1 সেই সময়ে বাদশাহ্ হেরোদ ঈসার কথা শুনতে পেলেন,
2 আর তাঁর কর্মচারীদেরকে বললেন, ইনি সেই বাপ্তিস্মদাতা ইয়াহিয়া; যিনি মৃতদের মধ্য থেকে জীবিত হয়ে উঠেছেন, আর সেজন্য পরাক্রমগুলো তাঁতে কাজ করে চলেছে।
3 কারণ হেরোদ আপন ভাই ফিলিপের স্ত্রী হেরোদিয়ার জন্য ইয়াহিয়াকে ধরে বেঁধে কারাগারে রেখেছিলেন;
4 কেননা ইয়াহিয়া তাকে বলেছিলেন, ওকে স্ত্রী হিসেবে রাখা আপনার উচিত নয়।
5 আর তিনি তাঁকে হত্যা করতে ইচ্ছা করলেও লোকদেরকে ভয় করতেন, কেননা লোকেরা তাঁকে নবী বলে মানতো।
6 কিন্তু হেরোদের জন্মদিনের উৎসব উপস্থিত হলে, হেরোদিয়ার কন্যা লোকদের মধ্যে নেচে হেরোদকে সন্তুষ্ট করলো।
7 এজন্য তিনি শপথপূর্বক এই ওয়াদা করলেন, তুমি যা চাইবে, তা-ই তোমাকে দেব।
8 তখন সে তার মায়ের পরামর্শ নিয়ে বললো, বাপ্তিস্মদাতা ইয়াহিয়ার মাথা থালায় করে এখানে আমাকে দিন।
9 এতে বাদশাহ্ দুঃখিত হলেন, কিন্তু যারা তাঁর সঙ্গে বসেছিল তাদের সম্মুখে তিনি শপথ করেছিলেন বলে তা দিতে হুকুম করলেন,
10 তিনি লোক পাঠিয়ে কারাগারে ইয়াহিয়ার মাথা কাটালেন।
11 আর তাঁর মাথাটি একখানি থালায় করে এনে সেই কন্যাকে দেওয়া হল; আর সে তা তার মায়ের কাছে নিয়ে গেল।
12 পরে তাঁর সাহাবীরা এসে লাশটি নিয়ে গিয়ে দাফন করলো এবং ঈসার কাছে এসে তাঁকে সংবাদ দিল।
13 ঈসা তা শুনে সেখান থেকে নৌকা যোগে একাকী একটি নির্জন স্থানে প্রস্থান করলেন; আর লোকেরা তা শুনে নানা নগর থেকে এসে স্থলপথে তাঁর পিছনে পিছনে চলতে লাগল।
14 তখন তিনি বের হয়ে অনেক লোক দেখে তাদের প্রতি করুণাবিষ্ট হলেন এবং তাদের অসুস্থ লোকদেরকে সুস্থ করলেন।
15 পরে সন্ধ্যা হলে সাহাবীরা কাছে এসে তাঁকে বললেন, এই স্থানটি নির্জন, বেলাও গেছে; লোকদেরকে বিদায় করুন যেন ওরা গ্রামে গ্রামে গিয়ে নিজেদের জন্য খাদ্যদ্রব্য ক্রয় করতে পারে।
16 ঈসা তাঁদেরকে বললেন, ওদের যাবার প্রয়োজন নেই, তোমরাই ওদেরকে খাবার দাও।
17 তাঁরা তাঁকে বললেন, আমাদের এখানে কেবল পাঁচখানি রুটি ও দু’টি মাছ ছাড়া আর কিছুই নেই।
18 তিনি বললেন, সেগুলো এখানে আমার কাছে আন।
19 পরে তিনি লোকদেরকে ঘাসের উপরে বসতে হুকুম করলেন; আর সেই পাঁচখানি রুটি ও দু’টি মাছ নিয়ে বেহেশতের দিকে তাকিয়ে দোয়া করলেন এবং রুটি কয়খানি ভেঙ্গে সাহাবীদেরকে দিলেন। সাহাবীরা তা লোকদেরকে দিলেন।
20 তাতে সকলে আহার করে তৃপ্ত হল এবং তাঁরা অবশিষ্ট গুঁড়াগাঁড়া পূর্ণ বারো ডালা তুলে নিলেন।
21 যারা আহার করেছিল তারা স্ত্রী ও শিশু ছাড়া আনুমানিক পাঁচ হাজার পুরুষ ছিল।
22 আর ঈসা তখনই সাহাবীদেরকে দৃঢ়ভাবে বলে দিলেন, যেন তাঁরা নৌকায় উঠে তাঁর আগে অন্য পারে যান, আর ইতোমধ্যে তিনি লোকদেরকে বিদায় করে দেবেন।
23 পরে তিনি লোকদেরকে বিদায় করে বিরলে মুনাজাত করার জন্য পর্বতে উঠলেন। সন্ধ্যা হলে তিনি সেই স্থানে একাকী থাকলেন।
24 কিন্তু নৌকাখানি স্থল থেকে অনেকটা দূরে গিয়ে পড়েছিল, ঢেউয়ে টলমল করছিল, কারণ বাতাস প্রতিকূল ছিল।
25 পরে রাতের চতুর্থ প্রহরে তিনি সমুদ্রের উপর দিয়ে হেঁটে তাঁদের কাছে আসলেন।
26 তখন সাহাবীরা তাঁকে সমুদ্রের উপর দিয়ে হাঁটতে দেখে ভীষণ ভয় পেয়ে বললেন, এ যে ভূত! আর ভয়ে চেঁচাতে লাগলেন।
27 কিন্তু ঈসা তখনই তাদের সঙ্গে কথা বললেন, বললেন, সাহস কর, এ আমি, ভয় করো না।
28 তখন পিতর জবাবে তাঁকে বললেন, হে প্রভু, যদি আপনি হন, তবে আমাকে পানির উপর দিয়ে আপনার কাছে যেতে হুকুম করুন।
29 তিনি বললেন, এসো; তাতে পিতর নৌকা থেকে নেমে পানির উপর দিয়ে হেঁটে ঈসার কাছে চললেন।
30 কিন্তু বাতাস দেখে তিনি ভয় পেলেন এবং ডুবে যেতে যেতে চিৎকার ডেকে বললেন, হে প্রভু, আমায় রক্ষা করুন।
31 তখনই ঈসা হাত বাড়িয়ে তাঁকে ধরলেন, আর তাঁকে বললেন, হে অল্পবিশ্বাসী, কেন সন্দেহ করলে?
32 পরে তাঁরা নৌকায় উঠলে বাতাস থেমে গেল।
33 আর যাঁরা নৌকায় ছিলেন, তাঁরা এসে তাঁকে সেজ্দা করে বললেন, সত্যিই আপনি আল্লাহ্র পুত্র।
34 পার হয়ে তাঁরা স্থলে, গিনেষরৎ প্রদেশে, উপস্থিত হলেন।
35 সেখানকার লোকেরা তাঁকে চিনতে পেরে চারদিকে সেই দেশের সর্বত্র সংবাদ পাঠালো এবং যত অসুস্থ লোক ছিল সকলকে তাঁর কাছে আনালো;
36 আর তাঁকে ফরিয়াদ করলো, যেন অসুস্থরা তাঁর চাদরের কিনারাটা কেবল স্পর্শ করতে পারে; আর যত লোক স্পর্শ করলো তারা সকলে সুস্থ হল।