1 মাবুদ ইয়ারমিয়া নবী দ্বারা ব্যাবিলনের বিষয়ে, কল্দীয়দের দেশের বিষয়ে, যে কথা বলেছিলেন তা এই—
2 তোমরা জাতিদের মধ্যে ঘোষণা কর, প্রচার কর, ধ্বজা তুলে ধর; প্রচার কর, গুপ্ত রেখো না; বল, ‘ব্যাবিলন পরহস্তগত হল, বেল লজ্জিত হল, মারডকের মুখ বিষণ্ন্ন হল; তার মূর্তিগুলো লজ্জিত হল, মূর্তিগুলো বিস্মিত হল।’
3 কেননা উত্তর দিক থেকে এক জাতি তার বিরুদ্ধে উঠে এল; সে তার দেশ ধ্বংস করবে, সেখানে কেউ বাস করবে না; মানুষ ও পশু পালিয়ে গেল, চলে গেল।
4 মাবুদ বলেন, সেই সময়ে ও সেই কালে বনি-ইসরাইলরা আসবে, তারা ও এহুদার লোকেরা একসঙ্গে আসবে, কাঁদতে কাঁদতে চলে আসবে ও তাদের আল্লাহ্, মাবুদের খোঁজ করবে।
5 তারা সিয়োনের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করবে, সেই দিকে মুখ রাখবে, বলবে, চল, তোমরা এমন নিয়ম দ্বারা মাবুদের প্রতি আসক্ত হও, যা অনন্তকাল থাকবে, যা কখনও লোকে ভুলে যাবে না।
6 আমার লোকেরা হারানো ভেড়া হয়ে পড়েছে, তাদের পালকেরা তাদেরকে ভ্রান্ত করেছে, নানা পর্বতে পথহারা করে ফেলেছে; ওরা পর্বত থেকে উপপর্বতে গমন করেছে, নিজেদের শয়নস্থান ভুলে গেছে।
7 যারা তাদেরকে পেয়েছে, তারা গ্রাস করেছে; তাদের দুশমনদের বলেছে, আমাদের দোষ হয় নি, কারণ ওরা ধর্মনিবাস মাবুদের, নিজেদের পূর্বপুরুষদের আশাভূমি মাবুদের, বিরুদ্ধে গুনাহ্ করেছে।
8 তোমরা তাড়াতাড়ি ব্যাবিলনের মধ্য থেকে বের হয়ে পড়, কল্দীয়দের দেশ থেকে নির্গমন কর এবং পালের অগ্রগামী ছাগলের মত হও।
9 কেননা দেখ, আমি উত্তর দেশ থেকে মহাজাতি-সমাজ উত্তেজিত করে ব্যাবিলনের বিরুদ্ধে গমন করাব, তারা ব্যাবিলনের বিরুদ্ধে সৈন্য রচনা করবে, তাতে তা পরহস্তগত হবে; তাদের তীর দক্ষ বীরের মত হবে, বিফল হয়ে ফিরে আসবে না।
10 কল্দিয়া লুটবস্তু হবে; যেসব লোক সেই দেশ লুট করবে, তারা তৃপ্ত হবে, মাবুদ এই কথা বলেন।
11 ওহে তোমরা, যারা আমার অধিকার লুট করছো, তোমরা তো আনন্দ ও উল্লাস করছো, শস্য-মাড়াইকারিণী গাভীর মত নাচানাচি করছো, তেজস্বী ঘোড়ার মত হ্রেষা শব্দ করছো;
12 এজন্য তোমাদের মা অতি লজ্জিত হবে, তোমাদের জননী হতাশ হবে; দেখ, জাতিদের মধ্যে সে ক্ষুদ্র হবে, মরুভূমি, শুকনো স্থান ও মরুভূমি হবে।
13 মাবুদের ক্রোধের কারণে সে আর বসতি-স্থান হবে না, সম্পূর্ণ ধ্বংসস্থান হবে; যে কেউ ব্যাবিলনের কাছ দিয়ে যাবে সে বিস্মিত হবে ও তার সমস্ত আঘাত দেখে উপহাস করবে।
14 হে ধনুকধারী লোকেরা, ব্যাবিলনের বিরুদ্ধে চারদিকে সৈন্য রচনা কর, তার প্রতি তীর নিক্ষেপ কর, তীর নিক্ষেপে কাতর হয়ো না, কেননা সে মাবুদের বিরুদ্ধে গুনাহ্ করেছে।
15 তার চারদিকে সিংহনাদ কর— সে আত্মসমর্পণ করেছে, তার ভিত্তিগুলো পড়ে গেছে, তার প্রাচীরগুলো উৎপাটিত হয়েছে; কেননা এ মাবুদের প্রতিশোধ গ্রহণ; তোমরা ওর প্রতিশোধ নাও; সে যেমন করেছে, তার প্রতি তেমনি কর।
16 ব্যাবিলন থেকে বীজবাপককে কেটে ফেল, ফসল কাটার সময়ে যে কাস্ত্যা ধরে, তাকে কেটে ফেল, উৎপীড়ক তলোয়ারের ভয়ে তারা প্রত্যেকে নিজ নিজ জাতির কাছে ফিরে যাবে, প্রত্যেকে নিজ নিজ দেশের দিকে পালিয়ে যাবে।
17 ইসরাইল ছিন্নভিন্ন ভেড়ার মত; সিংহগুলো তাকে তাড়িয়ে দিয়েছে; প্রথমত আশেরিয়ার বাদশাহ্ তাকে গ্রাস করেছিল, এখন শেষে এই ব্যাবিলনের বাদশাহ্ বখতে-নাসার তার অস্থিগুলো ভেঙ্গে ফেলেছে।
18 এজন্য বাহিনীগণের মাবুদ, ইসরাইলের আল্লাহ্, এই কথা বলেন, দেখ, আমি আশেরিয়ার বাদশাহ্কে যেমন প্রতিফল দিয়েছি, ব্যাবিলনের বাদশাহ্ ও তার দেশকে তেমনি প্রতিফল দেব।
19 আর ইসরাইলকে তার চরাণি-স্থানে ফিরিয়ে আনবো; সে কর্মিলের ও বাশনের উপরে চরবে এবং আফরাহীম-পর্বতমালায় ও গিলিয়দে তার প্রাণ তৃপ্ত হবে।
20 মাবুদ বলেন, সেই সময়ে ও সেই কালে ইসরাইলের অপরাধের অনুসন্ধান করা যাবে, কিন্তু পাওয়া যাবে না; এবং এহুদার গুনাহ্গুলোর অনুসন্ধান করা যাবে, কিন্তু পাওয়া যাবে না; কেননা আমি যাদেরকে অবশিষ্ট রাখি, তাদেরকে মাফ করবো।
21 মাবুদ বলেন, তুমি মরাথয়িম [দ্বিগুণ বিদ্রোহ] দেশের বিরুদ্ধে ও পকোদ [প্রতিফল] নিবাসীদের বিরুদ্ধে যাও, তাদের পিছনে পিছনে গিয়ে তাদের জবেহ্ কর, নিঃশেষে বিনষ্ট কর; আমি তোমাকে যা যা করতে হুকুম করেছি, সেই অনুসারে কর।
22 দেশে সংগ্রামের আওয়াজ ও মহাবিনাশের আওয়াজ!
23 সমস্ত দুনিয়ার হাতুড়ি কেমন ভেঙ্গে টুকরা টুকরা হয়ে গেল! জাতিদের মধ্যে ব্যাবিলন কেমন উৎসন্ন হল!
24 হে ব্যাবিলন, আমি তোমার জন্য ফাঁদ পেতেছি, আর তুমি তাতে ধরাও পড়েছ, কিন্তু জানতে পার নি; তোমাকে পাওয়া গেছে, আবার তুমি ধরাও পড়েছ, কেননা তুমি মাবুদের সঙ্গে যুদ্ধ করেছ।
25 মাবুদ তাঁর অস্ত্রাগার খুললেন, নিজের ক্রোধের অস্ত্রগুলো বের করে আনলেন, কেননা কল্দীয়দের দেশে সর্বশক্তিমান সার্বভৌম মাবুদের কাজ আছে।
26 তোমরা প্রান্তসীমা থেকে তার বিরুদ্ধে এসো, তার শস্যভাণ্ডারগুলো খুলে দাও, রাশির মত তাকে ঢিবি কর, নিঃশেষে বিনষ্ট কর; তার কিছু অবশিষ্ট রেখো না।
27 তার সমস্ত ষাঁড় হত্যা কর, তারা বধ্যস্থানে নেমে যাক; হায় হায়, তাদের দিন, তাদের প্রতিফলের সময়, এসে পড়লো!
28 শোন! ঐ তাদের কণ্ঠস্বর, যারা পালাচ্ছে ও ব্যাবিলন দেশ থেকে রক্ষা পাচ্ছে; তারা সিয়োনে এসে ঘোষণা করছে কিভাবে আমাদের আল্লাহ্ মাবুদ তাঁর বায়তুল-মোকাদ্দসের জন্য প্রতিশোধ নিয়েছে।
29 তোমরা ব্যাবিলনের বিরুদ্ধে ধনুর্ধ্বারীদের, ধনুকে চাড়াদায়ী সকলকে, আহ্বান কর; চারদিকে তার বিরুদ্ধে শিবির স্থাপন কর, কাউকেও রক্ষা পেতে দিও না; তার কাজ অনুসারে ফল তাকে দাও; সে যা যা করেছে, তার প্রতি সেই অনুসারে কর; কেননা সে মাবুদের বিরুদ্ধে, ইসরাইলের পবিত্রতমের বিরুদ্ধে, অহংকার করেছে।
30 এজন্য সেদিন তার যুবকেরা তার রাস্তায় মরে পড়ে থাকবে ও তার সমস্ত যোদ্ধা ধ্বংস হয়ে যাবে, মাবুদ এই কথা বলেন।
31 হে অহংকার, প্রভু, বাহিনীগণের মাবুদ বলেন, দেখ, আমি তোমার বিপক্ষ, কেননা তোমার সেদিন উপস্থিত, যেদিন আমি তোমাকে প্রতিফল দেব।
32 তখন ঐ অহংকার হোঁচট খেয়ে পড়বে, কেউ তাকে উঠাবে না; এবং আমি তার সকল নগরে আগুন লাগিয়ে দেব, তা তার চারদিকের সবকিছুই গ্রাস করবে।
33 বাহিনীগণের মাবুদ এই কথা বলেন, বনি-ইসরাইল ও এহুদার লোকেরা নির্বিশেষে নির্যাতিত হচ্ছে; এবং যারা তাদেরকে বন্দী-দশায় রেখেছে, তারা তাদেরকে দৃঢ়ভাবে ধরে রেখেছে, বিদায় করতে অসম্মত রয়েছে।
34 তাদের মুক্তিদাতা বলবান; ‘বাহিনীগণের মাবুদ’ তাঁর নাম; তিনি সমপূর্ণভাবে তাদের ঝগড়া নিষ্পন্ন করবেন, যেন তিনি দুনিয়াকে সুস্থির করেন ও ব্যাবিলন-নিবাসীদেরকে অস্থির করেন।
35 মাবুদ বলেন, কল্দীয়দের উপরে, ব্যাবিলন-নিবাসীদের উপরে, ব্যাবিলনের কর্মকর্তাদের উপরে ও তার জ্ঞানবানদের উপরে তলোয়ার রয়েছে।
36 তার গণকদের উপরে তলোয়ার রয়েছে, তারা হতবুদ্ধি হবে; তার বীরদের উপরে তলোয়ার রয়েছে, তারা ধ্বংস হবে।
37 তার ঘোড়াগুলোর উপরে, তার রথগুলোর উপরে ও তার মধ্যকার সমস্ত মিশ্রিত লোকের উপরে তলোয়ার রয়েছে, তারা অবলাদের সমান হবে; তার সকল ধনকোষের উপরে তলোয়ার রয়েছে, সেসব লুট হবে।
38 তার জলাধারগুলোর উপরে উত্তাপ রয়েছে, সেগুলো শুকিয়ে যাবে; কেননা সেটি খোদাই-করা মূর্তির দেশ ও সেখানকার লোকেরা তাদের মূর্তিগুলোর বিষয়ে পাগল হয়ে যাবে।
39 এজন্য সেখানে বন্যপশু ও হায়েনারা বাস করবে এবং উটপাখি বাসা করবে; তা আর কখনও লোকালয় হবে না; পুরুষানুক্রমে সেই স্থানে বসতি হবে না।
40 মাবুদ এই কথা বলেন, আল্লাহ্ যখন সাদুম, আমুরা ও সেখানকার নিকটস্থ নগরগুলো উৎপাটন করেছিলেন, তখন যেরকম হয়েছিল, সেরকম হবে; কোন ব্যক্তি সেখানে বাস করবে না, কোন বনি-আদম তার মধ্যে বাস করবে না।
41 দেখ, উত্তর দিক থেকে এক জনসমাজ আসছে, দুনিয়ার প্রান্ত থেকে একটি মহাজাতি ও অনেক বাদশাহ্ উত্তেজিত হয়ে আসছে।
42 তারা ধনুক ও বর্শাধারী, নিষ্ঠুর ও নির্দয়; তাদের আওয়াজ সমুদ্র গর্জনের মত ও তারা ঘোড়ায় চড়ে আসছে; অয়ি ব্যাবিলন-কন্যে, তোমারই বিপরীতে যুদ্ধ করার জন্য তারা প্রত্যেকজন যোদ্ধার মত সুসজ্জিত হয়েছে।
43 ব্যাবিলনের বাদশাহ্ তাদের জনশ্রুতি শুনেছে, তার হাত অবশ হল, যন্ত্রণা, প্রসবকারিণীর মত বেদনা, তাকে ধরলো।
44 দেখ, যে সিংহের মত জর্ডানের গভীর জঙ্গল থেকে উঠে সেই চিরস্থায়ী চরাণি-স্থানের বিরুদ্ধে আসবে; কিন্তু আমি চোখের নিমিষে তাকে সেখান থেকে দূর করে দেব এবং তার উপরে মনোনীত লোককে নিযুক্ত করবো। কেননা আমার মত কে আছে? আমার সময় নির্ধারণ কে করবে? এবং আমার সম্মুখে দাঁড়াবে এমন পালক কোথায়?
45 অতএব মাবুদের মন্ত্রণা শোন, যা তিনি ব্যাবিলনের বিরুদ্ধে করেছেন; তাঁর সঙ্কল্পগুলো শোন, যা তিনি কল্দীয়দের দেশের বিরুদ্ধে করেছেন। নিশ্চয়ই লোকেরা তাদেরকে টেনে নিয়ে যাবে, পালের বাচ্চাগুলোকেও নিয়ে যাবে; নিশ্চয়ই তিনি তাদের চরাণি-স্থান তাদের সঙ্গে উৎসন্ন করবেন।
46 ব্যাবিলন পরহস্তগত হয়েছে, এই শব্দে দুনিয়া কাঁপছে ও জাতিদের মধ্যে কান্নার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে।