1 যোষেফ ফরৌণের কাছে গিয়ে বললেন, “আমার বাবা ও ভাইয়েরা তাঁদের ছাগল, ভেড়া, গরু এবং তাঁদের সব কিছু নিয়ে কনান দেশ ছেড়ে চলে এসেছেন। তাঁরা এখন গোশনে এসে পৌঁছেছেন।”
2 ভাইদের মধ্য থেকে পাঁচজনকে বেছে নিয়ে তিনি ফরৌণের সামনে উপস্থিত করলেন।
3 ফরৌণ তাদের জিজ্ঞাসা করলেন, “আপনারা কি কাজ করেন?”তারা বলল, “আপনার এই দাসেরা ছাগল-ভেড়া চরায়। তাদের পূর্বপুরুষেরাও তাই করতেন।”
4 তারা আরও বলল, “আমরা এই দেশে কিছুকালের জন্য থাকতে এসেছি। কনান দেশে এখন ভীষণ দুর্ভিক্ষ চলছে বলে সেখানে আমাদের ছাগল-ভেড়ার চরে খাবার ঘাস নেই। তাই দয়া করে আপনার দাসদের গোশনে থাকবার অনুমতি দিন।”
5 ফরৌণ যোষেফকে বললেন, “তোমার বাবা ও ভাইয়েরা তোমার কাছেই এসেছেন।
6 গোটা মিসর দেশটাই তো তোমার সামনে পড়ে আছে। দেশের সবচেয়ে ভাল জায়গায় তোমার বাবা ও ভাইদের বাস করতে দাও। তাঁরা গোশনেই বাস করুন। তাঁদের মধ্যে যোগ্য লোক পেলে তাঁদের উপর আমার পশুপালেরও ভার দাও।”
7 এর পর যোষেফ তাঁর বাবা যাকোবকে এনে ফরৌণের সামনে উপস্থিত করলেন, আর যাকোব ফরৌণকে আশীর্বাদ করলেন।
8 ফরৌণ যাকোবকে জিজ্ঞাসা করলেন, “আপনার বয়স কত হল?”
9 যাকোব বললেন, “এই পৃথিবীতে কিছুদিনের বাসিন্দা হিসাবে আমার একশো ত্রিশ বছর কেটে গেছে। এই দিনগুলোর সংখ্যা খুব বেশী নয়, আর তা দুঃখেই কেটেছে। তবে কিছুদিনের বাসিন্দা হিসাবে আমার পূর্বপুরুষেরা যতদিন কাটিয়ে গেছেন আমি ততদিন কাটাতে পারি নি।”
10 এর পর যাকোব ফরৌণকে আশীর্বাদ করে সেখান থেকে বিদায় নিলেন।
11 যোষেফ তাঁর বাবা ও ভাইদের স্থায়ীভাবে বসবাসের ব্যবস্থা করলেন। ফরৌণের আদেশ মত মিসর দেশের সবচেয়ে ভাল জায়াগাটাই তিনি তাঁদের সম্পত্তি হিসাবে দান করলেন। জায়গাটার নাম ছিল রামিষেষ।
12 যোষেফ তাঁর বাবা, ভাইদের ও তাঁদের পরিবারগুলোকে খাবারের যোগান দিতে লাগলেন। ছেলেমেয়েদের সংখ্যা হিসাবেই তা দেওয়া হত।
13 পরে দুর্ভিক্ষের অবস্থা এমন ভীষণ হয়ে উঠল যে, সারা দেশের কোথাও আর খাবার রইল না। দুর্ভিক্ষের দরুন মিসর এবং কনান দেশ একেবারে কাহিল হয়ে পড়ল।
14 মিসর এবং কনান দেশের লোকেরা যে শস্য কিনল তার দাম বাবদ যোষেফ ঐ দু’টা দেশে যত টাকা ছিল তা তুলে নিয়ে ফরৌণের রাজবাড়ীতে জমা দিলেন।
15 যখন মিসর ও কনান দেশের সব টাকা ফুরিয়ে গেল তখন মিসরীয়েরা যোষেফের কাছে এসে বলল, “আমাদের খেতে দিন। আমরা কি আপনার চোখের সামনেই মারা যাব? টাকা-পয়সা আমাদের যা ছিল সব ফুরিয়ে গেছে।”
16 যোষেফ বললেন, “তাহলে তোমাদের গরু-ভেড়া সব আমাকে দাও। তোমাদের টাকা যখন ফুরিয়ে গেছে তখন ওগুলোর বদলেই আমি তোমাদের খাবার দেব।”
17 তখন তারা তাদের সব গরু-ভেড়া যোষেফের কাছে আনতে লাগল। ছাগল, ভেড়া, গরু, ঘোড়া ও গাধার বদলে তিনি তাদের খাবার দিতে লাগলেন। সমস্ত পশু জমা রেখে তিনি গোটা বছরটাই তাদের খাওয়ালেন।
18 সেই বছরটা কেটে গেলে পর তার পরের বছরে লোকেরা এসে যোষেফকে বলল, “হুজুরের কাছে আমরা লুকাব না যে, আমাদের টাকা-পয়সা সব খরচ হয়ে গেছে, আর আমাদের পশুগুলোও হুজুরের। এখন আমাদের এই দেহ এবং জায়গা-জমি ছাড়া হুজুরকে দেবার মত আর আমাদের কিছুই নেই।
19 তাই জমি সুদ্ধ আমরা সবাই আপনার চোখের সামনেই শেষ হয়ে যাব কেন? সেইজন্য আপনি আমাদের ও আমাদের জায়গা-জমি সব নিয়ে নিন, আর তার বদলে আমাদের খাবার দিন। জায়গা-জমি সুদ্ধ আমরা সবাই ফরৌণের দাস হয়ে থাকব। এর পরে আমরা যাতে মারা না গিয়ে প্রাণে বেঁচে থাকতে পারি সেইজন্য আপনি আমাদের কিছু বীজও দিন। তাহলে আমাদের জমিও নষ্ট হবে না।”
20 তখন যোষেফ মিসর দেশের সমস্ত জমি ফরৌণের নামে কিনে নিলেন। দুর্ভিক্ষ এমন ভীষণ হল যে, মিসরীয়েরা সকলেই তাদের জায়গা-জমি বিক্রি করে দিল। এইভাবেই মিসর দেশের সমস্ত জায়গা-জমি ফরৌণের হাতে এসে গেল।
21 যোষেফ মিসর দেশের এক সীমা থেকে অন্য সীমা পর্যন্ত যত লোক ছিল তাদের সবাইকে শহরে সরিয়ে আনলেন।
22 তিনি কেবল পুরোহিতদের জায়গা-জমি কিনলেন না। এই পুরোহিতেরা ফরৌণের কাছ থেকে ভাতা পেতেন এবং তা দিয়েই তাঁরা চলতেন। সেইজন্য তাঁরা তাঁদের জমি বিক্রি করেন নি।
23 যোষেফ লোকদের বললেন, “দেখ, ফরৌণের পক্ষ থেকে আমি আজ তোমাদের এবং তোমাদের জায়গা-জমি কিনে নিলাম। তোমরা এখন এই বীজ নাও, আর তা নিয়ে জমিতে বোন।
24 ফসল কাটবার পর তোমরা সব ফসলের পাঁচ ভাগের এক ভাগ ফরৌণকে দেবে, আর বাকী চার ভাগ জমির বীজের জন্য এবং নিজের ও পরিবারের লোকদের আর ছেলেমেয়েদের খাবারের জন্য রাখবে।”
25 তখন লোকেরা বলল, “আপনি আমাদের প্রাণ বাঁচিয়েছেন। হুজুরের দয়া পেয়ে আমরা ফরৌণের দাস হয়ে থাকব।”
26 পরে যোষেফ মিসর দেশের জায়গা-জমি সম্বন্ধে এই আইন পাশ করলেন যে, সব ফসলের পাঁচ ভাগের এক ভাগ ফরৌণের হবে। এই আইনটা আজও মিসর দেশে চলছে। কেবল পুরোহিতদের জমিগুলোই ফরৌণের সম্পত্তির মধ্যে পড়ে নি।
27 ইস্রায়েলীয়েরা মিসর দেশের গোশনে বাস করতে লাগল। সেখানে তারা জায়গা-জমি করল। তাদের অনেক সন্তান হল এবং তারা সংখ্যায় অনেক বেড়ে উঠল।
28 যাকোব মিসর দেশে আরও সতেরো বছর বেঁচে রইলেন। কাজেই তিনি মোট একশো সাতচল্লিশ বছর বেঁচে ছিলেন।
29 মৃত্যুর কিছুদিন আগে ইস্রায়েল তাঁর ছেলে যোষেফকে ডেকে বললেন, “যদি আমার প্রতি তোমার টান থাকে তবে আমার ঊরুর নীচে তোমার হাত রেখে আমাকে কথা দাও যে, তুমি আমার প্রতি তোমার কর্তব্যে বিশ্বস্ত থাকবে। আমাকে মিসরে কবর দিয়ো না,
30 কারণ আমি আমার পূর্বপুরুষদের মধ্যে কবর পেতে চাই। তুমি আমার মৃতদেহ মিসর দেশ থেকে বের করে নিয়ে গিয়ে আমার পূর্বপুরুষেরা যেখানে কবর পেয়েছেন সেখানেই আমাকে কবর দিয়ো।”যোষেফ বললেন, “তুমি যা বললে আমি তা-ই করব।”
31 তখন যাকোব বললেন, “তাহলে তুমি আমার কাছে শপথ কর।” যোষেফ তাঁর কাছে শপথ করলেন। তখন ইস্রায়েল বিছানার মাথার দিকে তাঁর মাথা ঠেকিয়ে ঈশ্বরকে অন্তরের ভক্তি জানালেন।