1 তখন যোষেফ তাঁর বাবার মুখের উপর পড়ে কাঁদতে লাগলেন এবং তাঁকে চুম্বন করলেন।
2 পরে তিনি তাঁর অধীন ডাক্তারদের আদেশ দিলেন যেন তাঁরা তাঁর বাবার দেহটা সুগন্ধি মসলা দিয়ে রক্ষা করবার ব্যবস্থা করেন। তাঁরা তা-ই করলেন।
3 এতে তাঁদের চল্লিশ দিন কেটে গেল। এই কাজে চল্লিশ দিনই লাগত। মিসরীয়েরা ইস্রায়েলের জন্য সত্তর দিন ধরে শোক-প্রকাশের অনুষ্ঠান করল।
4 এই শোক-প্রকাশের সময় পার হয়ে গেলে পর যোষেফ ফরৌণের বাড়ীর কর্মচারীদের বললেন, “যদি তোমরা আমার উপর সন্তুষ্ট থাক তবে ফরৌণকে গিয়ে আমার এই কথাটা জানাও যে,
5 বাবা মারা যাবার সময় আমাকে এই বলে শপথ করিয়ে নিয়েছেন, আমি যেন কনান দেশে তাঁর ঠিক করে রাখা কবরটিতে তাঁর কবর দিই। তাঁকে এই অনুরোধ কর যেন তিনি সেই কাজের জন্য আমাকে যেতে দেন। তাঁকে বল কাজ শেষ করেই আমি আবার ফিরে আসব।”
6 এর উত্তরে ফরৌণ বলে পাঠালেন, “তিনি তোমাকে যে শপথ করিয়েছেন সেইমতই তুমি গিয়ে তাঁকে কবর দাও।”
7 তখন যোষেফ তাঁর বাবাকে কবর দেবার জন্য গেলেন। ফরৌণের সব কর্মচারীরা, অর্থাৎ তাঁর দরবারের এবং মিসরের সমস্ত সম্মানিত লোকেরা যোষেফের সংগে গেলেন।
8 এছাড়া যোষেফের নিজের এবং তাঁর বাবার পরিবারের সকলে ও তাঁর ভাইয়েরাও তাঁর সংগে গেল। গোশনে তারা কেবল রেখে গেল তাদের ছোট ছেলেমেয়েদের ও তাদের গরু-ভেড়ার পাল।
9 অনেক রথ ও ঘোড়সওয়ার নিয়ে তারা একটা বিরাট দল হয়ে যোষেফের সংগে চলল।
10 যর্দন নদীর অন্য পারে আটদের খামার বাড়ী পর্যন্ত গিয়ে যোষেফ সাত দিন ধরে তাঁর বাবার উদ্দেশে শোক-প্রকাশের অনুষ্ঠান করলেন। লোকেরাও খুব জোরে জোরে কান্নাকাটি করল।
11 আটদের খামারে তাদের এইভাবে শোক প্রকাশ করতে দেখে সেই দেশের বাসিন্দারা, অর্থাৎ কনানীয়েরা বলল, “মিসরীয়দের এটা একটা গভীর শোক-প্রকাশ।” সেইজন্য যর্দন নদীর অন্য পারের এই জায়গাটার নাম দেওয়া হয়েছিল আবেল্-মিস্রয়ীম (যার মানে “মিসরীয়দের শোক-প্রকাশ”)।
12 ইস্রায়েল তাঁর ছেলেদের যা করতে বলেছিলেন তা তারা করল।
13 তারা তাঁর দেহ কনান দেশে নিয়ে গেল এবং মম্রির কাছে মক্পেলার জমির গুহাতে তাঁকে কবর দিল। কবরস্থান করবার জন্য জমি সুদ্ধ এই গুহাটাই অব্রাহাম হিত্তীয় ইফ্রোণের কাছ থেকে কিনে নিয়েছিলেন।
14 বাবাকে কবর দেবার পর যোষেফ, তাঁর ভাইয়েরা এবং যত লোক তাঁর বাবাকে কবর দিতে গিয়েছিল তারা সবাই মিসরে ফিরে গেল।
15 বাবা মারা গেছেন দেখে যোষেফের ভাইয়েরা নিজেদের মধ্যে বলাবলি করতে লাগল, “যোষেফের মনে যদি আমাদের উপর প্রতিশোধ নেবার ভাব থাকে, আর আমরা তার প্রতি যে অন্যায় করেছি যদি সে তার শোধ নেয়, তখন আমরা কি করব?”
16-17 এই ভেবে তারা যোষেফকে বলে পাঠাল, “বাবা মারা যাওয়ার আগে তিনি আমাদের এই কথা তোমাকে বলতে বলে গেছেন যে, আমরা তোমার প্রতি যে অন্যায় ব্যবহার করেছি তুমি যেন সেই অন্যায় ব্যবহার ও পাপ ক্ষমা করে দাও। তাই আমাদের অনুরোধ তুমি তোমার বাবার ঈশ্বরের দাসদের অন্যায় ব্যবহার ক্ষমা কর।” তাদের কথা শুনে যোষেফ কাঁদলেন।
18 এর পর তাঁর ভাইয়েরা তাঁর সামনে এসে মাটিতে উবুড় হয়ে পড়ে বলল, “আমরা তোমার দাস।”
19 কিন্তু যোষেফ তাদের বললেন, “তোমরা ভয় কোরো না। ঈশ্বরের জায়গায় দাঁড়াবার আমি কে?
20 তোমরা আমার অমংগল করতে চেয়েছিলে, কিন্তু ঈশ্বর তার ভিতর দিয়ে মংগলের পরিকল্পনা করেছিলেন যাতে অনেক লোকের প্রাণ রক্ষা পায়; আর আজ তা-ই হচ্ছে।
21 কাজেই তোমরা ভয় কোরো না। আমি তোমাদের ও তোমাদের ছেলেমেয়েদের খাবারের যোগান দেব।” এই সব আশার কথা বলে তিনি তাদের সান্ত্বনা দিলেন।
22 যোষেফ ও তাঁর বাবার পরিবারের লোকেরা মিসরেই বাস করতে লাগলেন। যোষেফ একশো দশ বছর বেঁচে ছিলেন।
23 তিনি ইফ্রয়িমের তিন পুরুষ পর্যন্ত দেখে গিয়েছিলেন। এছাড়া মাখীরের ছেলেমেয়েদেরও জন্মের পর যোষেফের কোলেই রাখা হয়েছিল। মাখীর ছিল মনঃশির ছেলে।
24 পরে এক সময় যোষেফ তাঁর ভাইদের বললেন, “আমার মরবার সময় হয়ে এসেছে, তবে এটা নিশ্চয় যে, ঈশ্বর তোমাদের দেখাশোনা করবেন। তিনি অব্রাহাম, ইস্হাক ও যাকোবকে যে দেশ দেবেন বলে শপথ করে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন সেই দেশেই তিনি তোমাদের এখান থেকে নিয়ে যাবেন।”
25 তারপর যোষেফ ইস্রায়েলীয়দের শপথ করিয়ে বললেন, “ঈশ্বর নিশ্চয়ই তোমাদের দেখাশোনা করবেন। এখান থেকে যাবার সময় তোমরা আমার হাড়গুলো তুলে নিয়ে যেয়ো।”
26 একশো দশ বছর বয়সে যোষেফ মারা গেলেন। তখন তাঁর দেহটা সুগন্ধি মসলা দিয়ে মৃতদেহ রাখবার একটা বাক্সে করে মিসরেই রাখা হল।