1 যাকোব কনান দেশেই বাস করতে লাগলেন। তাঁর বাবাও সেখানে বাস করতেন।
2 এই হল যাকোবের পরিবারের কাহিনী। যোষেফ তাঁর ভাইদের সংগে ছাগল ও ভেড়ার পাল চরাতেন। তাঁর এই ভাইয়েরা ছিল তাঁর সৎমা বিল্হা ও সিল্পার ছেলে। তাঁর বয়স যখন সতেরো বছর তখন তিনি তাঁর এই ভাইদের খারাপ চালচলনের কথা তাঁর বাবাকে জানালেন।
3 বুড়ো বয়সের সন্তান বলে যোষেফকে ইস্রায়েল তাঁর অন্য ছেলেদের চেয়ে বেশী ভালবাসতেন। তিনি তাঁকে একটা পুরো হাতার লম্বা জামা বানিয়ে দিয়েছিলেন।
4 ভাইয়েরা যখন বুঝল যে, বাবা তাদের চেয়ে যোষেফকেই বেশী ভালবাসেন তখন তারা তাঁকে হিংসা করতে লাগল। তারা কোন কথাই তাঁর সংগে ভাল মনে বলতে পারত না।
5 একদিন যোষেফ একটা স্বপ্ন দেখলেন। তিনি সেই কথা তাঁর ভাইদের বলাতে তারা তাঁকে আরও বেশী হিংসা করতে লাগল।
6 যোষেফ তাদের বলেছিলেন, “শোন, আমি একটা স্বপ্ন দেখেছি।
7 আমি দেখলাম, আমরা ক্ষেতে কেটে রাখা শস্যের আঁটি বাঁধছি; কিন্তু আশ্চর্য এই যে, আমার আঁটিটা সোজা হয়ে উঠে দাঁড়াল। তারপর তোমাদের আঁটিগুলো আমার আঁটিটাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে প্রণাম করল।”
8 তখন তাঁর ভাইয়েরা তাঁকে বলল, “তুই কি সত্যিই ভাবছিস্ তুই রাজা হবি আর আমাদের উপর হুকুম চালাবি?” এইভাবে তাঁর স্বপ্ন আর তাঁর কথার জন্য তাঁর ভাইয়েরা তাঁকে আরও বেশী করে হিংসা করতে লাগল।
9 এর পর যোষেফ আরও একটা স্বপ্ন দেখলেন এবং তাঁর ভাইদের জানালেন। তিনি বললেন, “দেখ, আমি আবার একটা স্বপ্ন দেখেছি। আমি দেখলাম সূর্য, চাঁদ আর এগারোটা তারা আমাকে প্রণাম করছে।”
10 এই স্বপ্নের কথা তিনি তাঁর বাবা ও ভাইদের কাছে বললে পর তাঁর বাবা তাঁকে বকুনি দিয়ে বললেন, “তুমি এ কি রকম স্বপ্ন দেখলে? তোমার মা, ভাইয়েরা এবং আমি কি সত্যিই এসে তোমার সামনে মাটিতে উবুড় হয়ে তোমাকে প্রণাম করব?”
11 এর পর যোষেফের প্রতি তাঁর ভাইদের মন হিংসায় ভরে উঠল, কিন্তু তাঁর বাবা কথাগুলো মনে গেঁথে রাখলেন, কাউকে বললেন না।
12 পরে যোষেফের ভাইয়েরা তাদের বাবার ছাগল ও ভেড়া চরাবার জন্য শিখিমে গেল।
13 তখন একদিন ইস্রায়েল যোষেফকে বললেন, “তোমার ভাইয়েরা শিখিমে ছাগল ও ভেড়ার পাল চরাচ্ছে। আমি চাই যেন তুমি তাদের কাছে যাও।”যোষেফ বললেন, “আচ্ছা, আমি যাব।”
14-15 ইস্রায়েল তাঁকে আরও বললেন, “তোমার ভাইয়েরা আর ছাগল-ভেড়াগুলো কি অবস্থায় আছে তুমি গিয়ে সেই খবর নিয়ে এস।” এই বলে তিনি যোষেফকে হিব্রোণ উপত্যকা থেকে পাঠালেন।যোষেফ যখন শিখিমে গিয়ে উপস্থিত হলেন তখন একজন লোক তাঁকে মাঠের মধ্যে ঘোরাফেরা করতে দেখে জিজ্ঞাসা করল, “তুমি কিসের খোঁজ করছ?”
16 যোষেফ বললেন, “আমি আমার ভাইদের খুঁজছি। আপনি কি জানেন তাঁরা কোথায় ছাগল ও ভেড়ার পাল চরাচ্ছেন?”
17 লোকটি বলল, “তারা এখান থেকে চলে গেছে। আমি তাদের বলতে শুনেছিলাম, ‘চল, আমরা দোথনে যাই।’ ” তখন যোষেফ তাঁর ভাইদের খোঁজে দোথনে গিয়ে তাদের দেখা পেলেন।
18 ভাইয়েরা দূর থেকে যোষেফকে দেখতে পেল এবং তাদের কাছে গিয়ে পৌঁছাবার আগেই তারা তাঁকে মেরে ফেলবার ষড়যন্ত্র করল।
19 তারা একে অন্যকে বলল, “ঐ দেখ, স্বপ্ন-দর্শক আসছে।
20 চল, এখনই আমরা ওকে শেষ করে একটা গর্তের মধ্যে ফেলে দিই। পরে আমরা বলব, কোন বুনো জানোয়ার তাকে খেয়ে ফেলেছে, আর তার পরে আমরা দেখব ওর স্বপ্নের দশাটা কি হয়।”
21 কিন্তু রূবেণ এই কথা শুনে তাদের হাত থেকে তাঁকে উদ্ধার করবার চেষ্টায় বলল, “ওকে প্রাণে মেরো না।”
22 সে তাদের পরামর্শ দিয়ে বলল, “খুন-খারাবি করতে যেয়ো না। ওর গায়ে হাত না তুলে বরং ওকে এই মরু-এলাকার এই গর্তটার মধ্যে ফেলে দাও।” পরে যোষেফকে তাদের হাত থেকে উদ্ধার করে বাবার হাতে তুলে দেবে মনে করেই সে এই কথাটা বলল।
23 যোষেফ তাঁর ভাইদের কাছে এসে পৌঁছামাত্র তারা জোর করে তাঁর গা থেকে সেই পুরো হাতার লম্বা জামাটা খুলে নিল।
24 তারপর তারা তাঁকে ধরে সেই গর্তের মধ্যে ফেলে দিল। গর্তটায় কোন জল ছিল না, সেটা খালি ছিল।
25 এর পর যোষেফের ভাইয়েরা খাওয়া-দাওয়া করতে বসে দেখতে পেল গিলিয়দ থেকে একদল ইশ্মায়েলীয় ব্যবসায়ী আসছে। উটের পিঠে করে তারা সুগন্ধি মসলা, গুগ্গুলু ও গন্ধরস নিয়ে মিসর দেশে যাচ্ছিল।
26 তখন যিহূদা তার ভাইদের বলল, “ধর, ভাইকে মেরে ফেলে আমরা কথাটা গোপন করলাম। তাতে আমাদের লাভটা কি?
27 ও তো আমাদের নিজের ভাই, আমাদেরই রক্ত-মাংস। তাই ওর গায়ে হাত না দিয়ে বরং এস, আমরা ওকে ইশ্মায়েলীয়দের কাছে বিক্রি করে দিই।” ভাইয়েরা তার কথাটা মেনে নিল।
28 সেই মিদিয়নীয় ব্যবসায়ীরা কাছে আসতেই ভাইয়েরা যোষেফকে গর্ত থেকে টেনে তুলল এবং বিশ টুকরা রূপার বদলে ইশ্মায়েলীয়দের কাছে তাঁকে বেঁচে দিল। সেই ব্যবসায়ীরা যোষেফকে মিসরে নিয়ে গেল।
29-30 পরে রূবেণ সেই গর্তের কাছে গিয়ে যোষেফকে দেখতে না পেয়ে দুঃখে তার কাপড় ছিঁড়ে ভাইদের কাছে গিয়ে বলল, “যোষেফ তো ওখানে নেই। আমি এখন কি করি?”
31 তারা তখন একটা ছাগল কেটে তার রক্তে যোষেফের সেই জামাটা ডুবাল।
32 পরে তারা সেটা তাদের বাবার কাছে নিয়ে গিয়ে বলল, “আমরা এটা কুড়িয়ে পেয়েছি। তুমি ভাল করে দেখ, জামাটা তোমার ছেলের কি না।”
33 যাকোব জামাটা চিনতে পেরে বললেন, “এই জামাটা আমার ছেলেরই। তাকে কোন বুনো জানোয়ারে খেয়ে ফেলেছে। জানোয়ারটা যে তাকে টুকরা টুকরা করে ছিঁড়ে ফেলেছে তাতে কোন সন্দেহ নেই।”
34 যাকোব তাঁর কাপড় ছিঁড়ে কোমরে ছালার চট জড়িয়ে তাঁর ছেলের জন্য অনেক দিন পর্যন্ত শোক করলেন।
35 তাঁর অন্য সব ছেলেমেয়েরা তাঁকে সান্ত্বনা দেবার চেষ্টা করল, কিন্তু কোন সান্ত্বনার কথাই তিনি শুনলেন না। তিনি বললেন, “শোক করতে করতেই আমি মৃতস্থানে আমার ছেলের কাছে যাব।” এইভাবে যাকোব যোষেফের জন্য কাঁদতে লাগলেন।
36 এদিকে মিদিয়নীয়েরা যোষেফকে মিসরে নিয়ে গিয়ে পোটীফরের কাছে বিক্রি করে দিল। পোটীফর ছিলেন ফরৌণের একজন কর্মচারী, তাঁর রক্ষীদলের প্রধান।