দ্বিতীয় বিবরণ 31 MBCL

হযরত মূসা (আঃ)-এর দায়িত্ব হস্তান্তর

1 পরে মূসা সমস্ত বনি-ইসরাইলদের বললেন,

2 “আমার বয়স একশো বিশ বছর হয়ে গেছে। আমার কাজ আর আমি করতে পারছি না। মাবুদও আমাকে বলেছেন যে, জর্ডান নদী পার হয়ে যাওয়া আমার হবে না।

3 তোমাদের মাবুদ আল্লাহ্‌ নিজেই নদী পার হয়ে তোমাদের আগে আগে যাবেন। তোমাদের সামনে থেকে ঐ সব জাতিদের তিনিই ধ্বংস করে দেবেন আর তোমরা তাদের দেশ দখল করে নেবে। মাবুদের কথা অনুসারে ইউসাই নদী পার হয়ে তোমাদের আগে আগে যাবে।

4 আমোরীয়দের বাদশাহ্‌ সীহোন এবং উজ আর তাঁদের দেশ যেমন মাবুদ ধ্বংস করে দিয়েছিলেন তেমনি করে তিনি সেই সব জাতিও ধ্বংস করে ফেলবেন।

5 তাদের তিনি তোমাদের হাতে তুলে দেবেন আর আমি তাদের প্রতি যা করবার হুকুম দিয়েছি তোমরা তাদের প্রতি তা-ই করবে।

6 তোমরা শক্ত হও ও মনে সাহস আন। তাদের দেখে তোমরা ভয় পেয়ো না কিংবা কেঁপে উঠো না, কারণ তোমাদের মাবুদ আল্লাহ্‌ই তোমাদের সংগে যাবেন। তিনি কখনও তোমাদের ছেড়ে যাবেন না বা ত্যাগ করবেন না।”

7 এর পর মূসা ইউসাকে ডাকলেন এবং সমস্ত বনি-ইসরাইলদের সামনে তাঁকে বললেন, “তুমি শক্তিশালী হও ও মনে সাহস আন, কারণ তোমাকেই এই লোকদের সংগে সেই দেশে যেতে হবে যে দেশটা এদের দেবার কসম মাবুদ এদের পূর্বপুরুষদের কাছে খেয়েছিলেন। তোমাকেই সেই দেশটা সম্পত্তি হিসাবে এদের মধ্যে ভাগ করে দিতে হবে।

8 মাবুদ নিজেই তোমার আগে আগে যাবেন এবং তোমার সংগে থাকবেন। তিনি কখনও তোমাকে ছেড়ে যাবেন না বা ত্যাগ করবেন না। তুমি ভয় কোরো না, উৎসাহ হারায়ো না।”

তৌরাত শরীফ তেলাওয়াতের বিশেষ নিয়ম

9 লেবি-গোষ্ঠীর ইমামেরা, যাঁরা মাবুদের সাক্ষ্য-সিন্দুকটি বয়ে নিয়ে যেতেন, মূসা সমস্ত শরীয়ত লিখে তাঁদের হাতে ও বনি-ইসরাইলদের বৃদ্ধ নেতাদের হাতে দিলেন।

10-11 তিনি তাঁদের হুকুম দিলেন, “প্রত্যেক সপ্তম বছরে, অর্থাৎ ঋণ মাফের বছরে যখন কুঁড়ে-ঘরের ঈদের সময় আসবে এবং সমস্ত বনি-ইসরাইল তোমাদের মাবুদ আল্লাহ্‌র সামনে উপস্থিত হবার জন্য তাঁর বেছে নেওয়া জায়গায় যাবে তখন তোমরা এই শরীয়ত তাদের তেলাওয়াত করে শোনাবে।

12 পুরুষ, স্ত্রীলোক, ছেলেমেয়ে এবং তোমাদের বিভিন্ন গ্রাম ও শহরের ভিন্ন জাতির লোকদের ডেকে তোমরা একসংগে জমায়েত করবে, যাতে তারা তা শুনতে পারে এবং তোমাদের মাবুদ আল্লাহ্‌কে ভয় করতে শেখে আর এই শরীয়তের সমস্ত কথা যত্নের সংগে পালন করে।

13 এইভাবে তাদের ছেলেমেয়েরা, যাদের এই শরীয়তের কথা জানা থাকবে না, তারাও তা শুনতে পাবে এবং এই শিক্ষা পাবে যে, জর্ডান পার হয়ে যে দেশটা তোমরা দখল করতে যাচ্ছ সেখানে সারা জীবন তোমাদের মাবুদ আল্লাহ্‌কে তাদের ভয় করতে হবে।”

বিদ্রোহের ভবিষ্যদ্বাণী

14 এর পর মাবুদ মূসাকে বললেন, “তোমার মৃত্যুর দিন কাছে এসে গেছে। ইউসাকে ডেকে নিয়ে তুমি মিলন-তাম্বুতে যাও। সেখানে আমি তাকে তার কাজের ভার দেব।” কাজেই মূসা ও ইউসা মিলন-তাম্বুতে মাবুদের সামনে উপস্থিত হলেন।

15 তখন মাবুদ মেঘের থামের মধ্যে সেই তাম্বুতে উপস্থিত হলেন এবং সেই থামটি তাম্বুর দরজার কাছে গিয়ে দাঁড়াল।

16 মাবুদ মূসাকে বললেন, “তুমি তোমার পূর্বপুরুষদের কাছে বিশ্রাম করতে যাচ্ছ, কিন্তু এই লোকেরা যে দেশে ঢুকতে যাচ্ছে সেখানে খুব শীঘ্রই তারা আমার প্রতি বেঈমানী করে সেখানকার দেবপূজায় নিজেদের বিকিয়ে দেবে। তারা আমাকে ত্যাগ করবে এবং আমি তাদের জন্য যে ব্যবস্থা স্থাপন করেছি তারা তার অগ্রাহ্য করবে।

17 যেদিন তারা তা করবে সেই দিন রাগে আমি তাদের ত্যাগ করব। আমি তাদের কাছ থেকে আমার মুখ ফিরিয়ে নেব আর তারা ধ্বংস হয়ে যাবে। তখন তাদের উপর অনেক বিপদ ও দুঃখ-কষ্ট নেমে আসবে। সেই দিন তারা বলবে, ‘আমাদের আল্লাহ্‌ আমাদের সংগে নেই বলেই আমাদের উপর এই সব বিপদ এসেছে।’

18 তারা দেব-দেবীদের দিকে ফিরে যে সব খারাপ কাজ করবে সেইজন্য আমি নিশ্চয়ই সেই দিন আমার মুখ ফিরিয়ে নেব।

19 “তোমরা এখন এই গজলটি লিখে নাও। এটা বনি-ইসরাইলদের শিখাবে এবং তাদের দিয়ে গাওয়াবে, যাতে তাদের বিরুদ্ধে এটা আমার পক্ষে একটা সাক্ষী হয়ে থাকে।

20 তাদের পূর্বপুরুষদের কাছে আমার কসম খাওয়া সেই দুধ আর মধুতে ভরা দেশে যখন আমি তাদের নিয়ে যাব আর যখন তারা পেট ভরে খেয়ে সুখে থাকবে তখন তারা আমাকে তুচ্ছ করে আমার ব্যবস্থার অগ্রাহ্য করে দেব-দেবীর পিছনে গিয়ে তাদের পূজা করবে।

21 ফলে তাদের উপর যখন অনেক বিপদ ও দুঃখ-কষ্ট নেমে আসবে তখন এই গজলটাই তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষী হয়ে দাঁড়াবে, কারণ তাদের বংশধরেরা গজলটি ভুলে যাবে না। আমার কসম খেয়ে ওয়াদা করা দেশে তাদের নিয়ে যাওয়ার আগেই আমি জানি যে, তাদের অন্তরে এখন কি রয়েছে।”

22 মূসা ঐ দিন গজলটি লিখে বনি-ইসরাইলদের শিখিয়েছিলেন।

23 নূনের ছেলে ইউসাকে মাবুদ এই হুকুম দিলেন, “তুমি শক্তিশালী হও ও মনে সাহস আন। যে দেশ দেবার ওয়াদা আমি কসম খেয়ে বনি-ইসরাইলদের কাছে করেছিলাম সেখানে তুমিই তাদের নিয়ে যাবে। আমি নিজেই তোমার সংগে থাকব।”

24 মূসা এই শরীয়ত আগাগোড়া একটি কিতাবে লিখে নিলেন।

25 তারপর মাবুদের সাক্ষ্য-সিন্দুক বহনকারী লেবীয়দের তিনি বললেন,

26 “এই তৌরাত কিতাব নিয়ে তোমরা তোমাদের মাবুদ আল্লাহ্‌র সাক্ষ্য-সিন্দুকের পাশে রাখ। এটা বনি-ইসরাইলদের বিরুদ্ধে সাক্ষী হয়ে সেখানে থাকবে।

27 তোমরা যে কেমন একগুঁয়ে ও বিদ্রোহী তা আমার জানা আছে। আমি তোমাদের মধ্যে বেঁচে থাকতেই যখন তোমরা মাবুদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছ তখন আমি মারা যাওয়ার পরে আরও কত বেশী করেই না তা করবে।

28 তোমরা তোমাদের গোষ্ঠীর বৃদ্ধ নেতাদের ও কর্মচারীদের সবাইকে আমার সামনে জমায়েত কর। আমি তাদের এই সব কথা বলতে চাই আর আসমান ও জমীনকে তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষী রেখে যেতে চাই।

29 আমি জানি যে, আমার মৃত্যুর পরে তোমরা একেবারেই খারাপ হয়ে যাবে এবং যে পথে আমি তোমাদের চলবার নির্দেশ দিয়েছি তোমরা তা থেকে সরে যাবে। ভবিষ্যতে তোমাদের উপর বিপদ নেমে আসবে, কারণ মাবুদের চোখে যা খারাপ তোমরা তা করবে এবং তোমাদের নিজের হাতে গড়া মূর্তি দিয়ে তোমরা তাঁকে রাগিয়ে তুলবে।”

হযরত মূসা (আঃ)-এর গজল

30 তারপর মূসা এই গজলের কথাগুলো প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সমস্ত বনি-ইসরাইলদের শোনালেন:

অধ্যায়

1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34