1 তিনি অনেক লোক দেখে পর্বতে উঠলেন; আর তিনি বসলে পর তাঁর সাহাবীরা তাঁর কাছে আসলেন।
2 তখন তিনি মুখ খুলে তাঁদেরকে এই উপদেশ দিতে লাগলেন—
3 ধন্য যারা রূহে দীনহীন,কারণ বেহেশতী-রাজ্য তাদেরই।
4 ধন্য যারা শোক করে,কারণ তারা সান্ত্বনা পাবে।
5 ধন্য যারা মৃদুশীল,কারণ তারা দেশের অধিকারী হবে।
6 ধন্য যারা ধার্মিকতার জন্য ক্ষুধিত ওতৃষ্ণার্ত,কারণ তারা পরিতৃপ্ত হবে।
7 ধন্য যারা করুণা করে,কারণ তারা করুণা পাবে।
8 ধন্য যারা নির্মল অন্তরের অধিকারী,কারণ তারা আল্লাহ্র দর্শন পাবে।
9 ধন্য যারা মিলন করে দেয়,কারণ তারা আল্লাহ্র পুত্র বলেআখ্যায়িত হবে।
10 ধন্য যারা ধার্মিকতার জন্য নির্যাতিতহয়েছে,কারণ বেহেশতী-রাজ্য তাদেরই।
11 ধন্য তোমরা, যখন লোকে আমার জন্য তোমাদেরকে নিন্দা করে ও নির্যাতন করে এবং মিথ্যা করে তোমাদের বিরুদ্ধে সব রকম মন্দ কথা বলে।
12 আনন্দ করো, উল্লসিত হয়ো, কেননা বেহেশতে তোমাদের পুরস্কার প্রচুর; কারণ তোমাদের আগে যে নবীরা ছিলেন, তাঁদেরকে তারা সেইভাবে নির্যাতন করতো।
13 তোমরা দুনিয়ার লবণ, কিন্তু লবণের স্বাদ যদি চলে যায়, তবে তা কিভাবে লবণের গুণবিশিষ্ট করা যাবে? তা আর কোন কাজে লাগে না, কেবল বাইরে ফেলে দেবার ও লোকের পদতলে দলিত হবার যোগ্য হয়।
14 তোমরা দুনিয়ার নূর; পর্বতের উপরে অবস্থিত নগর গুপ্ত থাকতে পারে না।
15 আর লোকে প্রদীপ জ্বেলে ঢাকনার নিচে রাখে না, কিন্তু প্রদীপ-আসনের উপরেই রাখে, তাতে তা গৃহস্থিত সমস্ত লোককে আলো দেয়।
16 তেমনি তোমাদের নূর মানুষের সাক্ষাতে উজ্জ্বল হোক, যেন তারা তোমাদের সৎকর্ম দেখে তোমাদের বেহেশতী পিতার গৌরব করে।
17 মনে করো না যে, আমি শরীয়ত বা নবীদের কিতাব লোপ করতে এসেছি; আমি তা লোপ করতে আসি নি, কিন্তু পূর্ণ করতে এসেছি।
18 কেননা আমি তোমাদেরকে সত্যি বলছি, যে পর্যন্ত আসমান ও দুনিয়া শেষ না হবে, সেই পর্যন্ত শরীয়তের একটি মাত্রা বা একটি বিন্দুও মুছে যাবে না, সমস্তই সফল হবে।
19 অতএব যে কেউ এসব ক্ষুদ্রতম হুকুমের মধ্যে কোন একটি হুকুম লঙ্ঘন করে ও লোকদেরকে তা লঙ্ঘন করতে শিক্ষা দেয়, তাকে বেহেশতী-রাজ্যে অতি ক্ষুদ্র বলা যাবে; কিন্তু যে কেউ সেসব পালন করে ও শিক্ষা দেয়, তাকে বেহেশতী-রাজ্যে মহান বলা যাবে।
20 কেননা আমি তোমাদেরকে বলছি, আলেম ও ফরীশীদের চেয়ে তোমাদের ধার্মিকতা যদি বেশি না হয়, তবে তোমরা কোন মতে বেহেশতী-রাজ্যে প্রবেশ করতে পারবে না।
21 তোমরা শুনেছ, আগেকার দিনের লোকদের কাছে বলা হয়েছিল, “তুমি খুন করো না,” আর ‘যে খুন করে সে বিচারের দায়ে পড়বে’।
22 কিন্তু আমি তোমাদেরকে বলছি, যে কেউ আপন ভাইয়ের প্রতি ক্রোধ করে, সে বিচারের দায়ে পড়বে; আর যে কেউ আপন ভাইকে বলে, ‘রে নির্বোধ,’ সে মহাসভার বিচারের দায়ে পড়বে। আর যে কেউ বলে, ‘রে মূঢ়,’ সে দোজখের আগুনের দায়ে পড়বে।
23 অতএব তুমি যখন কোরবানগাহ্র কাছে তোমার নৈবেদ্য কোরবানী করছো, তখন সেই স্থানে যদি মনে পড়ে যে, তোমার বিরুদ্ধে তোমার ভাইয়ের কোন অনুযোগ আছে,
24 তবে সেই স্থানে কোরবানগাহ্র সম্মুখে তোমার নৈবেদ্য রাখ, আর চলে গিয়ে প্রথমে তোমার ভাইয়ের সঙ্গে সম্মিলিত হও, পরে এসে তোমার নৈবেদ্য কোরবানী করো।
25 তুমি যখন বিপক্ষের সঙ্গে পথে থাক, তখন তার সঙ্গে শীঘ্র মীমাংসা করো, পাছে বিপক্ষ তোমাকে বিচারকর্তার হাতে তুলে দেয় ও বিচারকর্তা তোমাকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়, আর তুমি কারাগারে নিক্ষিপ্ত হও।
26 আমি তোমাকে সত্যি বলছি, যতদিন শেষ পয়সাটা পর্যন্ত পরিশোধ না করবে, ততদিন তুমি কোন মতে সেই স্থান থেকে বাইরে আসতে পারবে না।
27 তোমরা শুনেছ, বলা হয়েছিল, “তুমি জেনা করো না”।
28 কিন্তু আমি তোমাদেরকে বলছি, যে কেউ কোন স্ত্রীলোকের প্রতি কামভাবে দৃষ্টিপাত করে, সে তখনই মনে মনে তার সঙ্গে জেনা করলো।
29 আর তোমার ডান চোখ যদি তোমাকে গুনাহ্ করায়, তবে তা উপড়ে দূরে ফেলে দাও; কেননা তোমার সমস্ত শরীর দোজখে নিক্ষিপ্ত হওয়ার চেয়ে বরং একটি অঙ্গের নাশ হওয়া তোমার পক্ষে ভাল।
30 আর তোমার ডান হাত যদি তোমাকে গুনাহ্ করায়, তবে তা কেটে দূরে ফেলে দাও; কেননা তোমার সমস্ত শরীর দোজখে যাওয়ার চেয়ে বরং একটি অঙ্গের নাশ হওয়া তোমার পক্ষে ভাল।
31 আর বলা হয়েছিল, “যে কেউ তার স্ত্রীকে তালাক দিতে চায় সে তাকে তালাক-নামা দিক্”।
32 কিন্তু আমি তোমাদেরকে বলছি, যে কেউ জেনা ছাড়া অন্য কারণে তার স্ত্রীকে তালাক দেয় সে তাকে জেনাকারিণী করে। যে ব্যক্তি সেই পরিত্যক্তা স্ত্রীকে বিয়ে করে, সেও জেনা করে।
33 আবার তোমরা শুনেছ, আগেকার দিনের লোকদের কাছে বলা হয়েছিল, ‘তুমি মিথ্যা কসম খেয়ো না, কিন্তু প্রভুর উদ্দেশে তোমার কসমগুলো পালন কোরো।’
34 কিন্তু আমি তোমাদেরকে বলছি, কোন কসমই খেয়ো না; বেহেশতের নামে কসম খেয়ো না, কেননা তা আল্লাহ্র সিংহাসন; দুনিয়ার নামে কসম খেয়ো না, কেননা তা তাঁর পাদপীঠ।
35 আর জেরুশালেমের নামে কসম খেয়ো না, কেননা তা মহান বাদশাহ্র নগরী।
36 আর তোমার মাথার নামে কসম খেয়ো না, কেননা একগাছি চুল সাদা বা কালো করার সাধ্য তোমার নেই।
37 কিন্তু তোমাদের কথা হ্যাঁ, হ্যাঁ, না, না, হোক; এর অতিরিক্ত যা, তা মন্দ থেকে জন্মে।
38 তোমরা শুনেছ, বলা হয়েছিল, “চোখের বদলে চোখ ও দাঁতের বদলে দাঁত”।
39 কিন্তু আমি তোমাদেরকে বলছি, তোমরা দুষ্টের প্রতিরোধ করো না; বরং যে কেউ তোমার ডান গালে চড় মারে, অন্য গাল তার দিকে ফিরিয়ে দাও।
40 আর যে তোমার সঙ্গে বিচার-স্থানে ঝগড়া করে তোমার কোর্তা নিতে চায়, তাকে জামাটাও নিতে দাও।
41 আর যে কেউ এক মাইল যেতে তোমাকে পীড়াপীড়ি করে, তার সঙ্গে দুই মাইল যাও।
42 যে তোমার কাছে কিছু চায়, তাকে দাও এবং যে তোমার কাছে ধার চায়, তা থেকে বিমুখ হয়ো না।
43 তোমরা শুনেছ, বলা হয়েছিল, “তোমার প্রতিবেশীকে মহব্বত করবে,” এবং “তোমার দুশমনকে ঘৃণা করবে”।
44 কিন্তু আমি তোমাদেরকে বলছি, তোমরা নিজ নিজ দুশমনদেরকে মহব্বত করো এবং যারা তোমাদেরকে নির্যাতন করে, তাদের জন্য মুনাজাত করো;
45 যেন তোমরা তোমাদের বেহেশতী পিতার সন্তান হও, কারণ তিনি ভাল-মন্দ লোকদের উপরে তাঁর সূর্য উদিত করেন এবং ধার্মিক-অধার্মিকদের উপরে বৃষ্টি বর্ষণ করেন।
46 কেননা যারা তোমাদেরকে মহব্বত করে, যদি তাদেরকেই তোমরা মহব্বত কর তবে তোমাদের কি পুরস্কার হবে? কর-আদায়কারীরাও কি সেই মত করে না?
47 আর তোমরা যদি কেবল আপন আপন ভাইদেরকে সালাম জানাও, তবে বেশি কি কাজ কর? অ-ইহুদীরাও কি সেরকম করে না?
48 অতএব তোমাদের বেহেশতী পিতা যেমন সিদ্ধ, তোমরাও তেমনি সিদ্ধ হও।