1 তারপর যোষেফ তাঁর বাড়ীর তদারককারীকে এই বলে আদেশ দিলেন, “শস্য এরা যা নিয়ে যেতে পারে তা-ই তাদের বস্তায় ভরে দিয়ো, আর প্রত্যেকের টাকা তার বস্তার মুখে দিয়ে দিয়ো।
2 যে সবচেয়ে ছোট তার বস্তার মুখে আমার রূপার বাটিটা আর শস্যের জন্য তার দেওয়া টাকাও দিয়ে দিয়ো।” যোষেফ তাকে যা করতে বললেন সে তা-ই করল।
3 পর দিন ভোর হতেই গাধায় করে তাদের পাঠিয়ে দেওয়া হল।
4 তারা সবেমাত্র শহর থেকে বের হয়েছে কিন্তু বেশী দূরে যায় নি, এমন সময় যোষেফ তাঁর বাড়ীর তদারককারীকে বললেন, “তাড়াতাড়ি করে ঐ লোকদের পিছনে যাও। ওদের নাগাল পেলে পর বলবে, ‘তোমরা উপকারের বদলে অপকার করে আসলে কেন?
5 ঐ বাটিতে করেই তো আমার মনিব পান করেন এবং ওটা দিয়েই গোণাপড়ার কাজ করেন। তোমরা এই কাজ করে খুব অন্যায় করেছ।’ ”
6 পথে সেই তদারককারী তাদের নাগাল পেয়ে সেই কথা বলল।
7 কিন্তু তারা তাকে বলল, “হুজুর, আপনি এই সব কথা কেন বলছেন? আপনার দাসেরা এই রকম কাজ কখনও করবে না।
8 দেখুন, গতবারে আমাদের বস্তার মুখে যে টাকা পেয়েছিলাম তা আমরা কনান দেশ থেকে আবার ফিরিয়ে এনেছিলাম। এর পর আপনার মনিবের বাড়ী থেকে আমরা রূপা বা সোনা চুরি করে আনব কেন?
9 যদি সেই বাটি আপনার এই দাসদের কারও কাছে পাওয়া যায় তবে তাকে যেন মেরে ফেলা হয়, আর তখন আমরাও আমাদের মনিবের দাস হয়ে থাকব।”
10 সেই তদারককারী বলল, “বেশ, তোমরা যা বললে তা-ই হোক। কিন্তু যার কাছে সেই বাটি পাওয়া যাবে কেবল সে-ই আমার দাস হয়ে থাকবে। অন্য কারও কোন দোষ থাকবে না।”
11 তখন প্রত্যেকে তাড়াতাড়ি করে তার বস্তা মাটিতে নামিয়ে খুলল।
12 সেই তদারককারী তখন বড় ভাইয়ের বস্তা থেকে আরম্ভ করে ছোট ভাইয়ের বস্তা পর্যন্ত খুঁজে দেখল, আর বিন্যামীনের বস্তায় সেই বাটি পাওয়া গেল।
13 এই ব্যাপার দেখে তারা তাদের কাপড় ছিঁড়ল। তারপর তারা তাদের গাধার পিঠে প্রত্যেকের বস্তা চাপিয়ে আবার শহরে ফিরে গেল।
14 যিহূদা ও তার ভাইয়েরা যে সময় যোষেফের বাড়ীতে গেল যোষেফ তখনও সেখানে ছিলেন। তারা তাঁর সামনে গিয়ে মাটিতে উবুড় হয়ে পড়ল।
15 তখন যোষেফ তাদের বললেন, “তোমরা এ কি করেছ? আমার মত লোক যে সত্যিই সব কিছু গুণে বের করতে পারে তা কি তোমরা জানতে না?”
16 যিহূদা বলল, “হুজুরকে আমরা আর কি বলব? কি উত্তরই বা দেব? আর কেমন করেই বা নিজেদের নির্দোষ বলে প্রমাণ করব? আপনার দাসদের দোষ তো ঈশ্বরই দেখিয়ে দিয়েছেন। যার কাছে সেই বাটিটা পাওয়া গেছে সে আর আমরা সবাই হুজুরের দাস হলাম।”
17 কিন্তু যোষেফ বললেন, “এই কাজ আমি কখনও করতে পারি না। যার কাছে সেই বাটি পাওয়া গেছে কেবল সে-ই আমার দাস হবে। কিন্তু তোমরা নিশ্চিন্তে তোমাদের বাবার কাছে ফিরে যাও।”
18 তখন যিহূদা যোষেফের কাছে এগিয়ে গিয়ে বলল, “হুজুর, আপনি ফরৌণের জায়গায় আছেন, সেইজন্য আপনার দাসকে আপনার কাছে দু’টি কথা বলবার অনুমতি দিন। আপনার দাসের উপর আপনি রাগ করবেন না।
19 হুজুর, আপনার দাসদের আপনি জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘তোমাদের বাবা কি বেঁচে আছেন এবং তোমাদের আর কোন ভাই আছে কি? ’
20 তাতে আমরা হুজুরকে বলেছিলাম, ‘আমাদের বুড়ো বাবা বেঁচে আছেন এবং তাঁর বুড়ো বয়সের একটি ছেলে আছে। তার ভাই মারা গেছে, আর একই মায়ের সন্তান হিসাবে এখন সে একাই কেবল পড়ে আছে। তাই তার বাবা তাকে খুব ভালবাসেন।’
21 “তারপর আপনি আপনার দাসদের বলেছিলেন, ‘তাকে আমার কাছে নিয়ে এস; আমি তাকে দেখতে চাই।’
22 কিন্তু আমরা হুজুরকে বলেছিলাম, ‘ছেলেটি তার বাবাকে ছেড়ে আসতে পারবে না। যদি আসে তবে তার বাবা মারা যাবেন।’
23 কিন্তু আপনি আপনার দাসদের বলেছিলেন, ‘তোমাদের ছোট ভাইকে সংগে করে না আনলে তোমরা আর আমার সামনে আসবে না।’
24 সেইজন্য আমরা ফিরে গিয়ে আপনার দাসকে, অর্থাৎ আমার বাবাকে হুজুরের সব কথাই জানিয়েছিলাম।
25 “পরে আমাদের বাবা বললেন, ‘তোমরা ফিরে গিয়ে আমাদের জন্য আরও কিছু শস্য কিনে নিয়ে এস।’
26 তখন আমরা বললাম, ‘আমাদের ছোট ভাই যদি আমাদের সংগে যায় তবেই আমরা যাব। তা না হলে আমরা সেখানে যেতে পারব না। আমাদের ছোট ভাই যদি আমাদের সংগে না থাকে তবে আমরা সেই লোকটির সামনেই যেতে পারব না।’
27 “তখন আপনার দাস, অর্থাৎ আমার বাবা আমাদের বললেন, ‘তোমরা তো জান আমার ঐ স্ত্রীর দু’টি ছেলে হয়েছিল।
28 একবার তাদের একজন আমার সামনে থেকে বেরিয়ে গেল, আর শেষে আমি বুঝতে পারলাম যে, নিশ্চয়ই কোন জানোয়ার তাকে টুকরা টুকরা করে ছিঁড়ে ফেলেছে। তারপর থেকে তাকে আমি আর দেখতে পাই নি।
29 এখন যদি তোমরা একেও আমার কাছ থেকে নিয়ে যাও আর তার কোন ক্ষতি হয়, তবে এই বুড়ো বয়সে অনেক দুঃখ-বেদনার মধ্য দিয়ে তোমরা আমাকে মৃতস্থানে পাঠাবে।’
30-31 “সেইজন্য এখন যদি আপনার দাসের কাছে, অর্থাৎ আমার বাবার কাছে আমি ফিরে যাই আর ছেলেটিকে তিনি আমাদের সংগে না দেখেন তবে নিশ্চয়ই তিনি মারা যাবেন, কারণ ছেলেটির সংগে তাঁর প্রাণ যেন একসংগে বাঁধা আছে। এইভাবে আপনার দাসেরা তাদের বুড়ো বাবাকে, অর্থাৎ আপনার দাসকে অনেক দুঃখের মধ্য দিয়ে মৃতস্থানে পাঠাবে।
32 আপনার দাস আমি আমার বাবার কাছে ছেলেটির জন্য এই বলে জামিন রয়েছি, ‘যদি আমি তাকে তোমার কাছে ফিরিয়ে না আনি তবে বাবা, চিরকালের জন্য আমি তোমার কাছে দোষী হয়ে থাকব।’
33 কাজেই হুজুর, দয়া করে ছেলেটির বদলে আমাকে আপনার দাসের মত করে রাখুন, আর ছেলেটিকে তার ভাইদের সংগে ফিরে যেতে দিন।
34 এই ছেলেটিকে না নিয়ে আমি কি করে আমার বাবার কাছে ফিরে যাব? তা করলে তাঁর দুঃখ-বেদনা আমাকে নিজের চোখে দেখতে হবে।”