1 যাকোবও তাঁর পথে চললেন। পথে এক জায়গায় তিনি ঈশ্বরের দূতদের দেখলেন।
2 তাঁদের দেখে তিনি বললেন, “এটা ঈশ্বরের ছাউনি।” এইজন্য তিনি সেই জায়গার নাম রাখলেন মহনয়িম (যার মানে “দুই ছাউনি”)।
3 যাকোব তাঁর আগে আগে সেয়ীর, অর্থাৎ ইদোম দেশে তাঁর ভাই এষৌর কাছে কয়েকজন লোক পাঠালেন।
4 তিনি তাদের বলে দিলেন যেন তারা তাঁর মনিব এষৌকে জানায় যে, তাঁর দাস যাকোব বলছে, “আমি এই পর্যন্ত লাবনের কাছে ছিলাম।
5 আমার গরু-গাধা, ছাগল-ভেড়া এবং দাস-দাসী সবই আছে। আমার মনিবের কাছে দয়া পাব এই আশা করেই আমি আগে থেকেই আপনাকে খবর দিচ্ছি।”
6 লোকগুলো ফিরে এসে যাকোবকে বলল, “আমরা আপনার ভাই এষৌর কাছে গিয়েছিলাম। তিনি এখন চারশো লোক নিয়ে আপনার সংগে দেখা করতে আসছেন।”
7 এই কথা শুনে ভীষণ ভয়ে যাকোবের মন অস্থির হয়ে উঠল। তিনি তাঁর সংগের লোকজন, ছাগল-ভেড়া, গরু-গাধা ও উট দুই দলে ভাগ করলেন।
8 তিনি ভাবলেন, এষৌ যদি এসে এক দলকে আক্রমণ করে তবে অন্য দলটি পালাতে পারবে।
9 যাকোব ঈশ্বরের কাছে এই বলে প্রার্থনা করলেন, “হে সদাপ্রভু, আমার পূর্বপুরুষ অব্রাহামের ঈশ্বর, আমার বাবা ইস্হাকের ঈশ্বর, তুমিই তো আমাকে বলেছ আমার দেশে, আমার নিজের লোকদের কাছে ফিরে যেতে, আর সেখানেই তুমি আমার মংগল করবে।
10 তোমার এই দাসকে তুমি যে সমস্ত দয়া ও বিশ্বস্ততা দেখিয়েছ আমি তার যোগ্য নই। কেবল একখানা লাঠি হাতে নিয়ে আমি এই যর্দন নদী পার হয়েছিলাম, কিন্তু এখন আমার সংগে রয়েছে দু’টা বড় দল।
11 আমি মিনতি করি, আমার ভাই এষৌর হাত থেকে তুমি আমাকে রক্ষা কর। আমার ভয় হচ্ছে সে এসে আমাদের মেরে ফেলবে, মা-শিশু কাউকেই রেহাই দেবে না।
12 কিন্তু তুমি তো বলেছিলে, ‘আমি নিশ্চয়ই তোমার মংগল করব এবং তোমার বংশের লোকদের সমুদ্র পারের বালুকণার মত করব যা গুণে শেষ করা যায় না।’ ”
13 যাকোব সেই রাতটা সেখানেই কাটালেন। তাঁর যা কিছু ছিল তার মধ্য থেকে তিনি তাঁর ভাই এষৌর জন্য একটা উপহার ঠিক করে রাখলেন।
14-15 তা হল, দু’শো ছাগী ও বিশটা ছাগল, দু’শো ভেড়ী ও বিশটা ভেড়া, বাচ্চা সুদ্ধ ত্রিশটা দুধালো উট, চল্লিশটা গাভী ও দশটা ষাঁড়, বিশটা গাধী ও দশটা গাধা।
16 সেগুলো বিভিন্ন দলে ভাগ করে দাসদের হাতে দিয়ে তিনি তাদের বলে দিলেন, “প্রত্যেকটি দলের শেষে কিছু জায়গা রেখে তোমরা আমার আগে আগে যাও।”
17 প্রথম দলের দাসকে তিনি আদেশ দিয়ে বললেন, “আমার ভাই এষৌর সংগে দেখা হলে তিনি যখন জিজ্ঞাসা করবেন, ‘কোথায় যাচ্ছ? তুমি কার লোক? তোমার সামনের ঐ পশুগুলোই বা কার? ’
18 তখন তুমি বলবে, ‘এগুলো আপনার দাস যাকোবের। তিনি আমার মনিব এষৌর জন্য এই উপহার পাঠিয়েছেন, আর তিনি আমাদের পিছনেই আছেন।’ ”
19 এইভাবে তিনি দ্বিতীয়, তৃতীয় এবং অন্যান্য দাস যারা পশুর দল নিয়ে যাচ্ছিল তাদের প্রত্যেককেই আদেশ দিলেন, “এষৌর সংগে দেখা হলে তোমরাও ঠিক এই কথাই বলবে।
20 আর শেষে বলবে, ‘আপনার দাস যাকোব আমাদের পিছনেই আছেন।’ ”যাকোব মনে মনে এই চিন্তা করলেন, “আমার আগে আগে যে উপহার যাচ্ছে তা দিয়ে আমি তাঁকে শান্ত করে নেব। তার পরে যখন তাঁর সংগে আমার দেখা হবে তখন আমাকে গ্রহণ করতে হয়তো তাঁর কোন আপত্তি থাকবে না।”
21 কাজেই উপহারের জিনিসগুলো তাঁর আগে চলে গেল, কিন্তু সেই রাতটা তিনি সেখানেই কাটালেন।
22 সেই রাতেই যাকোব উঠে তাঁর দুই স্ত্রী, দুই দাসী ও এগারোজন ছেলেকে হেঁটে পার হওয়া যায় এমন একটা জায়গা দিয়ে যব্বোক নদীর ওপারে রেখে আসলেন।
23 তাঁর আর যা কিছু ছিল সেই সবও তাদের সংগে পাঠিয়ে দিলেন।
24 তাতে যাকোব একাই রয়ে গেলেন। তখন একজন লোক এসে ভোর না হওয়া পর্যন্ত তাঁর সংগে কুস্তি করলেন।
25 সেই লোকটি যখন দেখলেন যে, তিনি যাকোবকে হারাতে পারছেন না তখন কুস্তি চলবার সময় তিনি যাকোবের ঊরুর জোড়ায় আঘাত করলেন। তাতে তাঁর ঊরুর হাড় ঠিক জায়গা থেকে সরে গেল।
26 তখন সেই লোকটি বললেন, “ভোর হয়ে আসছে, এবার আমাকে ছেড়ে দাও।”যাকোব বললেন, “আমাকে আশীর্বাদ না করা পর্যন্ত আমি আপনাকে ছাড়ব না।”
27 লোকটি বললেন, “তোমার নাম কি?”তিনি বললেন, “আমার নাম যাকোব।”
28 লোকটি বললেন, “তুমি ঈশ্বর ও মানুষের সংগে যুদ্ধ করে জয়ী হয়েছ বলে তোমার নাম আর যাকোব থাকবে না, তোমার নাম হবে ইস্রায়েল (যার মানে ‘যিনি ঈশ্বরের সংগে যুদ্ধ করেন’)।”
29 যাকোব তাঁকে বললেন, “মিনতি করি, আপনি বলুন আপনার নাম কি?”তিনি বললেন, “তুমি আমার নাম জিজ্ঞাসা করছ কেন?” এই কথা বলেই তিনি যাকোবকে আশীর্বাদ করলেন।
30 তখন যাকোব সেই জায়গাটার নাম রাখলেন পনূয়েল (যার মানে “ঈশ্বরের মুখ”)। তিনি বললেন, “আমি ঈশ্বরকে সামনাসামনি দেখেও বেঁচে রয়েছি।”
31 যাকোব যখন পনূয়েল থেকে রওনা দিলেন তখন সূর্য উঠে গেছে। তাঁর ঊরুর অবস্থার জন্য তিনি খোঁড়াতে লাগলেন।
32 এইজন্যই ইস্রায়েলীয়েরা আজও ঊরুর জোড়ার উপরকার মাংস খায় না, কারণ ঊরুর জোড়ার উপরেই যাকোবকে আঘাত করা হয়েছিল।