1 পরে যখন তাঁরা জেরুশালেমের নিকটবর্তী হয়ে জৈতুন পর্বতে, বৈৎফগী গ্রামে আসলেন, তখন ঈসা দু’জন সাহাবীকে পাঠিয়ে দিলেন,
2 তাঁদেরকে বললেন, তোমাদের সম্মুখে ঐ গ্রামে যাও। তোমরা অমনি দেখতে পাবে একটি গাধী বাঁধা আছে এবং তাঁর সঙ্গে একটি বাচ্চাও আছে, খুলে আমার কাছে আন।
3 আর যদি কেউ তোমাদেরকে কিছু বলে, তবে বলবে, এদের প্রভুর প্রয়োজন আছে; তাতে সে তখনই তাদেরকে পাঠিয়ে দেবে।
4 এরকম ঘটলো, যেন নবীর মধ্য দিয়ে বলা এই কালাম পূর্ণ হয়,
5 “তোমরা সিয়োন-কন্যাকে বল,দেখ, তোমার বাদশাহ্ তোমার কাছেআসছেন;তিনি মৃদুশীল ও গাধার উপরে উপবিষ্টএবং বাচ্চার, গাধার বাচ্চার উপরেউপবিষ্ট।”
6 পরে ঐ সাহাবীরা গিয়ে ঈসার হুকুম অনুসারে কাজ করলেন,
7 গাধীটিকে ও বাচ্চাটিকে আনলেন এবং তাদের উপরে তাদের কাপড় পেতে দিলেন, আর তিনি তাদের উপরে বসলেন।
8 আর ভিড়ের মধ্যে অধিকাংশ লোক নিজ নিজ কাপড় পথে পেতে দিল এবং অন্য অন্য লোক গাছের ডাল কেটে পথে ছড়িয়ে দিল।
9 আর যেসব লোক তাঁর সামনে ও পিছনে যাচ্ছিল, তারা চেঁচিয়ে বলতে লাগল,হোশান্না দাউদ-সন্তান,ধন্য, যিনি প্রভুর নামে আসছেন;ঊর্ধ্বলোকে হোশান্না।
10 আর তিনি জেরুশালেমে প্রবেশ করলে নগরময় হুলস্থূল পড়ে গেল; সকলে বললো, উনি কে?
11 তাতে লোকেরা বললো, উনি সেই নবী, গালীলের নাসরতীয় ঈসা।
12 পরে ঈসা বায়তুল-মোকাদ্দসে প্রবেশ করলেন এবং যত লোক সেখানে ক্রয়-বিক্রয় করছিল, তাদের সকলকে বের করে দিলেন এবং মহাজনদের টেবিল ও যারা কবুতর বিক্রি করছিল, তাদের আসনগুলো উল্টিয়ে ফেললেন,
13 আর তাদেরকে বললেন, লেখা আছে, “আমার গৃহ মুনাজাতের-গৃহ বলে আখ্যাত হবে,” কিন্তু তোমরা এটাকে “দস্যুদের গহ্বর” করে তুলছো।
14 পরে অন্ধেরা ও খঞ্জেরা বায়তুল-মোকাদ্দসে তাঁর কাছ আসল, আর তিনি তাদেরকে সুস্থ করলেন।
15 কিন্তু প্রধান ইমামেরা ও আলেমেরা তাঁর কৃত অলৌকিক কাজগুলো দেখে, আর যে বালকেরা ‘হোশান্না দাউদ-সন্তান,’ বলে বায়তুল-মোকাদ্দসে চেঁচাচ্ছিল, তাদেরকে দেখে রুষ্ট হল;
16 এবং তাঁকে বললো, শুনছো, এরা কি বলছে? ঈসা তাদেরকে বললেন, হ্যাঁ, তোমরা কি কখনও পাঠ কর নি যে, “তুমি শিশু ও দুগ্ধপোষ্যদের মুখ থেকে প্রশংসা-গজল সম্পন্ন করেছ”?
17 পরে তিনি তাদেরকে ছেড়ে নগরের বাইরে বৈথনিয়ায় গেলেন, আর সেই স্থানে রাত্রি যাপন করলেন।
18 খুব ভোরে নগরে ফিরে যাবার সময়ে তাঁর খিদে পেল।
19 পথের পাশে একটা ডুমুর গাছ দেখে তিনি তার কাছে গেলেন এবং পাতা ছাড়া আর কিছুই দেখতে পেলেন না। তখন তিনি গাছটিকে বললেন, আর কখনও তোমাতে ফল না ধরুক; আর হঠাৎ সেই ডুমুর গাছটা শুকিয়ে গেল।
20 তা দেখে সাহাবীরা আশ্চর্য জ্ঞান করে বললেন, ডুমুরগাছটা হঠাৎ কেমন করে শুকিয়ে গেল?
21 জবাবে ঈসা তাদেরকে বললেন, আমি তোমাদেরকে সত্যি বলছি, যদি তোমাদের ঈমান থাকে, আর সন্দেহ না কর, তবে তোমরা কেবল ডুমুর গাছের প্রতি এরকম করতে পারবে, তা নয়, কিন্তু এই পর্বতকেও যদি বল, ‘উপড়ে গিয়ে সাগরে পড়,’ তবে তা-ই হবে।
22 আর তোমরা মুনাজাতে বিশ্বাসপূর্বক যা কিছু যাচ্ঞা করবে, সে সবই পাবে।
23 পরে তিনি বায়তুল-মোকাদ্দসে আসলে পর তাঁর উপদেশ দেবার সময়ে প্রধান ইমামেরা ও লোকদের প্রাচীনবর্গরা কাছে এসে বললো, তুমি কি ক্ষমতায় এসব করছো? আর কেই বা তোমাকে এই ক্ষমতা দিয়েছে?
24 জবাবে ঈসা তাদেরকে বললেন, আমিও তোমাদেরকে একটি কথা জিজ্ঞাসা করবো; তা যদি আমাকে বল, তবে কি ক্ষমতায় এসব করছি, তা আমিও তোমাদেরকে বলবো।
25 ইয়াহিয়া বাপ্তিস্ম দেবার অধিকার কোথা থেকে পেয়েছিল? বেহেশত থেকে না মানুষ থেকে? তখন তারা পরস্পর তর্ক করে বললো, যদি বলি বেহেশত থেকে, তা হলে সে আমাদেরকে বলবে, তবে তোমরা তাঁর উপর ঈমান আন নি কেন?
26 আর যদি বলি, মানুষ থেকে, লোক-সাধারণকে ভয় করি; কারণ সকলে ইয়াহিয়াকে নবী বলে মানে।
27 তখন তারা ঈসাকে জবাবে বললো, আমরা জানি না। তিনিও তাদেরকে বললেন, তবে আমিও কি ক্ষমতায় এসব করছি, তোমাদেরকে বলবো না।
28 কিন্তু তোমাদের কি মনে হয়? এক ব্যক্তির দুই পুত্র ছিল; তিনি প্রথম জনের কাছে গিয়ে বললেন, বৎস, যাও, আজ আঙ্গুর-ক্ষেতে কাজ কর।
29 সে জবাবে বললো, আমি যাবো না; শেষে অনুশোচনা করে গেল।
30 পরে তিনি দ্বিতীয় জনের কাছে গিয়ে সেই একই কথা বললেন। সে জবাবে বললো, জ্বী আব্বা, আমি যাচ্ছি; কিন্তু গেল না।
31 সেই দুইয়ের মধ্যে কে পিতার ইচ্ছা পালন করলো? তারা বললো, প্রথম জন। ঈসা তাদেরকে বললেন, আমি তোমাদেরকে সত্যি বলছি, কর-আদায়কারী ও পতিতারা তোমাদের আগে আল্লাহ্র রাজ্যে প্রবেশ করছে।
32 কেননা ইয়াহিয়া ধার্মিকতার পথ দিয়ে তোমাদের কাছে আসলেন, আর তোমরা তাঁর উপর ঈমান আনলে না; কিন্তু কর-আদায়কারী ও পতিতারা তাঁর উপর ঈমান আনলো; কিন্তু তোমরা তা দেখেও কোন অনুশোচনা করলে না ও তাঁর উপর ঈমান আনলে না।
33 আর একটি দৃষ্টান্ত শোন; এক জন গৃহকর্তা ছিলেন, তিনি আঙ্গুরের ক্ষেত প্রস্তুত করে তার চারদিকে বেড়া দিলেন ও তার মধ্যে আঙ্গুর-কুণ্ড খনন করলেন এবং উঁচু পাহারা-ঘর নির্মাণ করলেন; পরে কৃষকদেরকে তা জমা দিয়ে অন্য দেশে চলে গেলেন।
34 আর ফলের সময় সন্নিকট হলে তিনি নিজের ফল গ্রহণ করার জন্য কৃষকদের কাছে তাঁর গোলামদেরকে প্রেরণ করলেন।
35 তখন কৃষকেরা তাঁর গোলামদেরকে ধরে এক জনকে প্রহার করলো, অন্য এক জনকে খুন করলো, আরেকজনকে পাথর মারলো।
36 আবার তিনি প্রথম বারের চেয়ে আরও বেশী গোলাম প্রেরণ করলেন; তাদের প্রতিও তারা সেই মত ব্যবহার করলো।
37 অবশেষে তিনি তাঁর পুত্রকে তাদের কাছে প্রেরণ করলেন, বললেন, তারা আমার পুত্রকে সম্মান করবে।
38 কিন্তু কৃষকেরা পুত্রকে দেখে পরস্পর বললো, এই ব্যক্তিই উত্তরাধিকারী, এসো, আমরা একে হত্যা করে এর অধিকার হস্তগত করি।
39 পরে তারা তাঁকে ধরে আঙ্গুর-ক্ষেতের বাইরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করলো।
40 অতএব আঙ্গুর-ক্ষেতের মালিক যখন আসবেন, তখন সেই কৃষকদেরকে কি করবেন?
41 তারা তাঁকে বললো, সেই দুষ্টদেরকে নিদারুণভাবে বিনষ্ট করবেন এবং সেই ক্ষেত এমন অন্য কৃষকদেরকে জমা দেবেন, যারা ফলের সময়ে তাঁকে ফল দেবে।
42 ঈসা তাদেরকে বললেন, তোমরা কি কখনও পাক-কিতাবে পাঠ কর নি,“যে পাথরটি রাজমিস্ত্রিরা অগ্রাহ্য করেছে,তা-ই কোণের প্রধান পাথর হয়ে উঠলো;তা প্রভু থেকেই হয়েছেআর তা আমাদের দৃষ্টিতে অদ্ভুত লাগে”?
43 এজন্য আমি তোমাদেরকে বলছি, তোমাদের কাছ থেকে আল্লাহ্র রাজ্য কেড়ে নেওয়া যাবে এবং এমন এক জাতিকে দেওয়া হবে, যে জাতি তার ফল দেবে।
44 আর এই পাথরের উপরে যে পড়বে, সে ভেঙ্গে যাবে; কিন্তু এই পাথর যার উপরে পড়বে, তাকে চুরমার করে ফেলবে।
45 তাঁর এসব দৃষ্টান্ত শুনে প্রধান ইমামেরা ও ফরীশীরা বুঝলো যে, তিনি তাদেরই বিষয় বলছেন।
46 আর তারা তাঁকে ধরতে চেষ্টা করলো, কিন্তু লোকসাধারণকে ভয় করাতে তা করলো না, কেননা লোকে তাঁকে নবী বলে মান্য করতো।