দিকে তাকাবে না এবং মিসরকে আর মনেও করবে না।
28 “তুমি যাদের ঘৃণা কর, যাদের দিক থেকে তুমি ফিরেছ তাদের হাতেই আমি তোমাকে তুলে দেব।
29-30 তারা তোমাকে ঘৃণা করবে এবং তোমার পরিশ্রমের ফল নিয়ে নেবে। তারা তোমাকে উলংগ ও খালি করে রেখে যাবে। তোমার বেশ্যাগিরির লজ্জা তখন প্রকাশ পাবে। তোমার জেনা ও বেশ্যাগিরির ফলে এই সব তোমার উপর আসবে, কারণ তুমি জাতিদের সংগে জেনা করেছ, অর্থাৎ তাদের মূর্তিগুলো দিয়ে নিজেকে নাপাক করেছ।
31 তুমি তোমার বোনের পথেই গেছ; কাজেই তার পেয়ালা আমি তোমার হাতে তুলে দেব।
32 “আমি আল্লাহ্ মালিক বলছি যে, তোমার বোনের পেয়ালাতেই তুমি খাবে; পেয়ালাটা বড় ও গভীর। তাতে অনেকটা ধরে বলে তা থেকে খেয়ে তুমি ঘৃণা ও ঠাট্টা-বিদ্রূপের পাত্র হবে।
33 তুমি ভয় ও ধ্বংসের পেয়ালা থেকে খেয়ে, তোমার বোন সামেরিয়ার পেয়ালা থেকে খেয়ে মাতলামিতে ও দুঃখে পূর্ণ হবে।
34 তুমি তাতে খাবে, চেটেপুটে খাবে; তুমি তা ভেংগে চুরমার করবে এবং নিজের বুক ছিঁড়ে ফেলবে। এই হল আমার বিচারের রায়।
35 তুমি আমাকে ভুলে গেছ এবং তোমার পিছনে আমাকে ঠেলে দিয়েছ বলে তোমাকে তোমার জেনা ও বেশ্যাগিরির ফল ভোগ করতে হবে। আমি আল্লাহ্ মালিক এই কথা বলছি।”
36 এর পর মাবুদ আমাকে বললেন, “হে মানুষের সন্তান, তুমি কি অহলা আর অহলীবার বিচার করতে প্রস্তুত? তাহলে তুমি তাদের জঘন্য কাজকর্মের কথা তাদের জানাও।
37 তারা জেনা করেছে আর তাদের হাতে রয়েছে রক্ত। তাদের মূর্তিগুলোর পূজা করে তারা জেনা করেছে; এমন কি, আমার জন্য জন্ম-দেওয়া ছেলেমেয়েদের তারা মূর্তিগুলোর খাবার হিসাবে আগুনে পুড়িয়ে কোরবানী দিয়েছে।
38 এছাড়া সেই একই সময়ে তারা আমার ঘর নাপাক করেছে। তারা আমার বিশ্রাম দিনগুলোর পবিত্রতা রক্ষা করে নি।
39 সেই একই দিনে তারা তাদের মূর্তিগুলোর কাছে তাদের ছেলেমেয়েদের জবাই করেছে ও আমার ঘরে ঢুকে তা অপবিত্র করেছে। তারা আমার ঘরের মধ্যেই এই কাজ করেছে।
40 “এছাড়া অহলা ও অহলীবা দূর দেশ থেকে লোকদের আনবার জন্য লোক পাঠাল। সেই লোকেরা আসলে পর তারা তাদের জন্য গোসল করল, চোখে কাজল দিল এবং গহনা পরে নিজেদের সাজাল।
41 তারপর তারা সুন্দর বিছানায় বসে তার সামনে একটা টেবিল পেতে তার উপর আমারই ধূপ ও তেল রাখল।
42 “তাদের চারপাশে ছিল চিন্তাহীন, হৈ চৈ করা লোকদের গোলমাল। তাদের মধ্যে ছিল নীচমনা লোক আর মরুভূমির মদখোরেরা। তারা সেই দুই বোনের হাতে বালা পরাল আর তাদের মাথায় দিল সুন্দর তাজ।
43 তখন জেনা করে দুর্বল হয়ে যাওয়া স্ত্রীলোকের বিষয়ে আমি বললাম, ‘এখন সেই লোকেরা বেশ্যা হিসাবেই তাকে ব্যবহার করুক এবং সে-ও তাদের সংগে জেনা করুক।’
44 লোকে যেমন বেশ্যার সংগে শোয় তেমনি করে তারা অহলা ও অহলীবার সংগে, সেই কামুক স্ত্রীলোকদের সংগে শুলো।
45 কিন্তু সৎ লোকেরা জেনা ও রক্তপাতের পাওনা শাস্তি সেই স্ত্রীলোকদের দেবে, কারণ তারা জেনাকারিণী আর তাদের হাতে রয়েছে রক্ত।
46 “তুমি তাদের বিরুদ্ধে একদল লোক নিয়ে যাও এবং ভয় ও লুটের হাতে তাদের তুলে দাও।
47 সেই লোকেরা তাদের পাথর ছুঁড়ে হত্যা করবে এবং তলোয়ার দিয়ে তাদের টুকরা টুকরা করে কাটবে। তারা তাদের ছেলেমেয়েদের হত্যা করবে এবং তাদের ঘর-বাড়ী পুড়িয়ে দেবে।
48 “হে অহলা ও অহলীবা, এইভাবে আমি দেশের মধ্যে কুকাজ শেষ করে দেব যাতে সব স্ত্রীলোক সাবধান হতে পারে এবং তোমাদের মত কুকাজ না করে।
49 তোমাদের কুকাজের ফল তোমাদেরই ভোগ করতে হবে এবং মূর্তিপূজার গুনাহের ফল বহন করতে হবে। তখন তোমরা জানবে যে, আমিই আল্লাহ্ মালিক।”