1 রাজা হিষ্কিয় এই কথা শুনে নিজের কাপড় ছিঁড়লেন এবং ছালার চট পরে সদাপ্রভুর ঘরে গেলেন।
2 তিনি রাজবাড়ীর পরিচালক ইলিয়াকীম, রাজার লেখক শিব্ন ও পুরোহিত-নেতাদের চট পরা অবস্থায় আমোসের ছেলে নবী যিশাইয়ের কাছে পাঠিয়ে দিলেন।
3 তাঁরা যিশাইয়কে বললেন, “হিষ্কিয় বলছেন যে, আজকের দিনটা হল কষ্টের, শাস্তি পাওয়ার ও অসম্মানের দিন। আমাদের অবস্থা এমন হয়েছে যেন সন্তানেরা জন্ম হবার মুখে এসেছে কিন্তু জন্ম দেবার শক্তি নেই।
4 আসিরিয়ার রাজা জীবন্ত ঈশ্বরকে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করতে রব্শাকিকে পাঠিয়েছেন, কিন্তু আপনার ঈশ্বর সদাপ্রভু হয়তো সেই সব কথা শুনে তাকে শাস্তি দেবেন। তাই যারা এখনও বেঁচে আছে তাদের জন্য আপনি প্রার্থনা করুন।”
5 রাজা হিষ্কিয়ের কর্মচারীরা যখন যিশাইয়ের কাছে আসলেন,
6 তখন যিশাইয় তাঁদের বললেন, “আপনাদের মনিবকে বলবেন যে, সদাপ্রভু বলছেন, ‘তুমি যা শুনেছ, অর্থাৎ আসিরিয়ার রাজার কর্মচারীরা আমার বিরুদ্ধে যে সব অপমানের কথা বলেছে তাতে ভয় পেয়ো না।
7 শোন, আমি তার মধ্যে এমন একটা মনোভাবের সৃষ্টি করব যার ফলে সে একটা সংবাদ শুনে নিজের দেশে ফিরে যাবে, আর সেখানে আমি তাকে তলোয়ারের ঘায়ে শেষ করে দেব।’ ”
8 পরে রব্শাকি শুনলেন যে, আসিরিয়ার রাজা লাখীশ ছেড়ে চলে গিয়ে লিব্নার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছেন। সেইজন্য রব্শাকি সেখানে গেলেন।
9 আসিরিয়ার রাজা সন্হেরীব খবর পেলেন যে, কূশ দেশের রাজা তির্হকঃ তাঁর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবার জন্য বের হয়েছেন। এই কথা শুনে তিনি হিষ্কিয়ের কাছে দূতদের পাঠালেন। তিনি তাদের বললেন,
10 “তোমরা যিহূদার রাজা হিষ্কিয়কে বলবে, ‘তুমি যাঁর উপর নির্ভর করে আছ সেই ঈশ্বর বলেছেন যে, আসিরিয়ার রাজার হাতে যিরূশালেমকে তুলে দেওয়া হবে না। তাঁর সেই ছলনার কথায় তুমি ভুল কোরো না।
11 আসিরিয়ার রাজারা কিভাবে অন্য সব দেশ সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দিয়েছেন নিশ্চয়ই তুমি তা শুনেছ; তাহলে তুমি কেমন করে মনে করছ তুমি রক্ষা পাবে?
12 আমার পূর্বপুরুষেরা যে সব জাতিকে ধ্বংস করেছেন তাদের দেবতারা, অর্থাৎ গোষণ, হারণ, রেৎসফ ও তলঃসরে বাসকারী এদনের লোকদের দেবতারা কি তাদের রক্ষা করেছেন?
13 হমাতের রাজা, অর্পদের রাজা, সফর্বয়িম শহরের রাজা আর হেনা ও ইব্বার রাজা কোথায়?’ ”
14 হিষ্কিয় দূতদের হাত থেকে চিঠিখানা নিয়ে পড়লেন। তারপর তিনি সদাপ্রভুর ঘরে গিয়ে সদাপ্রভুর সামনে চিঠিটা মেলে ধরলেন।
15 হিষ্কিয় সদাপ্রভুর কাছে এই প্রার্থনা করলেন,
16 “হে দুই করূবের মাঝখানে থাকা সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু, ইস্রায়েলের ঈশ্বর, তুমি, একমাত্র তুমিই পৃথিবীর সমস্ত রাজ্যের ঈশ্বর। তুমি মহাকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছ।
17 হে সদাপ্রভু, কান দাও, শোন; হে সদাপ্রভু, তোমার চোখ খোল, দেখ; জীবন্ত ঈশ্বরকে অপমান করবার জন্য সন্হেরীব যে সব কথা বলে পাঠিয়েছে তা শোন।
18-19 হে সদাপ্রভু, এই কথা সত্যি যে, আসিরিয়ার রাজারা তাদের নিজেদের দেশ ধ্বংস করেছে এবং ঐ সব জাতিদের ধ্বংস করে তাদের দেবতাদের তারা আগুনে ফেলে নষ্ট করে দিয়েছে। সেগুলো তো ঈশ্বর নয়, মানুষের হাতে তৈরী কেবল কাঠ আর পাথর মাত্র; সেইজন্য তারা তাদের ধ্বংস করতে পেরেছে।
20 এখন হে আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু, আসিরিয়ার রাজার হাত থেকে তুমি আমাদের রক্ষা কর, যাতে পৃথিবীর সমস্ত রাজ্য জানতে পারে যে, তুমি, কেবল তুমিই সদাপ্রভু।”
21 তখন আমোসের ছেলে যিশাইয় হিষ্কিয়ের কাছে এই খবর পাঠালেন, “ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভু বলছেন যে, আসিরিয়ার রাজা সন্হেরীব সম্বন্ধে আপনি প্রার্থনা করেছেন;
22 এইজন্য তার বিরুদ্ধে সদাপ্রভু এই কথা বলছেন, ‘কুমারী মেয়ে সিয়োন তোমাকে তুচ্ছ করবে ও ঠাট্টা-বিদ্রূপ করবে। যিরূশালেমের লোকেরা তোমার পিছন থেকে মাথা নাড়বে।
23 তুমি কাকে অসম্মান করেছ? কার বিরুদ্ধে তুমি অপমানের কথা বলেছ? তুমি কার বিরুদ্ধে চিৎকার করেছ আর গর্বের সংগে চোখ তুলে তাকিয়েছ? ইস্রায়েলের সেই পবিত্রজনের বিরুদ্ধেই তুমি এই সব করেছ।
24 তুমি প্রভুকে টিট্কারি দিয়ে ও গর্ব করে তোমার দাসদের দিয়ে বলে পাঠিয়েছ যে, তোমার সব রথ দিয়ে তুমি পাহাড়গুলোর চূড়ায়, লেবাননের সবচেয়ে উঁচু উঁচু চূড়ায় উঠেছ, তার সবচেয়ে লম্বা লম্বা এরস গাছ আর ভাল ভাল বেরস গাছ কেটে ফেলেছ, তার গভীর বনের সুন্দর জায়গায় ঢুকেছ,
25 বিদেশের মাটিতে মাটিতে কূয়া খুঁড়েছ এবং সেখানকার জল খেয়েছ, আর তোমার পা দিয়ে মিসরের সব নদীগুলো শুকিয়ে ফেলেছ।
26 “ ॥ঃযং ‘তুমি কি শোন নি যে, অনেক আগেই আমি তা ঠিক করে রেখেছিলাম, অনেক কাল আগেই আমি তার পরিকল্পনা করেছিলাম? আর এখন আমি তা ঘটালাম। সেইজন্যই তো তুমি দেয়াল-ঘেরা শহরগুলো পাথরের ঢিবি করতে পেরেছ।
27 সেখানকার লোকেরা শক্তিহীন হয়েছে এবং ভীষণ ভয় ও লজ্জা পেয়েছে। তারা ক্ষেতের ঘাসের মত, গজিয়ে ওঠা সবুজ চারার মত, ছাদের উপরে গজানো ঘাসের মত যা বেড়ে উঠবার আগেই শুকিয়ে যায়।
28 কিন্তু তুমি কোথায় থাক আর কখন আস বা যাও আর কেমন করে আমার বিরুদ্ধে রেগে ওঠ তা সবই আমি জানি।
29 তুমি আমার বিরুদ্ধে রেগে উঠেছ বলে এবং তোমার দেমাকের কথা আমার কানে এসেছে বলে আমি তোমার নাকে আমার কড়া লাগাব আর তোমার মুখে আমার বল্গা লাগাব, আর যে পথ দিয়ে তুমি এসেছ সেই পথেই ফিরে যেতে আমি তোমাকে বাধ্য করব।’
30 “হে হিষ্কিয়, তোমার জন্য চিহ্ন হবে এই: এই বছর নিজে নিজে যা জন্মাবে তোমরা তা-ই খাবে, আর দ্বিতীয় বছরে তা থেকে যা জন্মাবে তা খাবে। কিন্তু তৃতীয় বছরে তোমরা বীজ বুনবে ও ফসল কাটবে আর আংগুর ক্ষেত করে তার ফল খাবে।
31 যিহূদা-গোষ্ঠীর যে লোকেরা তখনও বেঁচে থাকবে তারা আর একবার সফল হবে। তারা গাছের মত নীচে শিকড় বসাবে আর উপরে ফল ফলাবে।
32 বেঁচে থাকা লোকেরা যিরূশালেম থেকে আসবে আর সিয়োন পাহাড় থেকে আসবে রক্ষা পাওয়া একদল লোক। সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভুর আগ্রহই এই সমস্ত করবে।
33 “সেইজন্য আসিরিয়ার রাজার বিষয়ে সদাপ্রভু এই কথা বলছেন, ‘সে এই শহরে ঢুকবে না কিম্বা এখানে একটা তীরও মারবে না। সে ঢাল নিয়ে এর সামনে আসবে না কিম্বা ঘেরাও করে ওঠা-নামা করবার জন্য কিছু তৈরী করবে না।
34 সে যে পথ দিয়ে এসেছে সেই পথেই ফিরে যাবে; এই শহরে সে ঢুকবে না। আমি সদাপ্রভু এই কথা বলছি।
35 আমি আমার ও আমার দাস দায়ূদের জন্য এই শহরটা ঘিরে রেখে তা রক্ষা করব।’ ”
36 তারপর সদাপ্রভুর দূত বের হয়ে আসিরিয়দের ছাউনির এক লক্ষ পঁচাশি হাজার লোককে মেরে ফেললেন। পরদিন সকালবেলা লোকেরা যখন উঠল তখন দেখা গেল সব জায়গায় কেবল মৃতদেহ।
37 কাজেই আসিরিয়ার রাজা সন্হেরীব তাঁর সৈন্যদল নিয়ে চলে গেলেন এবং নীনবী শহরে ফিরে গিয়ে সেখানে থাকতে লাগলেন।
38 একদিন সন্হেরীব যখন তাঁর দেবতা নিষ্রোকের মন্দিরে পূজা করছিলেন তখন অদ্রম্মেলক ও শরেৎসর নামে তাঁর দুই ছেলে তাঁকে তলোয়ারের ঘায়ে মেরে ফেলে অরারট দেশে পালিয়ে গেল। সন্হেরীবের জায়গায় তাঁর ছেলে এসর-হদ্দোন রাজা হলেন।